<p style="text-align:justify">ঈমান, ইখলাসসহ কোরআন-হাদিস অনুযায়ী করলে মুমিনের প্রতিটি কাজই ইবাদতে পরিণত হয়। সে হিসেবে রাস্তায় চলাচলের সময়কেও মুমিন ইবাদতে পরিণত করতে পারে। যেমন রাস্তার নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এ প্রসঙ্গে নবীজি (সা.) বলেন, ‘ঈমানের ৭০টিরও বেশি শাখা আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান শাখা হলো এ কথার স্বীকৃতি দেওয়া যে আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আর সবচেয়ে নিচের শাখাটি হলো রাস্তায় কোনো কষ্টদায়ক বস্তু থাকলে তা সরিয়ে দেওয়া। আর লজ্জাও ঈমানের একটি শাখা।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৫০০৫)</p> <p style="text-align:justify">ইসলামের দৃষ্টিতে সড়কের আইন মেনে চলে নিজেকে সড়কের দুর্ভোগ সৃষ্টির কারণ না বানানো, কেউ বিপদে পড়লে তার বিপদে এগিয়ে আসা, মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করা এবং সড়কে কোনো কষ্টদায়ক বস্তু থাকলে তা সরানোর ব্যবস্থা করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।</p> <p style="text-align:justify">ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আদম সন্তানের দেহে ৩৬০টি সংযোগ অস্থি বা গ্রন্থি আছে। প্রতিদিন সেগুলোর প্রতিটির জন্য একটি সদকা ধার্য আছে। প্রতিটি উত্তম কথা একটি সদকা। কোনো ব্যক্তির তার ভাইকে সাহায্য করাও একটি সদকা। কেউ কাউকে পানি পান করালে তাও একটি সদকা এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোও একটি সদকা।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৪২৩)</p> <p style="text-align:justify">সড়ক থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণ এতটাই ফজিলতের যে এর প্রতিদানে মহান আল্লাহ এক ব্যক্তিকে জান্নাত উপহার দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখে বলে, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই মুসলিমদের চলাচলের রাস্তা থেকে এটা অপসারণ করব, যাতে তাদের কোনো কষ্ট না দেয়। ফলে তাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করানো হয়। (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬৪)</p> <p style="text-align:justify">সুবহানাল্লাহ! এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় জনগণের কল্যাণে কাজ করা মহান আল্লাহর কাছে কতটা প্রিয়।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া কোনো পথচারী পথ হারিয়ে ফেললে তাকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়াও অত্যন্ত সওয়াবের। এটিও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে করণীয় বিষয়গুলোর একটি। ইসলাম এ বিষয়টিকে এতটাই গুরুত্ব দেয় যে এর বিনিময়ে গোলাম আজাদ করার সমপরিমাণ সওয়াবের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বারাআ ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি একবার দোহন করা দুধ দান করে অথবা টাকা-পয়সা ধার দেয় অথবা পথ হারিয়ে যাওয়া লোককে সঠিক পথের সন্ধান দেয়, তার জন্য রয়েছে একটি গোলাম মুক্ত করে দেওয়ার সমপরিমাণ সওয়াব। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৭)</p> <p style="text-align:justify">নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে আরেকটি করণীয় হলো মানুষের বিপদে এগিয়ে আসা, কেউ দুর্ঘটনার শিকার হলে কিংবা ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়লে বা অন্য যেকোনো ধরনের বিপদে পড়লে সাধ্যমতো তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসা। কারণ একজন মুসলমান তার অপর মুসলমান ভাইকে কখনো বিপদে ফেলে রেখে যেতে পারে না।</p> <p style="text-align:justify">আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা পরস্পর হিংসা কোরো না, পরস্পর ধোঁকাবাজি কোরো না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ কোরো না, একে অপরের ক্ষতি করার উদ্দেশে অগোচরে শত্রুতা কোরো না এবং একে অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকো। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করবে না, তাকে অপদস্ত করবে না এবং হেয়প্রতিপন্ন করবে না। তাকওয়া এখানে, এ কথা বলে রাসুল (সা.) তিনবার তাঁর বক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে সে তার ভাইকে হেয় জ্ঞান করে। কোনো মুসলিমের ওপর প্রত্যেক মুসলিমের জান-মাল ও ইজ্জত-আবরু হারাম। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৩৫)</p> <p style="text-align:justify">মহান আল্লাহ সবাইকে ইসলামের নির্দেশনাগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা দান করুন।</p>