<p>ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাত হানার প্রায় দুই মাস পরও সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কলিমাখালী গ্রামের ৬৫টি পরিবার তাদের ভিটাবাড়িতে ফিরতে পারেনি। তারা ঝড়ের আগের দিন থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে।</p> <p>আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী জানান, প্লাবিত এলাকা থেকে পানি সরে যায়নি। এ কারণে কলিমাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৩টি পরিবার, নাসিমাবাদ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে ২৭টি পরিবার ও নাসিমাবাদ মাদরাসায় ১৫টি পরিবার গাদাগাদি করে বসবাস করছে। এদের মধ্যে শিশু, বৃদ্ধা ও প্রতিবন্ধী রয়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও রয়েছে। পানিবন্দি গ্রামগুলোর বেশির ভাগ বাড়িতে মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। তারা বাড়ির উঁচু স্থানে বাঁশের মাচা করে তার ওপরই থাকছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।</p> <p>স্থানীয় সাংবাদিক ডা. শাহজাহান হাবিব জানান, চারদিকে অথই পানি। অথচ সুপেয় পানির জন্য মানুষের হাহাকার চলছে। দুর্গম এসব এলাকায় মানুষের পানি বহন করে বাড়ি নিয়ে যাওয়া নিত্যসংগ্রাম। প্রায় দুই মাস এলাকার কেউ মিষ্টি পানিতে গোসল করতে পারেনি।</p> <p>সড়কে সাত স্থানে ভাঙন</p> <p>আশাশুনির সাতটি স্থানে রাস্তার ওপর দিয়ে খোলপেটুয়া নদীর স্রোত বইছে। চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে। এদিকে আম্ফানের দুই মাস পার হলেও রাস্তার ওপর দিয়ে তীব্র স্রোত বয়ে যাওয়ায় ভয়ে লোকজন বাইরে বের হচ্ছে না।</p> <p>আশাশুনি সদরের পিকআপ ভ্যানচালক আরিজুল ইসলাম জানান, খুলনার কয়রা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, কালীগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে আশাশুনি-ঘোলা-ত্রিমোহনী সড়ক। সড়ক ও জনপথ বিভাগের আশাশুনি উপজেলার মাড়িয়ালা থেকে ঘোলা-ত্রিমোহনী পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের সাতটি স্থান ভেঙে গেছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের রাত থেকে আজও সড়কের ওপর দিয়ে জোয়ার-ভাটা চলছে। এর মধ্যে তিনটি স্থানে গভীর হয়ে যাওয়ায় সেখানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে বানভাসি মানুষ যাতায়াত করছে। দীর্ঘ সময় সড়ক দিয়ে বাস, ট্রাক, পিকআপ, অ্যাম্বুল্যান্সসহ পথচারীরা যাতায়াত করতে পারছে না। আম্ফানের পর সড়ক ও জনপদ বিভাগ সড়কটি সংস্কারের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।</p> <p>আশাশুনির একটি বেসরকরি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আব্দুল হাদি বলেন, সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে আশাশুনির দক্ষিণাঞ্চলে দুর্গত মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী, জরুরি ওষুধ ও সুপেয় পানি পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শ্রীউলা ইউনিয়নের মাড়িয়ালা বাজার থেকে প্রতাপনগর ইউনিয়নের ঘোলা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের ওপর দিয়ে জোয়ার-ভাটা চলছে।</p> <p>শ্রীউলা ইউনিয়নের কোলা গ্রামের আব্দুল লতিফ, সুজা উদ্দীন মোড়ল, কলিমাখালী গ্রামের আক্কাস আলী ও দীনবন্ধু বলেন, কলিমাখালী গ্রামের মাখন দর্জির বাড়ির সামনের সড়কের প্রায় ২০০ হাত, ওয়জুদ্দীন সরদারের বাড়ির সামনের ৫০ হাত, ধনঞ্জয় মণ্ডলের বাড়িসংলগ্ন ২০ হাত, দীনবন্ধু স্বর্ণকারের বাড়িসংলগ্ন ২৫ হাত, কালীপদ মণ্ডলের বাড়িসংলগ্ন ২৫ হাত ও ঘোলা গ্রামের আলিমের দোকানসংলগ্ন প্রায় ২৫ হাত রাস্তা ভেঙে গেছে। আব্দুস সবুর সরদারের বাড়িসংলগ্ন প্রায় ৩৫ হাত, আব্দুস ছাত্তার সরদারের বাড়িসংলগ্ন ৪০ হাত, সিরাজুল গাজীর বাড়ির সামনে ২৫ হাত ও কলিমাখালী গেটের সামনে আকিমুদ্দীনের বাড়ির সামনে প্রায় ৩০০ হাত রাস্তা ভেঙে গেছে। গ্রামবাসী মাখন দর্জি, ওয়জুদ্দীন ও ধনঞ্জয়ের বাড়ির সামনে স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় ২৭০ হাত বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছে।</p> <p>শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল জানান, আম্ফানে বাঁধ ভেঙে খোলপেটুয়া নদীর পানি সড়কের ওপর দিয়ে বইছে।</p> <p>আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সড়ক সংস্কারের বিষয়ে কথা হয়েছে। সড়কের ওপর থেকে পানি না সরা পর্যন্ত তারা কিছু করতে পারছে না। বাধ্য হয়েই অনেকে সড়কের ভাঙা স্থান দিয়ে চলাচল করছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনেকে দূরের এলাকা ঘুরে বিকল্প সড়কপথ ব্যবহার করছে।</p> <p>স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম ডা. রুহুল হক বলেন, ‘আম্ফানে ভেঙে যাওয়া রাস্তা সংস্কারের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেছে। তবে রাস্তার ওপর থেকে পানি কমে না যাওয়া পর্যন্ত সমস্যা হবে। আশাপাশে মাটি না থাকায় সড়ক সংস্কারে ভোগান্তি বেড়েছে।</p>