দেশজুড়ে বইছে ভোটের হাওয়া। আগামী সংসদ নির্বাচন ছাড়া জমছে না কোনো আলোচনাই। গেইমের জগত্টাও এর বাইরে থাকে কী করে? রাজনীতির দুনিয়ার সঙ্গে গেইমের একটা অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক আছে। বেশির ভাগ গেইমারই পছন্দ করেন যুদ্ধভিত্তিক অ্যাকশন গেইম।
গেইম
গেইমে রাজনীতি
সামীউর রহমান

কম্পিউটার গেইমের শুরুর দিক থেকেই রাজনৈতিক সিমুলেশন গেইমগুলো বেশ জনপ্রিয়। শুধু সময় কাটানোর জন্য শখের গেইমাররাই নন, রাজনীতিসংশ্লিষ্ট নানা ব্যক্তিও দক্ষতা বাড়াতে শরণ নিতেন এসব গেইমের। স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের প্রেক্ষাপট নিয়ে ‘ব্যালান্স অব পাওয়ার’ কিংবা তারও আগে আটারির ৮ বিটের কম্পিউটারে ইস্টার্ন ফ্রন্ট ১৯৪১, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন নিয়ে ‘ক্রাইসিস ইন ক্রেমলিন’সহ অনেক গেইমই প্রকাশিত হয়েছে নানা সময়ে।
রাজনৈতিক গেইমগুলোতে সংকট সমাধান এবং বৈদেশিক যোগাযোগ—এসব বিষয়েই গুরুত্ব দেওয়া হয় বেশি। এসব গেইমের মাধ্যমে প্রচার করা হয় রাজনৈতিক দর্শনও।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত সংকট নিয়ে বানানো ক্রাইসিস ইন ক্রেমলিন গেইমে গেইমারের প্রধান কাজ ছিল অখণ্ড সোভিয়েত ইউনিয়ন টিকিয়ে রাখা।
এ রকমই আরেকটি রাজনৈতিক গেইম ‘মাস্টার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। জিও-পলিটিক্যাল সিমুলেটর নামেও পরিচিত এই গেইমে বিশ্বের ১৭৫টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ভেতর থেকে বেছে নেওয়া যাবে নিজের ভূমিকা।
পলিটিক্যাল সিমুলেটরগুলোর মধ্যে ‘রুলারস অব নেশনস’ গেইমের চরিত্রগুলো নির্মাণ করা হয়েছে বাস্তবের ওপর ভিত্তি করে। পোপ চতুর্দশ বেনেডিক্ট, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, চীনা প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলসহ অনেক পরিচিত রাজনৈতিক নেতার আদলে গড়া চরিত্রদের নিয়েই খেলার স্বাধীনতা পাবেন গেইমার।
কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ আক্ষেপ করেই বলেছিলেন, রাজনীতি কিভাবে মাঠের রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে সরে চলে যাচ্ছে আমলা ও ব্যবসায়ীদের কর্তৃত্বে। এর অন্যতম কারণ সমাজের বিভিন্ন স্তরে রাজনৈতিক সচেতনতার অভাব। তাই নির্বাচনী মৌসুমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ও সরকারব্যবস্থা সম্পর্কে খেলায় খেলায় জানার জন্য খেলা যেতেই পারে এসব সরকার চালানোর গেইমগুলো।
সম্পর্কিত খবর

এআই দেখাবে পরিবেশ বিপর্যয়
- এখনই পরিবেশদূষণ না কমালে ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কী হাল হতে পারে, তারই একটি সিমুলেটেড চিত্র তুলে ধরতে চালু হয়েছে thisclimatedoesnotexist.com। পরিবেশ বিপর্যয়ের পর সেই জায়গাটি কেমন হতে পারে, তারই চিত্র দেখা যাবে এ সাইটে। বিস্তারিত
জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ

দুই বছর ধরে সাইটটি নিয়ে কাজ করছে কানাডার কুইবেকে অবস্থিত এআই ইনস্টিটিউট ‘মিলা’। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন প্রয়োগ নিয়ে মিলা ইনস্টিটিউট কাজ করে আসছে। ২০১৯ সালে দলটি সিদ্ধান্ত নেয়, জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেটা মানুষকে চোখে আঙুল তুলে দেখানোর জন্য একটি প্রজেক্ট তৈরি করার। তাদের দলে কোনো আবহাওয়াবিদ না থাকলেও মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণালব্ধ অনেক তথ্যের ডাটাসেট হাতের কাছেই ছিল।
