<p>ধান কাটা শ্রমিক সংকটে হাওরের হাজারো গৃহস্থ যখন দিশাহারা তখন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছেন না। তাঁরা হাওরে যেতে না পেরে ছটফট করছেন। বেকার হয়ে বাড়িতে দিন কাটাচ্ছেন।</p> <p>গতকাল শনিবার মুঠোফোনে কথা হয় হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার গৃহস্থ তহিদুর মিয়া, বাবুল, মহিবুল, মতিন ও রঞ্জুর সঙ্গে। তাঁরা জানান, তাঁদের এলাকায় জমির আগাম জাতের বোরো ধান এখনই কাটার সময়। করোনার কারণে ধানকাটা শ্রমিক সংকটে পড়েছেন তাঁরা। বাবুল বলেন, ‘সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এ সময় দল বেঁধে শ্রমিকরা আমাদের এখানে আসে।’ আরেক গৃহস্থ তহিদুর মিয়া বলেন, ‘শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের নন্দলালপুর গ্রাম থেকেই হাজারো শ্রমিক এ সময় আমাদের এখানে ধান কাটতে আসে। কিন্তু এবার করোনার আতঙ্কে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। এ জন্য শ্রমিক সংকটে তাঁরা এখন দিশাহারা।’</p> <p>এদিকে নন্দলালপুর গ্রামের ফুলমিয়া, বাবু মণ্ডল, আফছার প্রামাণিক, মালেক মণ্ডল ও রহিম মণ্ডল জানান, প্রতিবছর এ সময় ধান কাটতে তাঁরা সিলেট, হবিগঞ্জসহ হাওরের বিভিন্ন গ্রামে যান। ফুলমিয়া বলেন, ‘শুধু নন্দলালপুর গ্রাম থেকে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার শ্রমিক হবিগঞ্জে ধান কাটতে যান। এ জন্য শীতের সময় আমাদের চুক্তিবদ্ধ হতে হয় গৃহস্থের সঙ্গে। করোনা নিয়ে এমন বিপাকে পড়তে হবে আমরা ধারণাও করতে পারিনি।’</p> <p>গতকাল শনিবার নন্দলালপুর গ্রামে গেলে শ্রমিকরা জানান, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও থানা থেকে তাঁদের হবিগঞ্জ ও সিলেটে যাওয়ার জন্য একটি ছাড়পত্র দিলে ভালো হতো।</p> <p>এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. শামুজ্জোহা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে খুব শিগগির উপজেলা কৃষি অফিসারের সঙ্গে বসা হবে। ফসল ঘরে তুলতে শুধু ধানকাটা শ্রমিকদের ছাড়পত্র দিয়ে সেখানে পাঠানো যায় কি না সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’</p> <p>অন্যদিকে করোনার প্রভাবে সারা দেশের মতো ভূরুঙ্গামারীর জনজীবনও স্থবির হয়ে পড়েছে। অঘোষিত লকডাউনের কারণে শ্রমজীবী মানুষের হাতে কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই। নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরাও ধুঁকছে এ সমস্যয়। কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষের বিপরীতে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না।</p> <p>উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে এ পর্যন্ত তিন দফায় ৫৪.৩ টন চাল ও দুই লাখ ১৯ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনগুলো ত্রাণ বিতরণ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়, যা এ অঞ্চলের গরিব ও কর্মহীন মানুষের তুলনায় অনেক কম।</p> <p>জয়মনিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান জানান, যে পরিমাণ বরাদ্দ পেয়েছি, তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। এ জন্য ত্রাণ বিতরণে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিলাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল হক শাহিন শিকদার বলেন, কর্মহীন মানুষদের খাদ্য সহায়তার জন্য এত চাপ যে সামাল দিতে বাড়িতে থাকাই এখন দায় হয়ে পড়েছে।</p>