<p>দেখতে দেখতে জীবন থেকে আরো একটি বছর সমাপ্ত হওয়ার পথে। জীবনের এক-একটি বছর মহা মূল্যবান। প্রতিটি বছর জীবনকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর বিশেষ সুযোগ তৈরি হয়। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার অবকাশ মেলে। জীবনে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটানোর সুযোগ হয়। কিন্তু আসলে কেটে যাওয়া দিনগুলো আমরা কতটা কাজে লাগাতে পেরেছি, সেটা নিয়ে মূল্যায়ন ও আত্মজিজ্ঞাসা বছরের শেষ দিনগুলোতে অত্যন্ত জরুরি। ইসলামে মানুষের শেষ সময়ের আমলের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিখ্যাত সাহাবি মুআজ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির শেষ কথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হবে (অর্থাৎ এই কলেমা পড়তে পড়তে যার মৃত্যু হবে), সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২০৩৪)</p> <p>কোনো মুমিনের শেষ আমল যদি ভালো হয়, তাহলে এর অসিলায় মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের অধিবাসী করবেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যিনি ‘সত্যবাদী’ এবং ‘সত্যবাদী বলে স্বীকৃত’ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি হলো এমন বীর্য থেকে, যাকে মায়ের পেটে চল্লিশ দিন কিংবা চল্লিশ রাত একত্র রাখা হয়। তারপর তেমনি সময়ে আলাক হয়, তারপর তেমনি সময়ে গোশতপিণ্ডে পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ তার কাছে ফেরেশতা প্রেরণ করেন।</p> <p>এই ফেরেশতাকে চারটি বিষয় সম্পর্কে লেখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। যার ফলে ফেরেশতা তার রিজিক, আমল, আয়ু এবং দুর্ভাগা কিংবা ভাগ্যবান হওয়া সম্পর্কে লিখে দেয়। তারপর তার মধ্যে প্রাণ ফুঁকে দেওয়া হয়। এ জন্যই তোমাদের কেউ জান্নাতিদের আমল করে এতটুকু এগিয়ে যায় যে তার ও জান্নাতের মাঝে শুধু এক গজের দূরত্ব থাকতেই তার ওপর লিখিত তাকদির প্রবল হয়ে যায়। তখন সে জাহান্নামিদের মতো আমল করে।</p> <p>শেষে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবার তোমাদের কেউ জাহান্নামিদের মতো আমল করে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক গজের দূরত্ব থাকতে তার ওপর তাকদিরের লেখা প্রবল হয়। ফলে সে জান্নাতিদের মতো আমল করে, শেষে জান্নাতেই প্রবেশ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৪৫৪)</p> <p>ভাবার বিষয় হলো, আমরা কতটুকু আমল করতে পেরেছি, কতটুকু নিজেকে আলোকিত মানুষরূপে গড়ে তুলতে পেরেছি—এসবের যোগ-বিয়োগ করার সময় এখনই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় ঘনিয়ে এসেছে, অথচ তারা এখনো উদাসীনতার মধ্যে বিমুখ হয়ে আছে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১)</p> <p>তাই এখন হিসাব-নিকাশ ও জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মূল্যায়ন খুবই জরুরি।</p>