বিশ্বের সব অঞ্চল একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হবে না। সব জায়গায় সব ধরনের বিপর্যয় ঘটবেও না। মিলা’র দলটির ট্রেনিং দেওয়া এআই সূক্ষ্মভাবে তফাতগুলো আমলে নিয়ে এলাকাভিত্তিক পরিবর্তনগুলোর ভবিষ্যদ্বানী করতে পারে।
গবেষকদের অনেক দেশ ও এলাকার দুর্যোগের বাস্তব চিত্র জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সেসব এলাকার থ্রিডি মডেল তৈরি করে সেখানে বন্যা, আগুন বা ধোঁয়াশার প্রভাব সিমুলেট করে সেই তথ্য ব্যবহার করেছেন।
প্রজেক্টটির মূল লক্ষ্য, সবার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং সেটি ঠেকানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী করা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি স্ক্রিনে বা কাগজের কিছু লেখা ও সংখ্যায় আটকে থাকায় অনেকের কাছেই সেটার প্রভাব আসলে কতটা বিস্তীর্ণ হতে পারে, সেটা সব সময় অনুধাবন করা সম্ভব হয় না।
সিমুলেশনটি দেখতে হলে তাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে বেছে নিতে হবে পছন্দসই জায়গা। বিশ্বের সব দেশ ও শহরেই সিমুলেশনটি কাজ করে, তাদের তথ্যের জোগানদাতা গুগল ম্যাপস স্ট্রিটভিউ। ঠিকানা বাছাই করার পর দুর্যোগের ধরন ঠিক করে দিলেই কিছু সময় পর পাওয়া যাবে এআইয়ের তৈরি ছবি। নিজের বাসা, গ্রাম থেকে শুরু করে বিখ্যাত স্থান—সব ছবি সহজেই জেনারেট করা যাবে সাইটটির মাধ্যমে।

কী দেখা গেল গ্যালাক্সি আপ্যাকড ইভেন্টে?
- বার্ষিক গ্যালাক্সি আপ্যাকড ইভেন্ট হয়ে গেল ১০ জুলাই। এতে উন্মোচিত হয়েছে নতুন ফোল্ডিং গ্যালাক্সি ফোন, গ্যালাক্সি ওয়াচ এবং গ্যালাক্সি বাডসের পাশাপাশি স্যামসাং স্মার্ট রিংও। বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ

বাডস ও ওয়াচের চিরচেনা স্যামসাং ডিজাইনে এবার দেখা গেছে বড়সড় পরিবর্তন। স্যামসাং স্মার্ট রিং হতে পারে আগামীর জনপ্রিয় ফ্যাশনেবল স্মার্ট প্রযুক্তিপণ্যে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ফোনগুলোই ছিল ইভেন্টের সবচেয়ে সাদামাটা ডিভাইস।
গ্যালাক্সি ফোল্ডেবল সিরিজ
স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৬ ডিজাইন বর্তমান জেড ফোল্ড ৫-এর কাছাকাছি।
জেড ফ্লিপ ৬-এর হার্ডওয়্যারও ফ্লিপের মতোই। প্রসেসর বদলে দেওয়া হয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ৩ ফর গ্যালাক্সি, ক্যামেরা হার্ডওয়্যার থাকছে এস২৪-এর মতো মূল ৫০ মেগাপিক্সেল ও আলট্রাওয়াইড ১২ মেগাপিক্সেল সেন্সর। র্যাম ও রম থাকছে ফোল্ডের মতোই, ১২ গিগাবাইট ও ২৫৬ গিগাবাইট। এই ফোনটিও করা হয়েছে ফ্লিপ ৫-এর চেয়ে কিছুটা পাতলা ও হালকা, ব্যাটারি ৪০০০ এমএএইচ-এ উন্নীত করা হয়েছে।
গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৬-এর দাম শুরু এক হাজার ৮৯৯ ডলার থেকে। আর গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ৬-এর দাম ৮৯৯ ডলার থেকে শুরু।
স্যামসাং বাডস
স্যামসাং বাডস ৩ এবং বাডস ৩ প্রো দেখতে অনেকটাই এয়ারপডসের মতো। বেশির ভাগ স্যামসাং-ভক্ত বিষয়টি নিয়ে হতাশ, এত দিন ধরে স্যামসাং নিজেদের বাডসগুলোতে এ রকম নিজস্ব ডিজাইন ব্যবহার করে আসছিল। চমৎকার সাউন্ড, ফাস্ট পেয়ারিং এবং কার্যকরী নয়েজ ক্যানসেলেশনের জন্য দুটি বাডসই অবশ্য প্রাথমিক রিভিউতে উের গেছে। বাডস ৩ প্রো মডেলে থাকছে সরাসরি বাডসের মধ্যেই লাইট স্ট্রিপ, যাতে চট করে ব্যাটারি লাইফ দেখে নেওয়া যায়। তবে এয়ারপডসের ডিজাইনের এত কাছাকাছি করে নতুন বাডস ডিজাইন করায় স্যামসাংয়ের নিজস্বতা কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে, বলেছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
