<p style="margin-bottom:13px">দেশের ভেতরের ও বাইরের নানামুখী চাপ সামলাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বরাবরের চেয়ে সংকোচনমুখী বাজেট প্রস্তাবিত হতে যাচ্ছে—এমনটি আগেই ধারণা করা গিয়েছিল। সম্প্রতি বাজেট প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদে উপস্থাপিত হওয়ার পর এ ধারণাটিই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ পাঁচ অর্থবছরে প্রতিবার আগের বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় বাজেট বেড়েছিল ৭.৬ শতাংশ। অন্যদিকে আসছে বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে চলতি ২০২৩-২৪-এর প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় বাজেটের আকার বেড়েছে মাত্র ৪.৬ শতাংশ। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি তথা এডিপির প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে আরো কম (১ শতাংশেরও কম)। দেখা যাচ্ছে যে বাস্তবতার নিরিখে এডিপিতে বেশি বেশি প্রকল্প বাবদ ব্যয় বরাদ্দ না রাখার যে পরামর্শ ছিল সেটিও গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করেছেন আমাদের বাজেট প্রণেতারা। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন করছে। রাজস্ব নীতিতে এই সময়োচিত সংকোচনমুখিতাকে তাই স্বাগতই জানাতে হবে। বাড়ন্ত মূল্যস্ফীতিকে বাগে আনতে হলে এর কোনো বিকল্প ছিল না। তা ছাড়া এডিপিতে কম প্রয়োজনীয় ছোটখাটো যেসব প্রকল্প এখনো রয়ে গেছে সেগুলো হয় বাদ দেওয়া অথবা সেগুলোর অযথা মেদ ঝেড়ে ফেলার উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।</p> <p><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/06.June/09-06-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="317" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/06.June/09-06-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" style="float:left" width="350" />সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক অস্থিরতা থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত রাখাই এখন প্রধানতম অগ্রাধিকার। প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় এটা নয়, তবু বাজেটে প্রবৃদ্ধির বড় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হতে দেখছি। বিরাজমান বিনিয়োগ খরার মধ্যে ৬.৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়ন দুরূহ। কেননা প্রবৃদ্ধিকে বলশালী করতে ব্যক্তি খাতের স্থবির বিনিয়োগের প্রেক্ষাপটে সরকারি খাতের ব্যয়েই মূলত ভরসা রাখতে হবে। বাড়তি ব্যয়ের চাপ না নিলে বাজেট ঘাটতি হয়তো আরো কম রাখা যেত। তাতে অন্তত দেশীয় ব্যাংকের ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমত। জিডিপির শতাংশ হিসাবে বাজেট ঘাটতি ৪.৫ শতাংশ থাকায় এই ঘাটতির অর্ধেকের বেশি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারকে এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিতে হবে। আশা করি লক্ষ্য যা-ই থাক না কেন, শেষ পর্যন্ত বাজেট ঘাটতি আরো খানিকটা কমানোর চেষ্টা সরকার করবে। আগের সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে বেশি বেশি ঋণ নিয়েছে বলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই পরিবেশে তা করাটা অযৌক্তিক হবে না বলাটা কতটা যৌক্তিক তা ফের ভেবে দেখা দরকার বলে মনে করি।</p> <p>জিডিপির শতাংশ হিসাবে ঘাটতি প্রতি ০.৫ শতাংশ করে কমানো গেলে ব্যাংকের সম্ভাব্য ঋণ প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা করে কম হতে পারে। ঘাটতি ৪.৫ শতাংশের বদলে যদি ২.