<p>পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার ভারত সীমান্ত এলাকা সোনাপাতিলা। গ্রামে নেই ইন্টারনেট সুবিধা। অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ মেলে না শিক্ষার্থীদের। তাই বাড়ির পাশে হাট-বাজারের মোবাইল ফোনের মেমোরি কার্ড লোডের দোকান থেকে দেশের জনপ্রিয় শিক্ষকদের ক্লাসের ভিডিও নিয়ে ঘরে বসে সুবিধামতো সময়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। বিনা খরচের এই অভিনব শিক্ষা কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে অফলাইন পাঠদান কার্যক্রম।</p> <p>আটোয়ারী উপজেলার কিছু তরুণ এর উদ্যোক্তা। করোনা পরিস্থিতিতে সোনাপাতিলার মতো পঞ্চগড়ের সীমান্ত এলাকাগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অফলাইন পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রম।</p> <p>স্থানীয় সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ, প্রাইভেটসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এতে বিপাকে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালু হলেও সীমান্ত এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক না থাকায় এই সেবা থেকে বঞ্চিত হয় শিক্ষার্থীরা। আটোয়ারীর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফজলুল করিমের নেতৃত্বে আব্দুস সোবহানসহ বেশ কয়েকজন তরুণ মিলে গড়ে তোলেন এআর আইটি সলিউশন। তাঁরা ওয়েবসাইট থেকে জনপ্রিয় শিক্ষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদানের ভিডিও ডাউনলোড করে বিনা মূল্যে তা মেমোরি কার্ডে ভরে দিতে শুরু করেন সীমান্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের। যোগাযোগ করেন প্রান্তিক এলাকার শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গেও। তাঁরা উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রতিটি হাট-বাজারের মেমোরি লোডের দোকানগুলোতে বিষয়ভিত্তিক ক্লাসগুলোর ভিডিও কন্টেন্ট সরবরাহ করেন। সেই ভিডিও মেমোরিতে নিয়ে ঘরে বসে সুযোগমতো মোবাইলে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। কেউ কেউ আবার মেমোরি কার্ড লাগিয়ে স্মার্ট টিভিতে দেখেও ক্লাস করছে এবং তা নোট করে নিচ্ছে।</p> <p>সোনাপাতিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী জেসমিন আক্তার বলে, ‘এখানে নেটওয়ার্ক সুুবিধা নেই। তাই আমরা অনলাইনে ক্লাস করতে পারি না। দোকান থেকে আমরা ক্লাসগুলো লোড করে বাড়িতে এনে সুবিধামতো সময়ে তা দেখে নিতে পারছি। একবারে বুঝতে না পারলে আবার দেখছি। এতে আমাদের কোনো খরচও হচ্ছে না।’</p> <p>আটোয়ারী সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী কাশফিয়া জামান শিফা বলে, ‘করোনায় আমাদের লেখাপড়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের পাঠ্য বইয়ে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা শিক্ষকদের সহায়তা ছাড়া বুঝতে পারি না। এ বিষয়গুলো আমরা অফলাইনে ক্লাস করে সহজেই বুঝতে পারছি।’</p> <p>সোনাপাতিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ইসাহাক আলী বলে, ‘যার মোবাইল নেই সে আমাদের সঙ্গে এসে ক্লাসগুলো দেখতে পারছে। কেউ আবার কপি বা শেয়ার করে নিচ্ছে।’</p> <p>সোনাপাতিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বেলাল হোসেন বলেন, ‘অফলাইন পদ্ধতি সীমান্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।’</p> <p>অভিভাবক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বাজার থেকে আমি মেমোরিতে করে ক্লাসের ভিডিও এনে দিই। আমার ছেলে সেটি স্মার্ট টিভির মাধ্যমে দেখে দেখে নোট করে নেয়। করোনায় ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ায় ঝিমিয়ে পড়েছিল। অফলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আবার তারা লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়েছে।’</p> <p>অফলাইন পাঠদান কার্যক্রমের উদ্যোক্তা আব্দুস সোবহান বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সমানতালে এগিয়ে নেওয়ার জন্যই আমরা এই উদ্যোগ নিই। শুরুতে শুধু মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ভিডিও সংগ্রহ ও বিতরণ করা হলেও ক্রমান্বয়ে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্যও এই সেবা চালু করব। আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে এই সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’</p> <p>এআর আইটি সলিউশনের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফজলুল করিম বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা এই অফলাইন কার্যক্রম শুধু করোনা পরিস্থিতিতেই নয়, সব সময়ের জন্য সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক। এতে প্রাইভেট ও কোচিংয়ের প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে। প্রান্তিক এলাকার শিক্ষার্থীরাও সমান তালে এগিয়ে যাবে।’</p> <p>জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আকতার বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছে। এটি পুরো জেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’</p>