স্যামসাং বাডস ৩-এর দাম ১৭৯ ডলার থেকে শুরু। বাডস ৩ প্রো-এর দাম ২৪৯ ডলার থেকে শুরু।
গ্যালাক্সি ওয়াচ এবং রিং
অ্যানড্রয়েড ওয়্যার ওএস চালিত সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টওয়াচ সিরিজ ‘গ্যালাক্সি ওয়াচ’। নতুন গ্যালাক্সি ওয়াচ ৭-এর মূল্য থাকছে অপরিবর্তিত, ২৯৯ ডলার থেকে শুরু। চেহারাও অনেকটা ওয়াচ ৬-এর মতোই রাখা হয়েছে, বৃত্তাকার অ্যামোলেড ডিসপ্লেসমৃদ্ধ ওয়াচটি বাজারের বাকি সব চতুষ্কোণ স্মার্টওয়াচের চেয়ে একেবারেই আলাদা।
গ্যালাক্সি ওয়াচ আলট্রা স্যামসাং পরিবারে নতুন সংযোজন। চারকোনা বডি ও কমলা বাটন এবং ন্যাটো স্টাইল স্ট্র্যাপ দেখে অ্যাপল ওয়াচ আলট্রার কথাই মনে পড়বে। তবে বডি চারকোনা হলেও ডিসপ্লে থাকছে বৃত্তাকার। টাইটেনিয়াম বডি এবং স্যাফায়ার গ্লাস ডিসপ্লের ডিভাইসটি টানা ১০০ ঘণ্টা পর্যন্ত এক চার্জে চলতে সক্ষম। ডুয়াল ব্যান্ড জিপিএস, -২০ থেকে ৫৫ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রায় এবং ২৯ হাজার ৫২৭ ফিট উচ্চতায় পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকার মতো শক্তপোক্ত ডিজাইনের ঘড়িটি তৈরি করা হয়েছে যারা অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় তাদের কথা মাথায় রেখেই। মূল্য শুরু ৬৪৯ ডলার থেকে।
গ্যালাক্সি রিং
স্যামসাং নিজেদের স্মার্ট রিং তৈরি করেছে হাতে স্মার্টওয়াচ না পরেই হার্টরেট, ব্রিদিং, দেহের উত্তাপ এবং ঘুমের মনিটরিং করার জন্য। বেশ কিছু ব্র্যান্ডের স্মার্ট রিং এর মধ্যেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, স্যামসাংও অবশেষে বাজারে প্রবেশ করল। এক চার্জে প্রায় এক সপ্তাহ চলবে গ্যালাক্সি রিং, পাওয়া যাবে ম্যাট ব্ল্যাক, সিলভার এবং গোল্ড তিনটি রঙে। রিংটি ব্যবহার করার জন্য লাগবে অ্যানড্রয়েড ফোন, সব ফিচারের জন্য গ্যালাক্সি ফোন থাকা আবশ্যক। মূলত যারা ফ্যাশনসচেতন বা দীর্ঘ সময়, বিশেষ করে ঘুমের মধ্যে ঘড়ি পরতে আগ্রহী নয়, তাদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে ডিভাইসটি। মূল্য ৪০০ ডলার থেকে শুরু।

ঘূর্ণিঝড় খুঁজতে ড্রোন
- সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় হারিকেনের প্রবল ঘূর্ণিবাতের কারণে উপকূল এলাকায় প্রাণ হারায় অসংখ্য জনজীবন। হারিকেনের তাণ্ডব থেকে জানমাল রক্ষার্থে এবার মাঠে নেমেছে সামুদ্রিক ড্রোন। তার কার্যকলাপ লিখেছেন আল সানি

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চল, মধ্য এবং পূর্ব-উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর, ক্যারিবিয়ান সাগর এবং মেক্সিকো উপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় ‘হারিকেন’। হারিকেনের পাঁচটি ক্যাটাগরির মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ‘ক্যাটাগরি-ফাইভ’, যেটির গতিবেগ ২৫০ কিলোমিটারের ওপরে। তবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়গুলো প্রাথমিক অবস্থায় অল্প শক্তি নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও দ্রুত ক্যাটাগরি ফাইভ হারিকেনে রূপান্তরিত হচ্ছে। বিশেষ করে হারিকেন ওটিস গত বছরের অক্টোবর মাসে দক্ষিণ মেক্সিকোর উপকূলে আঘাত হানে, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার।
