<p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রযুক্তির বদৌলতে বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয়। বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন এবং আধুনিকায়ন সহজতর করেছে মানুষের জীবনকে। মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, যোগাযোগ তথা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক সুফল পাচ্ছে। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সহায়তায় ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্নের অগ্রযাত্রায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল উপকরণ কিংবা বিষয় হচ্ছে সন্দেহাতীতভাবে ইন্টারনেট। বর্তমানে ইন্টারনেটবিহীন এক সেকেন্ডও কি চিন্তা করা যায়!</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের জন্য বিনা খরচে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ের (সাবমেরিন কেবল) সঙ্গে সংযুক্তির প্রস্তাব ছিল। কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে, তৎকালীন বিএনপি সরকার </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">তথ্য ফাঁসের</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi"> অজুহাতে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে ১৯৯৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের শুরুতেই কৃত্রিম উপগ্রহনির্ভর ভি-স্যাট প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথম দেশে সবার জন্য উন্মুক্ত ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা হয়। তখন ব্যবহারকারীরা ডায়াল-আপ পদ্ধতিতে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হতো। শুরুতে শুধু ৬৪ কেবিপিএস ইন্টারনেট দিয়ে যাত্রা শুরু হয়, যার জন্য ভি-স্যাটের মাসিক ভাড়া ছিল ১০ হাজার মার্কিন ডলার। বিএনপি সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে প্রায় ১২ বছর পর ২০০৬ সালের ২১ মে সাবমেরিন কেবল সি-মি-উই-৪-এর সঙ্গে কক্সবাজার জেলা শহরের ঝিলংজা ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে যুক্ত হয় বাংলাদেশ, যার সক্ষমতা ৩০০ জিবিপিএস। পরে ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল সি-মি-উই-৫-এর সঙ্গে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে যুক্ত হয়, যা প্রথমবারের থেকে ছয় গুণ বেশি ১৮০০ জিবিপিএস সক্ষমতার। বাংলাদেশে ২০১২ সালে থ্রিজি এবং ২০১৮ সালে ফোরজি চালু হয়। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৬১ লাখেরও বেশি, যার মধ্যে মুঠোফোন ১১ কোটি ৪০ লাখের বেশি এবং ব্রডব্যান্ডে এক কোটি ২০ লাখের বেশি।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিটিআরসি গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা কিংবা থানা পর্যায়ে চার ধরনের লাইন্সেসের অনুমোদন দেয়। আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো এনটিটিএনের (ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক) সহায়তায় উল্লিখিত চার ধরনের প্রতিষ্ঠানকে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। পরে এই চার ধাপের ব্যবসায়ীরা গ্রাহক পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড সংযোগ প্রদান করে থাকেন। কিন্তু হতাশাজনক সত্য হচ্ছে, ব্রডব্যান্ড অবকাঠামোতে উপজেলা কিংবা থানা পর্যায়ের ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের নানা সীমাবদ্ধতা, সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমানে এ পেশায় দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। এ খাতে ইঞ্জিনিয়ার, কাস্টমার সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার, ফাইবার টেকনিশিয়ানসহ বিভিন্ন পদে দক্ষ কর্মীর দরকার হয়। বাংলাদেশের সাধারণ কিংবা ভোকেশনাল শিক্ষা কারিকুলামে বাস্তবমুখী এ ধরনের প্রযুক্তিগত কোনো বিষয় বা ডিসিপ্লিন এখনো চালু হয়নি। কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসব বিষয়ে কোর্স চালু করলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এর ফলে দক্ষ জনবলের অভাবে গ্রাহক পর্যায়ে গুণগত মানের ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ অনুযায়ী কোনো ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পপ, ম্যাক, ডিশ ব্যবসায়ী অর্থাৎ রিসেলার কিংবা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু দেশের কিছু অসাধু ইন্টারনেট ব্যবসায়ীর কারণে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় এর প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন বৈধ উপজেলা বা থানা পর্যায়ে লাইসেন্সধারী ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি অধিক মুনাফার আশায় অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা গ্রাহকদের যথাযথ ও গুণগত মানের ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছেন না। এতে একদিকে যেমন গ্রাহকরা ঠকছেন, অন্যদিকে প্রচুর রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে বেশির ভাগ আর্থিক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যাংকগুলো তথ্য-প্রযুক্তির বিভিন্ন খাতে অর্থ লগ্নি করলেও ইন্টারনেট সেবা খাতে আগ্রহী না। ফলে এখনো প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবে মাঠ পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড অবকাঠামো যথেষ্ট দুর্বল।