<p>ইসলাম পরিশ্রমী ও কর্মবীর মানুষদের পছন্দ করে। কর্মবিমুখ ও পরনির্ভর মানুষদের ইসলাম পছন্দ করে না। এ জন্য মুমিনদের নিজ নিজ কর্মে দক্ষতা অর্জন করতে নানাভাবে উৎসাহিত করেছে। কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিষয়টি তুলে ধরা হলো।</p> <p><strong>পিছিয়ে থাকা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়</strong></p> <p>কোনো ভালো কাজ বা গুণ অর্জনে পিছিয়ে থাকা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। এটা অবিশ্বাসী ও মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সঙ্গে থাকতে পেরে তারা আনন্দিত এবং তাদের অন্তরে মোহর এঁটে দেওয়া হয়েছে, তাই তারা বুঝতে পারে না।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৮৭)</p> <p><strong>আল্লাহর কাজ নিপুণ</strong></p> <p>মহান আল্লাহর বৈশিষ্ট্য হলো তিনি যেকোনো কাজ নৈপুণ্যের সঙ্গে করেন। তাঁর সব কাজ হয় নির্ভুল। সুতরাং মুমিনের দায়িত্ব হলো নিজ কাজে নৈপুণ্য অর্জন করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘এটা আল্লাহরই সৃষ্টি-নৈপুণ্য, যিনি সব কিছুকে করেছেন সুষম। তোমরা যা করো সে সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত।’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৮৮)</p> <p>অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ২)</p> <p><strong>আল্লাহ কর্মে যত্নশীল মানুষকে ভালোবাসেন</strong></p> <p>যে ব্যক্তি তাঁর কাজের প্রতি যত্নশীল, সে-ই কাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারে। আর যে অমনোযোগী সে কখনো কর্মদক্ষতা অর্জন করতে পারে না। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) কাজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন যে যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজ করে তখন তা সে যত্নের সঙ্গে করবে। (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ১৮৬৭)</p> <p><strong>কর্মদক্ষতা অপরিহার্য</strong></p> <p>নিজ নিজ কাজে দক্ষতা অর্জন করা ঐচ্ছিক বিষয় নয়, বরং তা মুমিনের জন্য আবশ্যক। শাদ্দাদ বিন আউস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ সব বিষয় সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তোমরা যখন হত্যা করবে, তখন উত্তমরূপে হত্যা করবে; আর যখন তোমরা জবাই করবে, তখন উত্তমরূপে জবাই করতে তোমাদের ছুরি ধারাল করবে এবং জবাইকৃত জন্তুকে স্থির হতে দেবে। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৪৪১১)</p> <p><strong>কর্মদক্ষ আল্লাহর প্রত্যাশা</strong></p> <p>মুমিন যেমন ভালো কাজ করে, তেমনি সে ভালোভাবে কাজ করে। কেননা উভয়টি তার কাছে মহান আল্লাহর প্রত্যাশা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য—কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ২)</p> <p><strong>ভালো কাজের প্রতিদানও ভালো</strong></p> <p>আল্লাহ তাআলা মুমিনদের ভালো কাজের জন্য উত্তম প্রতিদান দেবেন। জাগতিক বিষয়েও আল্লাহর মূলনীতি এটাই। সুতরাং যে তার কাজে যত দক্ষ হবে, আল্লাহ তার জীবন-জীবিকায় ততটাই বরকত দেবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যাতে তারা যে কাজ করে তার জন্য আল্লাহ তাদেরকে উত্তম পুরস্কার দেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদের প্রাপ্যের অধিক দেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩৮)</p> <p><strong>মন্দের পরিণতিও ব্যক্তির</strong></p> <p>ব্যক্তি যখন কোনো মন্দ কাজ করে বা কাজ মন্দভাবে করে, তার পরিণতি তাকেই ভোগ করতে হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করলে সে তাও দেখবে।’ (সুরা : জিলজাল, আয়াত : ৭-৮)</p> <p>তাফসিরবিদরা বলেন, উল্লিখিত আয়াতদ্বয় পরকালীন বিচারের ব্যাপারে অবতীর্ণ হলেও জাগতিক জীবনের পরিণাম-পরিণতি আল্লাহর এই চিরন্তন নিয়মের বাইরে নয়।<br /> আল্লাহ সবাইকে নিজ নিজ কাজে দক্ষতা অর্জনের তাওফিক দিন। আমিন।</p> <p><br />  </p>