সমুদ্রগামী ড্রোন তৈরি করা ‘সেইলড্রোন’ আদতে একটি ডাটা কম্পানি। তবে তারা যে ড্রোন তৈরি করছে, এগুলো ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয়কারী হারিকেনের গতিবিধি নজর রাখতে এখন পর্যন্ত শতভাগ সক্ষম। এই সেইলড্রোনগুলো সেন্সরের মাধ্যমে সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডলের অবস্থার তথ্য সংগ্রহ করে সরকারি সংস্থার কাছে রিলে করে প্রেরণ করে এবং পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানীরা এসব ডাটা বিশ্লেষণ করে ঝড়ের সম্ভাব্য অবস্থান ও গতিবিধির ব্যাপারে সচেতন হয়।

আরিয়ানের রোবটেরা
- একদিকে শ্রমিকের অভাব, অন্যদিকে কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীন জীবন—এই দুইয়ের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে ‘গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস’। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বুয়েটিয়ান আরিয়ান কবিরের পথচলার গল্প জানাচ্ছেন আল সানি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক ছাত্র আরিয়ান কবির ২০২০ সালে তাঁর দুই ভারতীয় সতীর্থ ব্রুয়াল শাহ ও সতেন্দ্র কে. গুপ্তাকে নিয়ে শুরু করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিকস বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস’। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হলেও সেবা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ শিল্পোন্নত দেশগুলোতে।
বিশ্বব্যাপী রোবোটিকসকে এগিয়ে নিতে সৃজনশীল ও শক্তিশালী উদ্ভাবকদের দেওয়া হয় ‘বিআরআর৫০ ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড’। ২০২০ সালে যেটি পায় গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস।
শুরুর কথা
আরিয়ান কবির পড়াশোনা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিষয় নিয়ে। তবে বুয়েটে ভর্তির আগে থেকেই আরিয়ানের বেশ আগ্রহ ছিল রোবট নিয়ে। দৈনন্দিন কাজকে সহজ করে দেওয়া, বিপজ্জনক কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা ইত্যাদি কাজের জন্য রোবট কিভাবে বানায়, সেসবও ছিল তাঁর চিন্তায়। তবে আরিয়ান চাইতেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে এসব রোবট স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিক।
২০১৬ সালে আরিয়ান তাঁর অধ্যাপকের সঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে আসেন। সেখানকার ল্যাবে বিভিন্ন শিল্প উৎপাদকের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। তখন বড় একটি অ্যারোস্পেস প্রতিষ্ঠান থেকে জানতে পারেন তারা নিজেদের মাল্টি মিলিয়ন ডলারের হেলিকপ্টার ব্লেড এখনো হাতে বানায়। তবে এই কাজে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল ওই সময়।
শ্রমিক সংকট থেকে মুক্তি দিতে
যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক সংকট নতুন নয়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর বেশ কিছু অঞ্চলে ৪৪ হাজারের বেশি রোবট অর্ডার করেছিল বিভিন্ন কম্পানি। প্রযুক্তি কম্পানিগুলোর সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সিং অটোমেশন’ বা ‘এ৩’-এর তথ্য বলছে, ২০২১ সালের চেয়ে এটি ১১ শতাংশ বেশি। রোবট শ্রমিকের বাজার দাঁড়িয়েছে ২৩৮ কোটি ডলারে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি। চলতি বছরও যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংকট বেড়েছে ক্রমবর্ধমান হারে। সবচেয়ে বেশি শ্রমিক ঘাটতি উৎপাদন শিল্পে। প্রায় আড়াই ট্রিলিয়ন ডলারের এই উৎপাদনশিল্পে বিপজ্জনক বিভিন্ন কাজের জন্য শ্রমিক মেলানো কঠিন, যার কারণে ক্রয়াদেশের পাহাড় ক্রমাগত বেড়েই চলছে। অনেক কারখানারই