৫ শতাংশ হতো, তাহলে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে ঋণ নিতে হতো মাত্র ২৬ হাজার কোটি টাকার মতো। ব্যক্তি খাতের জন্য ঋণ সহজলভ্য হতো। বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী সুদ হারের প্রেক্ষাপটে তা বিশেষভাবে কাম্য। ব্যক্তি খাতে ঋণ সরবরাহ ব্যাহত হলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হয়। একই সঙ্গে কম গতির রাজস্ব সংগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে বাড়তি ঋণের সুদ শোধ করার চ্যালেঞ্জটি যেভাবে জোরালো হচ্ছে তাও বিবেচনায় রাখতে হবে।</p> <p>মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যটিকেও বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে। কেননা প্রায় দেড় বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি রয়ে গেছে। গত মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি এবং সার্বিক মূল্যস্ফীতিও প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। এই বাস্তবতায় এই হার সাড়ে ৩ শতাংশের মতো কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা মোটেও সহজ হবে না। এই দৈত্যকে বোতলে পুরতে বেশ খানিকটা সময় যে লাগবে তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। সে জন্য বাজেট ঘাটতি আরো কমিয়ে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণের পরিমাণ কমানোর কোনো বিকল্প নেই।</p> <p>প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব বোর্ডের চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তার মাত্র ৩৭ শতাংশের মতো আসবে প্রত্যক্ষ কর থেকে। উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমানোর পথে বড় বাধা। রাজস্ব বোর্ড তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৬২ শতাংশের জন্যই নির্ভর করবে পরোক্ষ করের ওপর। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে মোট কর আয়ের ৭০-৮০ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর থেকে আসে। প্রতিবেশী ভারতেও মোট কর আয়ের ৫০ শতাংশের মতো প্রত্যক্ষ কর থেকে আসে। বাংলাদেশে এ ক্ষেত্রে গতানুগতিকতা থেকে বেরোনো এখনো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে যাঁরা কর দিচ্ছেন তাঁদের ওপর আর বোঝা না চাপিয়ে নতুন করদাতাদের যুক্ত করাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ জন্য রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা, ডিজিটাইজেশনসহ পুরো রাজস্ব আহরণ কাঠামোকেই ঢেলে সাজানো দরকার। অবশ্য বাজেটে প্রযুক্তির ব্যবহারে ভ্যাটসহ রাজস্ব সংগ্রহের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এদিকটায় আরো বেশি নজর দিলে কর-জিডিপির হার নিশ্চয় বাড়ানো সম্ভব।</p> <p>এর পরও বাজেট প্রস্তাবে যে সংকোচনমুখিতা দেখা গেছে তার বিচারে এটিকে একটি বাস্তবানুগ বাজেটই বলব, তবে বাজেটটি আরো ন্যায়ানুগ করার সুযোগ যে রয়েছে সেটিও বলতে হবে। বাজেটে কাটছাঁট করা ছাড়া আসলে অন্য উপায় ছিল না। তবে এই কাটছাঁট থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির মতো সামাজিক খাতগুলোকে যতটা মুক্ত রাখা যায় ততই মঙ্গল। অর্থনৈতিক অস্থিরতা থেকে জনগণকে সুরক্ষিত করতে সামাজিক খাতে সম্পদ সরবরাহ বলশালী করার দিকেই বরং বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার।</p> <p>শিক্ষা খাতের লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্য বাজেটে এ খাতের বরাদ্দের অনুপাত আরো বাড়ানো উচিত। বরাবরের মতো মোট বাজেটের প্রায় ১২ শতাংশ যাচ্ছে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ে (খাতওয়ারি বরাদ্দের বিচারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ)। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দের ৬.