<p>ঈমান ও সৎকর্ম ইসলামী জীবনবোধের অন্যতম শর্ত। অনাচার-অশান্তি, অপরের কষ্টের কারণ হওয়া ইসলামের শিক্ষা নয়। কথায় হোক, বিকট ও বিরক্তিকর শব্দের মাধ্যমে হোক—কারো শান্তি ও ইবাদতে একাগ্রতা নষ্ট করা অন্যায় ও অমানবিক। একাগ্রতা ও আত্মপরিতৃপ্তি ছাড়া ইবাদত মূল্যহীন।ইবাদতে সর্বাত্মক নিবেদনের চেতনা শিক্ষায় মহান আল্লাহর নির্দেশ—‘তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২০৮)</p> <p>শব্দদূষণ বা অন্য কোনো উপায়ে মানুষকে কষ্ট দেওয়া ইসলাম অনুমোদিত নয়। শব্দের তীব্রতার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মানুষকে বাঁচাতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা তোমাদের কণ্ঠস্বর নবীর কণ্ঠস্বরের ওপর উঁচু কোরো না এবং নিজেরা যেভাবে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলো তাঁর সঙ্গে সেভাবে উচ্চৈঃস্বরে কথা বোলো না। কারণ তাতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা তা টেরও পাবে না।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ২)</p> <p>প্রিয় নবী (সা.) এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘...একে অন্যকে কষ্ট দেবে না এবং কোরআন পাঠ অথবা নামাজ পড়ার সময় একে অন্যের থেকে স্বরকে উঁচু করবে না।’ (আবু দাউদ)</p> <p>মুসা ও হারুন (আ.)-কে দ্বিনি দাওয়াতের শিষ্টাচারের নির্দেশনা প্রসঙ্গে বলা হলো, ‘তোমরা উভয়ে ফেরাউনের নিকট যাও, সে সীমা লঙ্ঘন করেছে। তোমরা তার সঙ্গে নম্র কথা বলো, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ৪৩-৪৪)</p> <p>মানুষের ধীর-সংযত চলাফেরা ও শ্রুতিমধুর কথাবার্তার নির্দেশনা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি সংযতভাবে পদক্ষেপ করো এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু করো, নিশ্চয়ই গাধার স্বরই সবচেয়ে নিকৃষ্ট।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১৯)</p> <p>নীরব-নিভৃত ইবাদতের নির্দেশনা দিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাকো কাকুতি-মিনতি করে এবং সংগোপনে...।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৫)</p> <p>জাকারিয়া (আ.)-এর মোনাজাত প্রসঙ্গে বলা হলো, ‘যখন সে তার পালনকর্তাকে অনুচ্চ স্বরে ডাকল।’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৩)</p> <p>খাইবার যুদ্ধের সময় দোয়া করতে গিয়ে সাহাবাদের শব্দ উঁচু হয়ে গেলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কোনো বধিরকে অথবা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না যে এত জোরে বলতে হবে, বরং একজন শ্রোতা ও নিকটবর্তীকে সম্বোধন করছ।’ (ইসলাম : পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, ড. ময়নুল হক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ)</p> <p>বর্তমানে আমাদের বসবাস শব্দ ও বিরক্তিকর পরিবেশের মধ্যে। জনসভা, নির্বাচনী প্রচারণা, ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বনভোজনসহ নানা কারণে মাইকের আওয়াজ সবার জন্যই বিরক্তিকর। ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুল্যান্স বা অন্যান্য সাইরেন, বিস্ফোরণ, ট্রেন, বাস,  ট্রাক, লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ, উড়োজাহাজের শব্দ, মাইক, ক্যাসেট বা রেডিওতে উচ্চ শব্দে বাদ্যযন্ত্রের ড্রামের আওয়াজে, এমনকি মেঘের গর্জন ও বজ্রপাতের ফলে বিকট শব্দ দারুণ আতঙ্কের কারণ।</p> <p>যদিও শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়; যেমন—ধর্মীয় উপাসনালয়, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সরকারি তথ্য প্রচারকালে, আইন-শৃঙ্খলার কাজে, গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে, আকাশযান, রেলগাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ব্যবহার, সাহরি-ইফতারের সময় প্রচার, মৃত্যু সংবাদ, হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার ইত্যাদি।</p> <p>মানুষের শ্রবণযোগ্য শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল হলেও বর্তমানে আমরা অনায়াসে ৬০ থেকে ৭০ ডেসিবেল শব্দের মাত্রা প্রতিনিয়তই সহ্য করে যাচ্ছি। অবশ্যই এটা এক বিপজ্জনক চর্চা। জানা যায়, মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে এরই মধ্যে দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে। শিগগিরই দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এতে আক্রান্ত হবে। পরিশেষে শব্দদূষণ সম্পর্কে সবার সংযম ও সতর্কতা কামনা করছি।</p>