<p>কোরআনের বর্ণনা মতে, বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন নবী ও রাসুলদের একজন সাইয়েদুনা মুসা (আ.)। কেননা পবিত্র কোরআনে তাঁকে ‘উলুল আজম’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ কোরো, যখন আমি নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং তোমার কাছ থেকেও; নুহ, ইবরাহিম, মুসা ও মারিয়ামপুত্র ঈসার কাছ থেকেও। তাদের থেকে গ্রহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৭)</p> <p><strong>আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথনকারী : </strong>মুসা (আ.) পৃথিবীতে বসে আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন করেছিলেন। এ জন্য তাঁকে কালিমুল্লাহ বলা হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুসা যখন আমার নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হলো এবং তাঁর প্রতিপালক তাঁর সঙ্গে কথা বললেন, তখন সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও। আমি তোমাকে দেখব। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কখনোই দেখতে পাবে না। তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি লক্ষ কোরো, তা স্বস্থানে স্থির থাকলে তবে তুমি আমাকে দেখবে। যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করল এবং মুসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ল। যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল তখন বলল, মহিমাময় তুমি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমার কাছে প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম। তিনি বললেন, হে মুসা! আমি তোমাকে আমার রিসালাত ও বাক্যালাপ দ্বারা মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। সুতরাং আমি যা দিলাম তা গ্রহণ কোরো এবং কৃতজ্ঞ হও।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৪৩-১৪৪)</p> <p><strong>আসমানে বিশেষ অবস্থান :</strong> আল্লাহ তাঁর কয়েকজন মর্যাদাবান নবী ও রাসুলকে আসমানে স্থান দিয়েছেন। মিরাজের রাতে যাদের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাক্ষাৎ হয়েছিল। সেসব সম্মানিত নবীদের একজন মুসা (আ.)। মিরাজের রাতে ষষ্ঠ আকাশে নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। নবীজি (সা.) যখন উম্মতের জন্য ৫০ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ে ফিরছিলেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে গিয়ে তা কমানোর আবেদন করতে বলেন। অবশেষে তা পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারিত হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৮৮৭)</p> <p><strong>৯টি সুস্পষ্ট মুজিজা লাভ :</strong> মুসা (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে ছয়টি সুস্পষ্ট মুজিজা লাভ করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি বনি ইসরাইলকে জিজ্ঞাসা করে দেখো আমি মুসাকে ৯টি স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম।  (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ১০১)</p> <p>৯টি মুজিজার কয়েকটি সুরা আরাফে বর্ণিত হয়েছে এবং অন্যগুলো হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সেগুলো হচ্ছে- ক. লাঠি সাপ হওয়া, খ. হাত উজ্জ্বল হওয়া, গ. প্রবল তুফান, ঘ. পঙ্গপালের প্রাদুর্ভাব, ঙ. উকুনের প্রাদুর্ভাব, চ. ব্যাঙের প্রাদুর্ভাব, ছ. পানি রক্ত হয়ে যাওয়া, জ. প্লেগ রোগ, ঝ. দুর্ভিক্ষ। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৫/১২৬)</p> <p><strong>কোরআন সবচেয়ে বেশি আলোচিত : </strong>নবী-রাসুলদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ ও বেশিবার নাম উচ্চারিত হয়েছে মুসা (আ.)-এর। পবিত্র কোরআনে যেসব নবী-রাসুলের নাম সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত হয়েছে তাঁদের পাঁচজন হলেন, ১. মুসা (আ.)-এর নাম ১৩৬ বার, ২. ইবরাহিম (আ.)-এর নাম ৬৯ বার, ৩. নুহ (আ.)-এর নাম ৪৩ বার, ৪. লুত (আ.)-এর নাম ২৭ বার, ৫. ইউসুফ (আ.)-এর নাম ২৭ বার।</p> <p>আল্লাহ সব নবী-রাসুল (আ.)-কে যথাযথভাবে সম্মান করার তাওফিক দিন। আমিন।</p>