<p>হিজরি বর্ষের ১১তম মাস জিলকদ। জিলকদ শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো বসে থাকা। জাহেলি যুগ থেকে মানুষ এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ করত না। তাই এটিকে বসে থাকা বা বিশ্রামের মাস বলা হয়।</p> <p><strong>জিলকদ হজের মাস : </strong>জিলকদকে হজের মাসও বলা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হজের মাস সুনির্দিষ্ট।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৭)</p> <p>আর ইসলামের বিধান অনুসারে হজের মাস হলো—শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ। অর্থাৎ এ তিনটি মাসে হজের কাজ চলবে।</p> <p><strong>জিলকদ সম্মানিত মাস : </strong>বছরে ১২টি মাস আছে। তার মধ্যে চারটি মাস বিশেষভাবে সম্মানিত। এগুলোর তিনটি হলো ধারাবাহিক—জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। আর অন্যটি হলো রজব। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৬৬২)</p> <p>মহানবী (সা.)-এর ওমরাহর মাস : এই মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবনের তিনটি ওমরাহ করেছেন। এবং তাঁর ঐতিহাসির ‘ওমরাতুল কাজা’ এই মাসে পালন করেছেন। মদিনায় হিজরতের পর মুসলিমরা পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফের সুযোগ পায়নি। তাদের অন্তরে জেগে ওঠে কাবার ভালোবাসা। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বপ্নে দেখেন যে মুসলিমরা মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেছে। তখন জিলকদ মাসের প্রথম দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে প্রায় এক হাজার ৫০০ সাহাবিকে নিয়ে পবিত্র মক্কার উদ্দেশে মদিনা থেকে বের হন। হুদাইবিয়া নামক স্থানে এসে দীর্ঘ আলাপের পর মুসলিমদের সঙ্গে মক্কার কুরাইশদের ঐতিহাসিক হুদাইবিয়ার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে সেই বছর মুসলিমরা ওমরাহ পালন না করে ফিরে যায় এবং পরের বছর ওমরাহ করতে আসে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রাসুলের স্বপ্ন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেছেন, আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা অবশ্যই নিরাপদে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে, তোমাদের কেউ মাথা মুণ্ডন করবে এবং কেউ চুল কাটবে; তোমাদের কোনো ভয় থাকবে না, আল্লাহ যা জানেন তোমরা তা জানো না, তা ছাড়া আল্লাহ তোমাদের নিকটতম বিজয় দিয়েছেন।’ (সুরা : ফাতাহ, আয়াত : ২৭)</p> <p><strong>ইসলামের ইতিহাসে জিলকদ</strong></p> <p>* হিজরতের আগে ৬১৯ খ্রিস্টাব্দে জিলকদ মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় চাচা আবু তালিব ইন্তেকাল করেন।</p> <p>* নবুয়তের ১১তম বর্ষে পবিত্র হজের মৌসুমে এই জিলকদ মাসেই মহানবী (সা.) মক্কার বহিরাগত লোকদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়া শুরু করেন।</p> <p>* নবুয়তের ১২তম বর্ষে এ মাসেই মদিনার আউস ও খাজরাজ গোত্রদ্বয় ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করে নবী (সা.)-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে। ইসলামের ইতিহাসে তা ‘আকাবার প্রথম শপথ’ হিসেবে পরিচিত।</p> <p>* পঞ্চম হিজরি জিলকদ মাসে খন্দকের যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা ও চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে মদিনার ইহুদিদের সঙ্গে ‘বনি কোরাইজার যুদ্ধ’ অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p>* ঐতিহাসিক হুদাইবিয়ার সন্ধি ষষ্ঠ হিজরির জিলকদ মাসে অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p>* ১৫ হিজরির জিলকদ মাসে মহানবী (সা.) আবু মুসা আশয়ারি (রা.) ও মুয়াজ বিন জাবাল (রা.)-কে গভর্নর করে ইয়েমেনে পাঠিয়েছেন।</p> <p>* ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে ১২ হিজরির জিলকদ মাসে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.)-এর নেতৃত্বে ফোরাজের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে এটাই ছিল সর্ববৃহৎ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। রোম, পারস্য ও আরবের বিভিন্ন গোত্র এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। আল্লাহর রহমতে মুসলমানরা এ যুদ্ধে জয়লাভ করে। ঐতিহাসিক তাবরানির মতে, যুদ্ধে শত্রুপক্ষের প্রায় এক লাখ মানুষ মারা যায়। তবে কোনো কোনো বর্ণনায় দুই লাখেরও উল্লেখ আছে। শত্রু বাহিনীর শেষরক্ষার জন্য এ যুদ্ধ ছিল তাদের মরণকামড় ও অন্তিম লড়াই।</p> <p>* ৩৭ হিজরি জিলকদ মাসে মুয়াবিয়া (রা.) খিলাফতের আসনে সমাসীন হন।</p> <p>* ৪৬৪ হিজরি, ১০৭১ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক ‘মালাজগিরদের যুদ্ধ’ অনুষ্ঠিত হয়। খ্রিস্টান রোম সম্রাট চতুর্থ রোমানোসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন বাদশাহ আরসালান। এ যুদ্ধে রোম সম্রাটের পরাজয়ে ওই অঞ্চলে খ্রিস্টানদের আধিপত্য লোপ পায়। এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল জিলকদ মাসে।</p>