<p>ঐতিহাসিক নজদ অঞ্চলের প্রাচীন নগরী উনাইজাহ, যা সৌদি আরবের মধ্যভাগে এবং আল কাসিম প্রদেশের দক্ষিণে অবস্থিত। আরব উপদ্বীপের সর্ববৃহৎ উপত্যকা ‘ওয়াদি রুম্মাহ’-এর নিকটবর্তী। এটি আল কাসিম প্রদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরও বটে। প্রাচীনকালে উনাইজাহ ছিল হজযাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ যাত্রাবিরতির স্থান। ইরাক ও ইরানের হজযাত্রীরা উনাইজাহ হয়ে মক্কা-মদিনায় গমন করতেন।</p> <p>ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন, ইসলাম আগমনের বহু বছর আগেই উনাইজাহ শহরের গোড়াপত্তন হয়েছিল। কেননা ইমরুল কায়েসের মতো ইসলামপূর্ব যুগের একাধিক কবিতায় এই শহরের বর্ণনা পাওয়া যায়। উনাইজাহর উত্তরে রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল আল গাদা, যেখানে প্রাগৈতিহাসিক যুগের ‘শিলাচিত্র’ আবিষ্কৃত হয়েছে। আল আউশাজিয়াহ লবণহ্রদও উনাইজাহ শহরের অন্তর্ভুক্ত।</p> <p>দীর্ঘ সময় পর্যন্ত উনাইজাহকে নজদের প্যারিস এবং আল কাসিমের রানি বলা হতো। লেবানিজ লেখক ও পর্যটক আমিন আল-রিহানি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে নজদ ভ্রমণের সময় উনাইজাহকে ‘নজদের প্যারিস’ উপাধি দিয়েছিলেন। ১০০ বছর পরেও উনাইজাহকে পর্যটকরা এভাবেই মূল্যায়ন করে।</p> <p>উনাইজাহ আরব উপদ্বীপের অন্যতম সুন্দর মরূদ্যান। এর উত্তর ও পশ্চিমে আল গামিস মরুভূমি অবস্থিত। উনাইজাহতে পাঁচ লাখ খেজুরগাছ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তারা পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট খেজুর উৎপাদন করে। ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে খেজুর উৎসব হয়। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল এবং মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম খেজুর উৎসব এটি। ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক খেজুর উৎসবের আয়োজন করা হয়। খেজুর উৎসবের সময় সৌদি আরব এবং এর প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা উনাইজাহতে ভিড় করে। খেজুর ছাড়াও উনাইজাহতে প্রচুর পরিমাণ গম ও বার্লি উৎপন্ন হয়। এই অঞ্চলের কৃষিপণ্যের মধ্যে আরো আছে আঙুর, জাম্বুরা, লেবু, লিক, কমলা ও ডালিম। একাধিক প্রাচীন নগরী, উদ্যান, উর্বর কৃষিভূমি, খেজুরগাছ ও একাধিক উপত্যকার জন্য নজদকে সৌদি আরবের হৃদভূমি বলা হয়।</p> <p>উনাইজাহ প্রাচীন আরব-ইরাক বাণিজ্য পথে অবস্থিত। মিসর, সিরিয়া, ইরাক, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ী ও হাজিরা এই শহর হয়ে মক্কা-মদিনা ও রিয়াদে যেতেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত উনাইজাহ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে তার গুরুত্ব ধরে রেখেছিল। খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী জুবাইদা এই পথে হজ করতে যান। তিনি উনাইজাহতে যাত্রাবিরতি করেন এবং হাজিদের সেবায় কয়েকটি পানির কূপ খনন করেন। জুবাইদার সম্মানে এই পথের নাম পাল্টে ‘দারবে জুবাইদা’ রাখা হয়।</p> <p>উনাইজাহের ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর একটি আল বাসসাম হাউস। মাটির তৈরি এই ভবনের আয়তন তিন হাজার ৫০০ স্কয়ার মিটার এবং তা নজদি শৈলীতে তৈরি, যা বর্তমানে একটি ব্যক্তিগত জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শহরটিতে অসংখ্য প্রাচীন পাঠাগার ও কোরআনি মক্তব রয়েছে। উনাইজাহর উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র হলো আল মুসাওয়াকাফ বাজার, উনাইজাহ মল, উসাইম মল, আল গাদা পার্ক, আল হাজেব পার্ক, আল হামদান হাউস ও জাদুঘর, এশিয়া রিসোর্ট ও পার্ক, কিং ফাহাদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ইত্যাদি।</p> <p><em>তথ্যঋণ : আরব নিউজ, সৌদি ট্যুরস ও উইকিপিডিয়া</em></p>