<p>পঞ্চগড়ে ট্রেনের আগাম ফিরতি টিকিট পেতে সাধারণ যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আগের রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও সাধারণ মানুষ টিকিট পাচ্ছে না। পঞ্চগড়ের মানুষের জন্য বরাদ্দ সামান্য কিছু টিকিটও চলে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ কালোবাজারি চক্রের হাতে। পরে এসব টিকিট তারা দুই-তিন গুণ দামে বিক্রি করে দিচ্ছে।</p> <p>পঞ্চগড় থেকে ঢাকা নিয়মিত তিনটি ট্রেন চলাচল চলাচল করে। সকাল ৭টা ২০ মিনিটে দ্রুতযান এক্সপ্রেস, দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস এবং রাত ৯টায় একতা এক্সপ্রেস পঞ্চগড় থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এবারই প্রথম একসঙ্গে তিনটি ট্রেনের সেবা পাচ্ছে পঞ্চগড়ের মানুষ। তবে আসনসংখ্যা খুবই কম। দ্রুতযান এক্সপ্রেসে শোভন চেয়ার ৯২টি, এসি চেয়ার ২০টি; এসি সিট ১৪টি, পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে শোভন চেয়ার ২৩০টি, এসি চেয়ার ২৪টি ও এসি সিট ১৬টি এবং একতা এক্সপ্রেসে শোভন চেয়ার ৯২টি, এসি চেয়ার ২০টি ও এসি বার্থ পাঁচটি। এর মধ্যে আবার অর্ধেক অনলাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে। বাকি অর্ধেকের জন্য স্টেশনে প্রতিদিন লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনতে হয়।</p> <p>পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশনে গত ৩০ মে থেকে ধারাবাহিকভাবে ৮ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ঈদের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু করে রেল কর্তৃপক্ষ। সকাল ৯টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হলেও ভোর থেকেই লম্বা লাইন পড়ে যায়। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই তিনটি ট্রেনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু সে টিকিট সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায় না। কারণ আগের দিন থেকেই সংঘবদ্ধ কালোবাজারিদের ভাড়া করা লোকজন লাইনে সিরিয়াল নিয়ে থাকে। তাই সাধারণ মানুষ পর্যন্ত আসতে আসতেই টিকিট চলে যায় কালোবাজারি চক্রের হাতে। পরে তারা তিন গুণ দাম যোগ করে প্রতিটি টিকিট বিক্রি করে। পঞ্চগড়-ঢাকা শোভন চেয়ারের মূল্য ৫৫০ টাকা হলেও তারা তা দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করছে আর এসি চেয়ারের মূল্য এক হাজার ৩৫ টাকা হলেও তা বিক্রি করছে তিন হাজার টাকায়। আবার কেউ কেউ আগের রাত থেকেই সিরিয়াল নিয়ে পরদিন সকালে শুধু সিরিয়ালটিই বিক্রি করছেন পাঁচ শ থেকে এক হাজার টাকায়। সরাসরি শনাক্ত করার কোনো সুযোগ না থাকায় কালোবাজারি চক্রের সদস্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছে। টিকিট কালোবাজারি চক্রের হাতে চলে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট না পাওয়া মানুষজন। তারা এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।</p> <p>পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া থেকে আসা বৃদ্ধ ফজলে করিম বলেন, ‘ভোরে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এসেই দেখি সামনে দুই-তিন শ লোক দাঁড়িয়ে আছে। এরা সবাই স্থানীয়। সকাল ১১টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকার পর শুনলাম টিকিট শেষ। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে গেছে। এখন টিকিট না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’</p> <p>পঞ্চগড়ের বোদা বড়শশী এলাকার ফয়সাল আহকাম বাবু বলেন, ‘টিকিট সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। সব চলে যাচ্ছে কালোবাজারিদের হাতে। তারা রাত থেকেই নারী ও শিশুদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখে। তাদের মাধ্যমে টিকিট নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে। একদিকে স্টেশনে গিয়ে আমরা টিকিট পাই না, অন্যদিকে অনলাইনে সার্ভারেই ঢোকা যায় না।’</p> <p>কলেজছাত্রী জেরিন আক্তার জানান, এক শ্রেণির মানুষ প্রতিদিন এসে লাইনে দাঁড়ায়। তাদের টিকিট দিতে দিতে টিকিট শেষ। আমরা টিকিট পাই না। পরে তারা ওই টিকিট বাইরে তিন গুণ দামে বিক্রি করছে। বিষয়টি প্রশাসনের দেখা উচিত।</p> <p>মাহমুদুল হাসান নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফিরতি টিকিটের জন্য ভোরে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখনো আমার সামনে এক শ লোক আছে। অথচ টিকিট শেষ। আমার মতো অনেককেই টিকিট না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। স্থানীয় কিছু মানুষের জন্য আমরা টিকিট পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তারা আগে থেকেই কায়দা করে সিরিয়াল নিয়ে থাকে। তাদের কাছে টিকিটপ্রত্যাশীরা জিম্মি।’</p> <p>পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. মোশারফ হোসেন বলেন, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে আগাম টিকিট দেওয়া হয়। যারা লাইনে থাকে তারাই টিকিট পায়।’</p> <p>পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এহতেশাম রেজা বলেন, একটি চক্র লোকজনকে দিয়ে টিকিট কিনে তা বাড়তি দামে বিক্রি করছে বলে আমরাও অভিযোগ পেয়েছি। নজর রাখা হচ্ছে।</p> <p> </p>