৭ শতাংশ (খাতওয়ারি হিসাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ) এ খাতে থাকলেও এর বড় অংশই অবকাঠামো উন্নয়নে যাচ্ছে। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও জনশক্তির দক্ষতা উন্নয়নের চাহিদা পূরণ করতে এ খাতে আরো বাড়তি বরাদ্দ একান্ত জরুরি।</p> <p>স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দে আরো উদ্ভাবনী কৌশল নিয়ে জনগণের ওপর স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপ কমানো যেত। প্রস্তাবিত বাজেটের ৫.২ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ অনুপাত ছিল ৫ শতাংশ। বরাদ্দের অনুপাত বাড়ানো গেলে লাগামহীন মূল্যস্ফীতির এই সময়ে জনগণ স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপ থেকে কিছুটা সুরক্ষা পেত। মনে রাখা চাই, জনগণকেই মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৯ শতাংশ বহন করতে হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বাজেট বাস্তবায়নের দক্ষতার অভাবের বিবেচনায় হয়তো বরাদ্দের অনুপাত বাড়ানো হচ্ছে না। ধারণা করা যায়, জনবল বাবদ কিংবা ভর্তুকি মূল্যে বা বিনা মূল্যে দেওয়া চিকিৎসাসামগ্রী বাবদ বরাদ্দ বাড়ালে বাস্তবায়ন নিয়ে দুর্ভাবনার কারণ নেই।</p> <p>মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বরাদ্দে আরো উদার হওয়া যেত। সামাজিক সুরক্ষায় বাজেটের ১৭.০৬ শতাংশ বরাদ্দ হয়েছে। চলতি বছরে ছিল ১৬.৫৮ শতাংশ। এর পুরোটাই বিপন্ন মানুষের জন্য নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ, বিভিন্ন বৃত্তির বরাদ্দও এখানে আছে। চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রান্তিক নাগরিকদের সুরক্ষায় এ অনুপাত বাড়ানো যেত (বিশেষত ক্যাশ ট্রান্সফার কর্মসূচির বরাদ্দ)। বৃহত্তম ক্যাশ ট্রান্সফার কর্মসূচিগুলোর জন্য বরাদ্দ ৩ থেকে ১০ শতাংশের মতো বাড়ানো হয়েছে। অথচ মূল্যস্ফীতিই হয়েছে ১০ শতাংশের কাছাকাছি।</p> <p>কৃষি বরাদ্দে প্রশংসনীয় ধারাবাহিকতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বাজেটে কৃষির অংশ চলতি বছরের ৩.৫ শতাংশ থেকে আসন্ন বছরে ৩.৯ শতাংশ হয়েছে। স্মার্ট কৃষি কার্ড ও ডিজিটাল কৃষি (পাইলট) প্রকল্প, অনলাইন কৃষি মার্কেটিং প্ল্যাটফরম ‘হর্টেক্স বাজার’ ও ‘ফুড ফর নেশন’-এ সময়োচিত বিনিয়োগ হচ্ছে। তবে কৃষি সেচে সৌরশক্তি ব্যবহারের অমিত সম্ভাবনার কথা বাজেট বক্তৃতায় আনা যেত। সৌরশক্তিনির্ভর সেচের মাধ্যমে বছরে ৮১ লাখ লিটার ডিজেল খরচ বাঁচানো সম্ভব। নেট মিটারিং ব্যবস্থাকে ব্যক্তির বেলায় প্রযোজ্য করলে এবং সবুজ জ্বালানি উৎপাদনকারীদের ২০ শতাংশ বেশি দামে ন্যাশনাল গ্রিডে ওই বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগ করে দিলে দীর্ঘ মেয়াদে জ্বালানি নিরাপত্তা যেমন বাড়বে, তেমনি কার্বন নিঃসরণের মাত্রাও কমবে।</p> <p>বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাড়তি মনোযোগকে আশা-জাগানিয়া মনে হয়েছে। পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বেড়েছে ৫২ কোটি টাকা। অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রভাব হ্রাসের জন্য বিশেষ বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা। প্রথমবারের মতো প্রণিত ‘আর্থিক ঝুঁকি বিবৃতি’তে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিগুলোকে যুক্ত করা দূরদর্শিতার প্রমাণ। লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে। অ-সরকারি অংশীজনদের যুক্ততা বৃদ্ধির দিকেও নজর দিতে হবে। সেই সঙ্গে হালের রিমাল ঘূর্ণিঝড়ে আহত সুন্দরবন ও উপকূলের প্রাণ ও প্রকৃতির পুনর্বাসনে বাড়তি জলবায়ু অর্থায়নের বরাদ্দ খুবই প্রাসঙ্গিক হতে পারত। এখনো সময় আছে এ বাবদ সংশোধিত বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার।