<p>গাইবান্ধা সরকারি কলেজ মিলনায়তন ততক্ষণে কানায় কানায় পূর্ণ। সহস্রাধিক শিক্ষার্থী স্বাগত জানান কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনকে। সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছেন তাঁর কথা শুনবেন বলে। গত ৬ নভেম্বর শনিবার কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যপক মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আসাদুল ইসলাম, কবি সরোজ দেব, অধ্যাপক আবদুর রশিদ, অধ্যাপক আনিসা আকতার বেগম চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসিফ সরকার ও কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কামাল হোসেন। শুরুতে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন সোমা সেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন শিক্ষক এ বি এম জিল্লুর রহমান ও শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম তালুকদার তুলনা। </p> <p>ইমদাদুল হক মিলন মহান মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানিদের নির্মম বর্বরতার ইতিহাস তুলে ধরেন। কয়েকজন মানুষের আত্মত্যাগের ঘটনা তুলে ধরেন। পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতার কথা শুনে সবার চোখে ততক্ষণে ঘৃণার অশ্রু জমা হয়েছে। পিনপতন নীরবতার মধ্যে তখন শোনা যাচ্ছিল এই প্রজন্মের তরুণদের কান্নার শব্দ। তিনি বলেন, এই দেশটিকে হানাদারমুক্ত করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যাঁরা অকাতরে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, সেই বীর সেনাদের ইতিহাস জানতে হবে। তাঁদের স্মরণ করে নতুন প্রজন্মকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে।</p> <p>ইমদাদুল হক মিলন আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের  উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। তরুণদের শুভ কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।</p> <p>এদিন বিকেলে ইমদাদুল হক মিলন স্থানীয় কমিউনিটি রেডিও সারাবেলার চাইল্ড ক্লাবের শিশুদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার মাহফুজ ফারুক। একই দিন সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে কালের কণ্ঠ শুভসংঘের প্রথম জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p>সম্মেলন উদ্বোধন করেন ইমদাদুল হক মিলন। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন। জেলা শুভসংঘের সভাপতি তৌহিদা মাহমুদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, কবি সরোজ দেব ও জেলা সম্পাদক লতা সরকার। সব শেষে আনন্দময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।</p> <p>এর আগে শুক্রবার সকালে দুটি নৌকায় করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ব্রহ্মপুত্রঘেরা চরে যান শুভসংঘের বন্ধুরা। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার দুর্গম চর কোচখালীতে দুই অসহায় নারীর হাতে ছাগল, হাঁস-মুরগি ও নগদ অর্থ তুলে দেন ইমদাদুল হক মিলন। রাহেলা বেওয়া (৬৮) ও রেহেনা বেওয়া (৭০) নামে ওই দুই নারী সহায়তা পেয়ে আবেগাপ্লুত হন। তাঁরা বলেন, ‘চরোত আসিয়া বকরি, মুরগি দিলেন তোমরা। কাঁইয়ো খোঁজ নেয় না, কিভাবে দিন গুজরান করি! আল্লাহ তোমাঘরের ভালো করুক।’</p> <p>একই সঙ্গে চরের দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫০ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয় শিক্ষা উপকরণ। শিশুদের উল্লাস আর চিৎকারে অন্য রকম ভালো লাগা ছড়ায় গ্রামটিতে। স্থানীয় বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র তৌহিদ বলল, ‘খাতা-কলম কিনব্যার পাইনে, পড়ালেখায় খ্যুবে সমস্যা। কয়েকটা দিন ভালো যাবে। স্কুলোত যায়্যা সগলেক দেখাপ্যার পামো।’</p> <p>ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশনায় করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে শুভসংঘ। আজও সেই মানুষটির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মানুষের সুখ-দুঃখের খবর নিতে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে এসেছি। আগামীতেও আসব।’</p>