<p>ফিলিস্তিনের মুসলিমদের, বিশেষ করে অসহায় নারী-শিশুদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এই মুহূর্তে আমাদের মুসলিম জনসাধারণের করণীয় কী?</p> <p>প্রথম কাজ হলো, নিজ নিজ অবস্থান থেকে আওয়াজ ওঠানো এবং মুসলিম সরকারগুলোর কাছে এই দাবি কঠোরভাবে তোলা যে আপনারা এই যুদ্ধে নিরপেক্ষতার ভান ধরে বসে থাকবেন না, বরং হামাসসহ অন্যান্য প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পরিপূর্ণ সাহায্যে এগিয়ে আসুন। শুধু মৌখিক বিবৃতি ও সমর্থনই যথেষ্ট নয়, বরং তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করুন।</p> <p>দ্বিতীয়ত, মুসলিমদের একটি বড় অস্ত্র যাকে আমরা উদাসীনতার কারণে অস্ত্র মনে করছি না, তা হলো ‘দোয়া’। আল্লাহ তাআলা সব কিছুর পরিকল্পনাকারী। এই সব অস্ত্র মিসাইল হোক, রকেট হোক, বোমা হোক—এগুলো কার হুকুমে পরিচালিত হয়? একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কে তার মধ্যে প্রভাব সৃষ্টি করে থাকে?</p> <p><strong>মুসলিম সরকারের কাছে আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দিন</strong></p> <p>কোরআনে কারিমের এই বাণী সব মুসলিম সরকারপ্রধানের কাছে পৌঁছানো আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমাদের কী হলো যে তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদের বের করুন এ জনপদ থেকে, যার অধিবাসীরা জালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৫)</p> <p>কোরআনে কারিমের এই আয়াত বিশ্ব মুসলিমকে জোরদার আহ্বান করছে যে তোমরা কেন মজলুমের সাহায্যে এগিয়ে আসছ না? এই মুহূর্তে উক্ত আয়াতের প্রতিপাদন গাজার মজলুম মুসলিমদের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রযোজ্য হয়। তারা এই বিপদের মুহূর্তে আল্লাহকে ডাকছে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করো! আমাদের জন্য একজন সাহায্যকারী পাঠাও!’ এমন পরিস্থিতিতে আল্লাহ তাআলার এই হুকুম—‘তোমরা কেন তাদের সাহায্যে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছ না?’</p> <p><strong>নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরকারকে উদ্বুদ্ধ করুন</strong></p> <p>আমরা সাধারণ জনগণ, সেখানে গিয়ে ওই যুদ্ধে তাদের সঙ্গে অংশগ্রহণের সামর্থ্য আমাদের নেই, বরং এ পরিস্থিতিতে আবেগের ওপর সাধারণ জনগণ সেখানে গিয়ে তাদের বোঝা হওয়া ছাড়া উপায় নেই। শক্তি-সামর্থ্যহীন সাধারণ মুসলিমরা অবিবেচনাপ্রসূত সেখানে গিয়ে তাদের জন্য সংকট বৃদ্ধি ছাড়া কিছুই করতে পারবে না। তাই সাধারণ মুসলিমরা নিজ নিজ দেশের সরকারের কাছে জোরদারভাবে এই দাবি জানাতে পারে, যেন সরকার মজলুমদের সাহায্যে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে আসে।</p> <p>এ ক্ষেত্রে মানবিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা থেকে অস্ত্র, সৈন্য, রসদসহ সব ধরনের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেক মুসলিমই নিজ নিজ প্রভাব কাজে লাগিয়ে স্বীয় সরকারকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করবে। আমার আশা, মুসলিম দেশগুলোর সরকার ও বাহিনী এমন আত্মমর্যাদাহীন ও অনুভূতিশূন্য নয় যে এই কঠিন পরিস্থিতি অবলোকন করেও তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে। অনেক সময় এমন হয় যে অনেক আত্মমর্যাদাশীল সরকারের মজলুমের সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড জনসাধারণের সামনে আসে না। তারা বিভিন্ন স্বার্থে তা অপ্রকাশ্য রাখে। কিন্তু যখন মুসলিম জনসাধারণের প্রকাশ্য সমর্থন ও দাবি সামনে আসে, তখন তারা প্রকাশ্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসার সাহস ও শক্তি পায়। তাই আমাদের এই সুযোগ কাজে লাগানো উচিত। </p> <p><strong>আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে</strong></p> <p>সবচেয়ে বড় কথা হলো, আল্লাহ তাআলার প্রতি প্রত্যাবর্তন করতে হবে। যেন কোনো নামাজের আগে-পরে মজলুমের জন্য দোয়াবিহীন না যায়। প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য হলো মজলুমের জন্য দোয়া করবে। ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত উভয় পদ্ধতিতেই দোয়া করা। ঈমানদারদের জন্য দোয়া অনেক বড় হাতিয়ার। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : দোয়া হলো মুমিনের হাতিয়ার। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৪৩৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস : ১৮১২)</p> <p>দোয়া এমনই বড় হাতিয়ার যে তার অসিলায় কোরআনের বাণীমতে ‘অনেক ছোট দলও আল্লাহর হুকুমে বড় দলকে পরাজিত করেছে!’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৪৯)</p> <p>আর এর বাস্তবতা আমরা ইতিহাসে অসংখ্যবারই প্রত্যক্ষ করেছি, যার বিস্তারিত বর্ণনা এখন সম্ভব নয়। মুসলিমদের বিজয়ের মূল রহস্য কী? আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা এবং জীবনের পাপ থেকে সঠিকভাবে তাওবা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের করণীয় কাজ সঠিকভাবে করার তাওফিক দান করুন।</p> <p><em>অনুলিখন : মাহমুদ হাসান</em></p> <p> </p>