</p> <p>বাজেটের কিছু কর প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। যেমন—সিগারেটে কার্যকর করারোপের মাধ্যমে বাংলাদেশে ধূমপানের হার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমিয়ে আনা এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির যে সুযোগ ছিল তা পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়নি। নিম্ন স্তরের সিগারেটের দাম আপাত বিচারে ১১ শতাংশ এবং উচ্চতর স্তরের সিগারেটগুলোর দাম আপাত বিচারে ৪ থেকে ৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে কার্যত সিগারেটের দাম বাড়েনি, বরং কমেছে। তবে কিছুটা হলেও দাম বাড়ানোয় সিগারেট বিক্রি থেকে আসা কর বাড়বে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। তামাকবিরোধী গবেষক ও নাগরিক সংগঠনের প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আসত।</p> <p>আরো কিছু কর প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। যেমন—বৈধ পথে সর্বোচ্চ ধাপের আয়ে ৩০ শতাংশ করারোপের বিপরীতে কালো টাকার ওপর তার অর্ধেক তথা ১৫ শতাংশ করারোপের প্রস্তাবটি নৈতিক প্রেক্ষাপটে মোটেও গ্রহণীয় নয়। তবে এটি নতুন কোনো প্রস্তাব নয়। রেগুলেটরি প্রয়োজনে বা বাধ্যবাধকতায় যদি তা অব্যাহত রাখা হয়ে থাকে, তাহলে ভিন্ন কথা। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় এতে খুব একটা সুফল পাওয়া যায়নি।</p> <p>মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট বেশির ভাগ মানুষের আয় বিবেচনায় নিয়ে করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত না রেখে আরেকটু বাড়ানোর কথাও ভাবা যায়। মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর যে কর আরোপের কথা বলা হচ্ছে সেটিও পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারে সোলার সিস্টেমের জন্য প্রয়োজনীয় ইনপুটস-এর ওপর আমদানি কর যতটা সম্ভব কমানো ও সম্ভব হলে পুরোপুরি প্রত্যাহারের কথা এখনো ভাবার সময় রয়েছে। বাজেট পাশের সময় বিষয়টি বিবেচনার জন্য নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।</p> <p>সামষ্টিক অর্থনীতির আরেকটি জরুরি বিষয় হলো এফডিআই। পাঁচ-দশ বছর ধরে কনসিস্টেন্ট কর ব্যবস্থার নিশ্চয়তা, বিনিয়োগকৃত বিদেশি পুঁজির লভ্যাংশ ও মূল পুঁজি সহজেই স্থানান্তরের সুযোগ সৃষ্টি করা, দুর্নীতিমুক্ত বাণিজ্য সেবা এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামো সেবা নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলোও বাজেট প্রণেতাদের নজরে রাখার প্রয়োজন রয়েছে। তবে নীতি প্রণয়নের পাশাপাশি স্বচ্ছতার সঙ্গে সেগুলোর বাস্তবায়ন আরো জরুরি বলে বিনিয়োগকারীরা মনে করেন।</p> <p>শেষ বিচারে এ বাজেটকে সংকট মোকাবেলার বাজেট হিসেবেই দেখতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটটি প্রাথমিকভাবে দেখে একে বাস্তবতার প্রতি অনেকটাই সংবেদনশীলই মনে হচ্ছে। একই সঙ্গে এই বাজেটটিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরেকটু কল্যাণমুখী হওয়ার সুযোগ যে ছিল সে কথাও সত্য। মহান জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনজুড়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরে আলোচনা-পর্যালোচনার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক অস্থিরতার এই ক্রান্তিকালে, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির কবল থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে আরো কিছু নীতি-নির্দেশনা আমরা পাব—এমন আশা করাই যায়।</p> <p> <strong>লেখক </strong>: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর</p>