<article> <p style="text-align: justify;">দেশে গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন ফুলের মধু উৎপাদন ও সংগ্রহ বেড়েছে প্রায় চার গুণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মধু উৎপাদন ছিল এক হাজার ৮০৫ মেট্রিক টন, যা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৩২৮ মেট্রিক টন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই পরিমাণ মধু উৎপাদনের পরও চলতি বছরে এরই মধ্যে বাজারে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অন্যান্য বছর মধু কম উৎপাদিত হওয়ার পরও বাজারে আগের মৌসুমের মধু থেকে যেত। কিন্তু এবার নতুন মৌসুম শুরু হওয়ার পর আগের মধু নেই।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">মধুর উৎপাদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাজারে কী পরিমাণ মধুর চাহিদা রয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে এখন যা উৎপাদন হচ্ছে তার দ্বিগুণ উৎপাদন হলেও বিক্রি হয়ে যাবে। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে মধু গ্রহণ।</p> </article> <p style="text-align: justify;">সরকারিভাবে মধু চাষ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। এই প্রতিষ্ঠানটির সারা দেশে ছয়টি মধু সংগ্রহ কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে প্রশিক্ষিত কর্মীরা সারা বছর মাঠ থেকে নানান ফুলের মধু সংগ্রহ করেন। বিসিকের ছয়টি কেন্দ্র হলো গাজীপুর, দিনাজপুর, বাগেরহাট, বরিশাল, সিলেট ও কুমিল্লা। দেশে সরকারিভাবে একমাত্র এই প্রতিষ্ঠানটিই মধু সংগ্রহ করে। একই সঙ্গে তারা চাষিদের সঠিকভাবে মধু আহরণে প্রশিক্ষণও দেয়।</p> <article> <p style="text-align: justify;">বিসিক থেকে জানা গেছে, প্রতিবছর মধু উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তার চেয়ে বেশি সংগ্রহ হচ্ছে। যা সম্ভব হয়েছে মধু সংগ্রহকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ১০০ মেট্রিক টন, কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে এক হাজার ৮০৩ মেট্রিক টন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">একইভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছে দুই হাজার ৭৬৭ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৩০০ মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছে চার হাজার ৬২২ মেট্রিক টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাত হাজার ৫০৪ মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছে ১০ হাজার ৬৫৫ মেট্রিক টন। আর সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাত হাজার মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছে সাত হাজার ৩২৮ মেট্রিক টন।</p> <p style="text-align: justify;">অন্যদিকে বিসিকের পক্ষ থেকে মধু আহরণ ও উৎপাদনের ওপর প্রতিবছর পাঁচ দিনের একটি মৌচাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গত পাঁচ বছরে সারা দেশে এক হাজার ৬৯৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশিক্ষণ নেওয়া এসব লোকজনই বাণিজ্যিকভাবে মাচা বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন।</p> <p style="text-align: justify;">রাজধানীর খুচরা দোকান ও সুপার শপগুলোতে দেখা গেছে, সরিষা, লিচু, বড়ই, ধনিয়া, শজনে ও বিভিন্ন ফুলের মধু রয়েছে। যেগুলো প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। অন্যদিকে ভারত, দুবাই, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা মধুও বাজারে রয়েছে। তবে আমদানি করা এসব মধুর দাম দেশীয় মধুর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।</p> <p style="text-align: justify;">রাজধানীর কারওয়ান বাজারে খুচরা ও পাইকারি দামে পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি মধু। কিচেন মার্কেটের নিচতলায় অবস্থিত বিক্রমপুর ফল বিতান। এই দোকানের মালিক মো. হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দোকানে দেশি মধুর পাশাপাশি বিদেশি মধুও রাখি। এখন সরিষা ফুলের নতুন মধু আসা শুরু হয়েছে, দাম প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। লিচু ফুলের মধু ৮৫০ টাকা। আর বিদেশ থেকে আনা মধু এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা কেজি।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন আমার দোকান থেকে দুাই-চার কেজি মধু বিক্রি হয়। তবে দেশি মধুই বেশি বিক্রি হচ্ছে। উচ্চবিত্ত লোকজন বিদেশি মধু বেশি নেন।’</p> <p style="text-align: justify;">ম্যাগ মধুর পরিচালক গাজী সাকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার আগের বছরের কোনো মধু বাজারে নেই। এতে খাঁটি মধুর প্রচণ্ড সংকট চলছে। অন্যান্যবার অনেক বেশি মধু উৎপাদন হওয়াটা আমাদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে থাকত, বিক্রি হতো না। কিন্তু এই বছর প্রথম মানুষ মধু খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। এর বড় কারণ হতে পারে অনলাইনে মধু বিক্রি। আর করোনা-পরবর্তী মধু খাওয়ার যে চাহিদা মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে, সেটাও কারণ হতে পারে। গত বছর উৎপাদিত মধু পুরোটাই দেশের মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে এবং মানুষের চাহিদা আরো বেশি আছে, অর্থাৎ যা উৎপাদন হয়েছিল, সব বিক্রি হয়ে গেছে।’</p> <p style="text-align: justify;">অ উৎপাদন ও বিক্রি করে বিসিকের উন্নয়ন বিভাগ। এই বিভাগের উপব্যবস্থাপক জেসমিন নাহার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারিভাবে আমরা এখন প্রতিবছর সাত হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি উৎপাদন হয়। আমরা মাচা বসিয়ে আমাদের নিজস্ব লোকের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করি, যা বোতলজাত করে বিক্রি করা হয়। আমাদের প্রতিটি কেন্দ্রে সাতজনের একটি সেটআপ আছে। উনারা মাঠে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে। এখন যেমন দিনাজপুর, গাজীপুরের টিম গেছে মানিকগঞ্জে। ওখানে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করছে। আবার লিচুর সময় দিনাজপুরে, আবার ফরিদপুরে কালোজিরা বা বিভিন্ন মসলার ফুলের মধু সংগ্রহ করে।’</p> <p style="text-align: justify;">তিনি বলেন, ‘আমরা মধু সংগ্রহকারীদের প্রশিক্ষণ দিই। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের ফ্রি ১০টি বক্স দিয়ে দিই, যাতে তাঁরা মধু সংগ্রহ করতে পারেন। দেশের যাঁরা মধু চাষ করেন, তাঁরা সবাই আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উদ্যোক্তা। সাভারের ধামরাইয়ে আমাদের একটি মধু প্রসেসিং কেন্দ্রও রয়েছে।’</p> <p style="text-align: justify;">মৌমাছি নিয়ে কাজ করা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ সাখাওয়াৎ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার সরিষা চাষ হয়েছে প্রায় ১২ লাখ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সারা দেশের প্রায় এক হাজার ৫০০ জন চাষি ৬০ হাজার চাক বসিয়েছেন। গত বছর আট বা ৯ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। কিন্তু জমি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাক্স বাড়েনি।</p> </article>