ব্যাকলগে পড়ে আছে দুই থেকে তিন বছরের কাজ। এই সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করা হলেও প্রশিক্ষণের অভাবে তাঁদেরও কাজে লাগানো যাচ্ছে না পুরোদমে। পরিসংখ্যান বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩৮ লাখ শ্রমিকের পদ শূন্য। শূন্য পদের বিপরীতে যখন মানব শ্রমিকের অভাবে ধুঁকছে শিল্পোন্নত এসব দেশ, সেখানেই এগিয়ে এসেছে আরিয়ান কবিরের প্রতিষ্ঠান। গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কর্মদ্দীপ্ত এআইসমৃদ্ধ রোবট নিয়ে হাজির হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানে। মানব শ্রমিকের চেয়ে কম খরচ ও প্রায় শূন্য ঝুঁকির কারণে শিল্পসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকছে গ্রে ম্যাটার রোবটিকসের দিকে।
সাধারণ থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট
গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস নিজেরা বানায় না কোনো রোবট। যে কাজের জন্য তাদের রোবট লাগে, সেই কাজের উপযোগী রোবট তারা বাজার থেকে কিনে আনে। হার্ডওয়্যারভিত্তিক এই রোবটগুলোতে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রগ্রাম সেট করে দেয়। আরিয়ানের প্রতিষ্ঠানটি মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) একটি সফটওয়্যার কম্পানি। স্পেসিফিক সেন্সর, টুলস যুক্ত করে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে তারা বাজারের সাধারণ রোবটকে বানিয়ে তোলে একটি বুদ্ধিমান যন্ত্র হিসেবে। বর্তমানে তাদের রোবট বিভিন্ন সারফেস ফিনিশিংয়ের কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। সেন্ডিং, পলিশিং, কোটিং, গ্রাইন্ডিং, পেইন্টিংসহ যেখানে হাত দিয়ে কাজ করা হয়, সেখানেই কাজ করে এটি।
ভাড়ায় খাটা রোবট
আরিয়ানের প্রতিষ্ঠানের রোবটগুলো গ্রাহকরা না কিনেও ব্যবহার করতে পারে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকের মতো ভাড়া নেওয়ার সুবিধা রাখা হয়েছে। আর এ কারণে রোবট কেনার জন্য এককালীন বিশাল খরচ থেকে বেঁচে যায় কারখানাগুলো এবং ক্রয়াদেশের ওপর ভিত্তি করে রোবট কম-বেশি করে ভাড়াও নিতে পারে তারা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এসব রোবটের উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা মানব শ্রমিকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
বিনিয়োগ যখন ৭৩১ কোটি টাকার
আরিয়ানের প্রতিষ্ঠান প্রায় দুই বছর আগে বিনিয়োগ পেয়েছিল ২০০ কোটি টাকার বেশি। চলতি বছর তারা বিনিয়োগ পেয়েছে আগেরবারের চেয়ে প্রায় তিন গুণ। বাংলাদেশি টাকায় ৫৩১ কোটি বা সাড়ে চার কোটি ডলারের বি সিরিজ বিনিয়োগে সবার প্রথমে নাম আসে ওয়েলিংটন ম্যানেজমেন্টের। তা ছাড়া এই বিনিয়োগে যুক্ত আছে এনজিপি ক্যাপিটাল, ইউক্লিডিয় ক্যাপিটাল, অ্যাডভান্স ভেঞ্চার পার্টনারস ও এসকিউএন ভেঞ্চার পার্টনারস। থ্রিএম ভেঞ্চারস, বি ক্যাপিটাল, বো ক্যাপিটাল, ক্যালিব্রেট ভেঞ্চারস, ওসিএ ভেঞ্চারস ও সুইফ ভেঞ্চারসের বিনিয়োগে আরিয়ান কবিরের প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে আগেই। সাড়ে চার কোটি ডলারের নতুন বিনিয়োগ দিয়ে ‘গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস’ আরো নতুন ধরনের পণ্য ও সেবা নিয়ে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এর উদ্যোক্তারা। তা ছাড়া পুরনো গ্রাহকদের নতুন যেকোনো চাহিদা পূরণ করতেও রাখা হয়েছে আলাদা বরাদ্দ। বাকি অর্থ ব্যয় হবে নতুন নতুন গ্রাহক সৃষ্টি ও মার্কেটিংয়ের কাজে।