<p>২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশে মুক্তি পায় বলিউডের ছবি ‘ওয়ান্টেড’। সালমান খান অভিনীত ছবিটি ৫০টির বেশি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এরপর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পী, পরিচালক-প্রযোজক ও কলাকুশলীরা ভারতীয় ছবি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। কর্মবিরতির পাশাপাশি তখন তাঁরা সেন্সর বোর্ডের সামনে অবস্থান ধর্মঘটও করেন। আন্দোলনকারীদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন ভারতীয় ছবি আমদানিকারক ও মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। এরপর চার বছর ধরে ভারতীয় ছবি আমদানি বন্ধ ছিল। তবে এবার ভিন্ন সুর প্রযোজক-পরিচালকদের কণ্ঠে। তাঁরাই এখন ভারতীয় ছবি আমদানি করার বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তথ্যমন্ত্রীকে রাজি করিয়ে ২০২১ সালের শুরু থেকেই একই দিনে ভারত-বাংলাদেশে ছবি মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই তথ্য জানান পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার।</p> <p>তিনি বলেন, ‘চার বছর আগের আর এখনকার ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে অনেক তফাত। দেশীয় ছবি নির্মিত হচ্ছে না বললেই চলে। একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে সরকার প্রেক্ষাগৃহ সংস্কার ও নতুন প্রেক্ষাগৃহ তৈরির জন্য যে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ দিতে যাচ্ছে, সেটা প্রেক্ষাগৃহ না থাকলে কোথায় ব্যয় হবে! সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমরা একমত হয়েছি ভারতীয় ছবি আমদানি করতে। প্রতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মুক্তি পাবে ছবিগুলো। তবে বছরে ১০টির বেশি নয় এবং দুই ঈদে কোনো ভারতীয় ছবি মুক্তি দেওয়া হবে না।’</p> <p>পরিচালক সমিতি শুধু নয়, প্রযোজক সমিতিও ভারতীয় ছবি আমদানির ব্যাপারে এখন নমনীয়। সম্প্রতি বিলুপ্ত হওয়া প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘একের পর এক হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় ছবির সংখ্যা বাড়ানো। যেহেতু দেশীয় ছবির সংখ্যা খুবই কম, তাই আমরাও চাই ভারতীয় ছবি আসুক। তবে সেটি যেন দেশীয় ছবির ক্ষতি না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ১৬ অক্টোবর হল খোলার আগে আমরা তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। তখনই বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে জানাই। তিনি আমাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। আশা করছি, আগামী বছরের শুরুতেই এটির বাস্তবায়ন হবে।’</p> <p>ভারতীয় ছবি আমদানির কারণে আন্দোলনকারীদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়া ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা এতটা খারাপ হওয়ার কারণ আমরাই। চার বছর আগে ভারতীয় ছবি আনার যে চেষ্টা করা হয়েছিল, সেটা বাস্তবায়িত হলে আজ হলের সংখ্যা ৫০টিতে কমে আসত না। আমি ভালোর পথ দেখাতে গিয়ে উল্টো মার খেলাম। এখন তো ঠিকই তাঁরা ভারতীয় ছবি আনতে বাধ্য হচ্ছেন! যা হোক, চার বছর পরে বুঝলেও তাঁদের জন্য শুভ কামনা।’</p> <p>ভারতীয় ছবি আনার ক্ষেত্রে প্রেক্ষাগৃহ মালিকরাই বেশি আগ্রহী। তাঁরা কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছেন। প্রদর্শক সমিতির সুদীপ্ত কুমার দাশ বলেন, ‘বলিউডের ছবি আমদানি করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সালমান খান বা শাহরুখ খানের মতো তারকার ছবির রেন্টাল অনেক। সেখানে আমাদের টিকিটের দাম বাড়ানোর সুযোগ দিতে হবে। তা ছাড়া এই ধরনের ছবি এক সপ্তাহ চালিয়ে লগ্নি করা অর্থ তোলা সম্ভব নয়। অনেক সময় দুই সপ্তাহ বা তিন সপ্তাহ ধরে চালাতে হবে। দেশীয় প্রযোজক-পরিচালকদের বিষয়টি বুঝতে হবে। পরিচালক সমিতি চেয়েছে, প্রতি সপ্তাহের তৃতীয় সপ্তাহে যেন ভারতীয় ছবি মুক্তি পায়। তাহলে ওদের কোনো ছবি যদি প্রথম সপ্তাহে বা দ্বিতীয় সপ্তাহে মুক্তি পায়, আমরা তখন কিভাবে একই দিনে মুক্তি দেব? আসল কথা হলো সিনেমা হল বাঁচাতে হলে উভয় পক্ষের নমনীয় হতে হবে। আমরা তো কখনোই চাইব না দেশীয় চলচ্চিত্র ধ্বংস করে ভারতীয় ছবির বাজার তৈরি করতে! আপাতত নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। যখন দেশীয় ছবি নির্মাণ বৃদ্ধি পাবে, তখন না হয় আবার ভারতীয় ছবি আমদানি বন্ধ করে দেব আমরা।’</p>
