দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু আশঙ্কাজনক হারে বাড়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও কীটত্বত্তবিদরা।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৩৮৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ সময়ে রোগটিতে একজন মারা গেছে।
এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১০ হাজার ৬৮২ জন এবং মারা গেছে ৪৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে মে মাসের চেয়ে জুনে আক্রান্ত বেড়েছে তিন গুণ। মে মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭৭৩ জন, জুনে বেড়ে হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫১ জন। এর আগে জানুয়ারিতে এক হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন ও এপ্রিলে ৭০১ জন।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে, বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিন গুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচ গুণ এবং আগস্টে ১০ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
তিনি আরো বলেন, থেমে থেমে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা বেশি থাকায় এডিস মশা প্রজননের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
ধারণা করা হয়, এডিস মশা বৃদ্ধির এ ধারা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোলরুমের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, চলতি বছর মোট রোগীর মধ্যে আট হাজার ৩৫৫ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার। এর মধ্যে বরিশালে সর্বোচ্চ চার হাজার ৭৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। এরপর চট্টগ্রামে এক হাজার ৫৪৫ জন, ঢাকা বিভাগে (মহানগরের বাইরে) এক হাজার ৮১ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৪০ জন, খুলনা বিভাগে ৩৫৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৪৪ জন, রংপুর বিভাগে ২৬ জন ও সিলেট বিভাগে ৩০ জন এবং ঢাকা মহানগরে দুই হাজার ৩২৭ জন আক্রান্ত হয়েছে।
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর বেশির ভাগ ঢাকার হাসপাতালে।
সর্বোচ্চ ১৯ জন মারা গেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালগুলোতে। উত্তর সিটি করপোরেশনে মৃত্যু হয়েছে একজনের। ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ ১১ জন মারা গেছে বরিশাল বিভাগে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে চারজন, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে দুজন করে। ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ১৬ থেকে ৩০ বয়সীরা। এই সংখ্যা তিন হাজার ৯৪৭, যা মোট আক্রান্তের ৩৬.৯৫ শতাংশ। ১৬ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে আক্রান্ত দুই হাজার ২৪৯ জন বা ২১ শতাংশ। এদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সে আক্রান্ত আছে ৭২৫ জন, যা মোট রোগীর ৬.৭৮ শতাংশ।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে এক হাজার ২৩০ জন ডেঙ্গু রোগী। তাদের মধ্যে ৩২৩ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং ৯০৭ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যুও হয় ওই বছর।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তাতে সামনে ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে আরো হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে। এই বৃষ্টিপাতের কারণে এডিস মশার বিস্তার আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে। এডিস মশার সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীও বাড়বে।