<p>শামসেল হক চিশতিকে সারা দেশের মানুষ ‘চিশতি বাউল’ নামেই চেনে। ‘বেহায়া মন’, ‘যদি থাকে নসিবে’, ‘নিবো না খবর’সহ তাঁর বেশ কয়েকটি গান মানুষের মুখে মুখে ফেরে। শ্রোতামহলে তাঁকে নিয়ে উৎসাহের কমতি নেই। ঢাকা ফোক ফেস্টিভালসহ বিভিন্ন দেশের ফোক গানের আসরে গিয়েও গেয়েছেন তিনি। প্রিয় বাউলকে মাছরাঙা টেলিভিশনের রিয়ালিটি শো ‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা’তে প্রতিযোগীর ভূমিকায় দেখে চমকে উঠেছেন অনেকেই! যিনি তিন বছর আগে ভারতের জি বাংলার ‘সা <img alt="" src="http://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Print Version Online/print /2022/September/21-09-2022/121/1-0_kalerkantho-2022--21-pi.jpg" style="float:left; height:466px; margin:12px; width:300px" />রে গা মা পা’র মঞ্চে অতিথি শিল্পী হয়ে উঠেছিলেন, সেই বাউল রিয়ালিটি শোতে প্রতিযোগী হওয়ায় মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। এর মধ্যে তাঁর পারফরম্যান্সের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেটা দেখে অনেকেই রিয়ালিটি শো কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করেছেন। কেউ কেউ বিচারকমণ্ডলীদের নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। গতকাল সারা দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরগরম ছিল এই ইস্যুতে।</p> <p>আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দেওয়া এই শিল্পী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা হচ্ছে সেটা বাড়াবাড়ি। আমি কোনো সমস্যায় পড়ে প্রতিযোগিতায় যাইনি। অনেক দিনের শখ ছিল যেকোনো রিয়ালিটি শোতে গিয়ে নিজের গানগুলো সবাইকে শোনাব। অনেকেই আমার গান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভুল সুরে গেয়ে যান,   এ কারণে নিজেই প্রতিযোগী হয়ে নিজের গান গেয়েছি। ভবিষ্যতে তরুণরা যেন সঠিকভাবে আমার গান তুলতে পারে।’</p> <p>চিশতি বাউলের ‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা’য় অংশ নেওয়ার বিষয়ে রিয়ালিটি শোটির পাণ্ডুলিপি রচয়িতা ও মাছরাঙার সহব্যবস্থাপক (প্রগ্রাম ও ক্রিয়েটিভ ইনচার্জ) রুম্মান রশীদ খান বলেন, ‘তাঁর মুখেই শুনেছি, তিনি আগের একটি সিজনেও নাকি এই প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছিলেন। তবে অডিশনে হাজির হননি। তিনি ভীষণ জনপ্রিয় ও গুণী একজন শিল্পী। এবার প্রাথমিক অডিশনে ঢাকা জোনের ২০ হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে তাঁকে দেখে আমরা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তাঁর গান বিচার করার মতো কেউ তো নেই। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা, প্রতিযোগিতা করবেনই। পরে স্টুডিও রাউন্ডে মূল বিচারকরা পড়ে গেলেন মহা বিপদে, বললেন, ‘আপনার গান আমরা কিভাবে জাজ করব, আমরা তো আপনারই ভক্ত।’ চিশতি বাউল তখন বললেন, ‘আমার অনেক দিনের শখ...।’ অবশেষে শফি মণ্ডলসহ অন্য বিচারকরা বললেন, ‘যেহেতু প্রতিযোগিতার নিয়মে বলা নেই কোনো জনপ্রিয় শিল্পী অংশ নিতে পারবেন না, বয়সের সীমাও নেই, তাই তাঁকে বাদ দেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই।’ চিশতি বাউল তখন জানিয়েছিলেন, বিচারকরা যেভাবে জাজ করবেন তিনি সেটাই মেনে নেবেন।</p> <p>ফেসবুকে অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ হয়তো চিশতি বাউলের নাম ব্যবহার করে প্রচারণায় এগিয়ে রাখতে চেয়েছে রিয়ালিটি শোটিকে। এ প্রসঙ্গে রুম্মান বলেন, ‘তাঁর সম্মানহানি কিংবা তাঁর নাম বিক্রি করে মাছরাঙা কর্তৃপক্ষ কখনো কোনো প্রচার চায় না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমর্থনও করি না আমরা।’</p> <p>এখন নিজের বাসস্থান সাভারে আছেন ৫৭ বছর বয়সী চিশতি বাউল। রিয়ালিটি শোতে অংশ নিয়ে তিনি কোনো দোষ করেননি, এ কথা বারবার জোর দিয়ে বললেন। এও বললেন, ‘যতক্ষণ ওখানে ছিলাম আনন্দেই ছিলাম। সামনে আরো বেশ কয়েকটি পর্বে আমাকে দেখা যাবে।’</p> <p>গানের পাশাপাশি তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা চর্চা করেন। কৃষিকাজ করেন, দোকানদারিসহ আরো অনেক কাজ তাঁর। কোনো ধরনের আর্থিক সমস্যাও নেই। গান গেয়ে আয় করার জন্য তিনি কারো মুখাপেক্ষী হয়েও থাকেন না, নিজের গানের কথাতেই বিশ্বাস করেন, ‘যদি থাকে নসিবে, আপনি আপনি আসিবে।’</p> <p>মাছরাঙা টেলিভিশনে ‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা’র চতুর্থ আসর চলছে। এবারের সিজনে বিচারক হিসেবে আছেন বাউল শফি মণ্ডল, শাহনাজ বেলী ও আরিফ দেওয়ান। সারা দেশের ৫০ হাজারের বেশি প্রতিযোগী অংশ নিয়েছেন। সেখান থেকে বাছাই করে মূল পর্বে আছেন ১৮ জন শিল্পী। এর মধ্যে ছয়জন করে তিনটি গ্রুপে সাজানো হয়েছে স্টুডিও রাউন্ড। একটি গ্রুপে আছেন চিশতি বাউল।</p> <p> </p>