<p>শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই হবে না, নিরাপদ খাদ্যেরও প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পরিবর্তে জৈব (অর্গানিক) পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এরই মধ্যে এসব জৈব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে দেশে-বিদেশে। মানুষ এখন বাজারে গিয়ে নিরাপদ খাদ্য, সবজি, ফলমূল খোঁজেন। তবে সার্টিফিকেশন না থাকা, বাজারব্যবস্থার সমন্বয় না থাকা, ভ্যালু চেইন তৈরি না হওয়া ও প্রয়োজনীয় জমি না পাওয়াসহ নানা সমস্যায় এ খাতের প্রয়োজনীয় অগ্রগতি হচ্ছে না।</p> <p>অর্গানিক পণ্যের উৎপাদন ও বাজার নিয়ে সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ অর্গানিক প্রডাক্ট মেন্যুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুজ্জামান মৃধা।</p> <p>তিনি বলেন, ‘মান সনদ না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না। অনেকে নিজ উদ্যোগে রপ্তানি করছে, এ জন্য তারা আমদানিকারক দেশের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মান যাচাই করে নিচ্ছে। নিজেদের মান সনদের ব্যবস্থা থাকলে গার্মেন্টের পাশাপাশি এ খাতেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মাটিতে প্রাচীনকাল থেকেই জৈব পদ্ধতিতে চাষ ও ফসল উৎপাদন হয়ে আসছিল। জমিতে যা ফলত সবই ছিল প্রাকৃতিক। কালের প্রক্রিয়াময়ে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অল্প জমিতে বেশি ফল ফলাতে মানুষ আধুনিক প্রযুক্তি, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার শুরু করে। এখন দেশে খাদ্য ঘাটতি নেই। উচ্চফলনশীল জাত ও উৎপাদনের ফলে জৈব পদ্ধতি প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। অতিমাত্রায় রাসায়নিকের ব্যবহার মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হতে থাকে। তবে আশার কথা হলো ক্যান্সার, ডায়াবেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মাঝে এখন খাদ্য সচেতনতা বোধ আবার ফিরে আসছে। এতে জৈব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা থাকায় কিছু উদ্যোক্তা জৈব পদ্ধতিতে কিছু অর্গানিক পণ্যের ফার্ম গড়ে তুলেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে আগে থেকেই যারা অর্গানিক পণ্য উৎপাদন করত। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও অর্গানিক পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে এ খাতের পণ্যের সঠিক দাম না পেয়ে অনেক উদ্যোক্তাই নিরুৎসাহ হচ্ছেন। লোকসানে উৎপাদন বন্ধ করে দিচ্ছেন। যাঁরা দেশে ও বিদেশে বাজারজাত করতে পারছেন তাঁরা ভালো দাম পাচ্ছেন। এতে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কিছু সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে অর্গানিকের বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা ঢুকে পড়েছে। তারা সব পণ্যকেই অর্গানিক নাম দিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে ভোক্তা ঠকছেন এবং অর্গানিক পণ্যের বাজারের আস্থা নষ্ট হচ্ছে, যা ভালো উদ্যোক্তাদের জন্য হুমকি।’ বাজারের এই বিশৃঙ্খলা থামাতে হলে সার্টিফিকেশনের প্রয়োজন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় উৎপাদন হচ্ছে কি না, তা মনিটর করে একটি মানসনদ দেওয়ার ব্যবস্থা করলে যেকোনো পণ্যকে অর্গানিক বলতে পারবে না। বাজারেও একটি সমন্বিত উদ্যোগ তৈরি হবে। এ ছাড়া বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। তিনি বলেন, যেহেতু অর্গানিক পণ্য তৈরি করতে জমি হতে হয় রাসায়নিকমুক্ত। সেহেতু ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে পতিত পড়ে থাকা জমিগুলো থেকে কিছু জমি উদ্যোক্তাদের দেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণও প্রয়োজন। কারণ এ খাতে পণ্য উৎপাদনে আলাদাভাবে দক্ষ হতে হয়। যে কেউ অর্গানিক পণ্য উৎপাদন করতে পারবে না। নির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকতে হবে। এরই মধ্যে একটি নীতিমালা বা মান তৈরি করা হয়েছে। সংসদে পাস হলে এর অধীনে অথরিটি হবে। যারা এসব বিষয় তদারকি করবে।</p> <p>সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রোকন মাহমুদ</p>