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">গ্রাহক সচেতনতার অভাবেও ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দুই ধরনের সেবা গ্রাহকদের প্রদান করা হয়, তা হলো ডেডিকেটেড ও শেয়ারড। ইন্টারনেটজগতে ডাটা আদান-প্রদান হয় বিট এককে। অর্থাৎ ১ এমবিপিএস (মেগাবিট) হচ্ছে ১২৮ কেবিপিএসের (কিলোবাইট) সমান। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন গ্রাহক ডেডিকেটেড ৫ এমবিপিএস সংযোগ নেন, তিনি প্রতি সেকেন্ডে ৬৪০ (১২৮দ্ধ৫) কেবিপিএস করে ডাউনলোড কিংবা আপলোড ব্যান্ডউইডথ গতি পাবেন। অন্যদিকে শেয়ারড সংযোগগুলো বিভিন্ন রেশিওতে হয়। ১:৮ হলে ৮০ (৬৪০/৮) কেবিপিএস থেকে ৬৪০ কেবিপিএস পর্যন্ত ডাউনলোড ও আপলোড ব্যান্ডউইডথ গতি পাবেন। কিন্তু বেশির ভাগ গ্রাহক নিজের ব্যবহার চাহিদা অনুযায়ী ইন্টারনেট প্যাকেজ নিতে আগ্রহী নন। অনেক গ্রাহক ৫০০ টাকার ৫ এমবিপিএস নিয়ে অত্যধিক ডিভাইস ব্যবহার করতে চান। এর ফলে উপজেলা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা মুনাফাপ্রাপ্তি তো দূরের কথা, বরং বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান। ব্যান্ডউইডথ সীমাবদ্ধতার এই সুযোগটুকু অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা নিয়ে থাকেন। গ্রাহকদের নানা লোভনীয় প্যাকেজ বা অফার দিয়ে আকৃষ্ট করেন। এতে উপজেলা পর্যায়ের বৈধ লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা মুখ থুবড়ে পড়ছেন।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের চাহিদা বাংলাদেশেও সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রচুর শিক্ষিত বেকারের এই সুবিধা গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরাই গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গুণগত মানের নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা অব্যাহত রাখতে পারেন, যা ফ্রিল্যান্সিংয়ের মূল চালিকাশক্তি। এ খাতের যথাযথ ব্যবহার করে বেকার যুবকরা উপকৃত ও স্বাবলম্বী হতে পারে। এতে যেমন বেকারত্ব কমবে, তেমনি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা সম্ভব।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমানে বাংলাদেশে উপজেলা পর্যায়ে দুই হাজারেরও অধিক লাইন্সেসধারী ব্যবসায়ী রয়েছেন। যাঁদের বেশির ভাগই অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের অপকাণ্ড ও দক্ষ জনবল সংকটের কারণে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। সমস্যায় জর্জরিত ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় মুনাফা তো দূরের কথা, বিনিয়োগটুকু ফেরত পেলেই খুশি। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশে ২৮টি হাইটেক পার্কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে কিংবা চলমান রয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। যথাযথ ও সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়ে উপজেলা বা থানা পর্যায়ের লাইসেন্সধারী ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের ব্যাবসায়িক সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। যথাযথ হস্তক্ষেপ ও দিকনির্দেশনার ফলে একদিকে ব্যবসায়ীরা যেমন বাঁচবেন, অন্যদিকে গ্রাহকদের কাছেও গুণগত মানের ইন্টারনেট সেবা সহজলভ্য হবে। প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হবে, সরকারের রাজস্ব ও রেমিট্যান্স আয় বাড়বে এবং জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হ্রাস পাবে।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনেক সমস্যা-সংকটের পরও আমরা আশায় বুক বাঁধি। বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকা ইন্টারনেট প্রযুক্তির আওতায় এসে একদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও সুযোগ্য নেতৃত্বে ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি স্মার্ট বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে নেতৃত্বের আসন নেবে। বাংলাদেশ রূপান্তরিত হবে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে। বিশ্বের বুকে তথ্য-প্রযুক্তিসহ সব খাতে বাংলাদেশ হবে একটি রোল মডেল।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সাবেক প্রভাষক, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ, উখিয়া, কক্সবাজার</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"> </p> <p style="margin-bottom:13px"> </p>