রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে ঢুকতেই চোখে পড়ে ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান। ভেতরে নানা বয়সী নারী-পুরুষের আনাগোনা। কেউ পরিবার নিয়ে এসেছে, কেউ বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে। একপাশে ছায়াঘেরা বাগান, অন্য পাশে পাখির ডাক—সব মিলিয়ে মনোরম পরিবেশ।
রাজধানীর উন্মুক্ত পার্কগুলোতে মাদকসেবীদের উৎপাত
- সরেজমিন
নিজস্ব প্রতিবেদক

গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে সরেজমিনে চন্দ্রিমা উদ্যানে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
উদ্যানে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা মহসিন সর্দার বলেন, ‘শহরের কোলাহল থেকে একটু মুক্তির জন্য ছুটির দিনগুলোতে এখানে আসি। কিন্তু মাদকসেবীদের কারণে পার্কের পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। অনেক সময় এসবকে ঘিরে বখাটেদের আড্ডা জমে, ছিনতাই বা নারী উত্ত্যক্তের ঘটনাও ঘটে।’ মহসিন সর্দারের অভিযোগ, এই চিত্র শুধু চন্দ্রিমা উদ্যানে নয়, রাজধানীর অনেক উন্মুক্ত পার্কেই প্রায় একই অবস্থা।
সম্প্রতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার পর প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে। ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদসহ নিরাপত্তাব্যবস্থা কিছুটা জোরদার করা হয়েছে।
গতকাল বিকেলে সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, আগে যেখানে শতাধিক টং দোকান ছিল, এখন সেগুলোর বেশির ভাগই উধাও। মানুষের উপস্থিতিও তুলনামূলকভাবে কম। কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা সেখানে নৃত্য ও আবৃত্তির অনুশীলন করছিলেন।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে লাঠি হাতে এসব তরুণের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায়। তিনি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করছিলেন। পরে কয়েকজন কিশোরের কাছ থেকে কাগজে মোড়ানো কয়েক ‘পুরিয়া’ গাঁজা উদ্ধার করে তাদের উদ্যান থেকে বের করে দিতে দেখা যায়।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রশাসনের নজরদারির ফাঁক গলে এখানেও চলছে মাদক সেবন। কথিত সাধুরা সিদ্ধির নামে প্রকাশ্যে গাঁজা খায়। আশপাশের এলাকা থেকে অনেক কিশোর গাঁজা খেতে এখানে আসে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে পালাক্রমে এই তদারকি চালিয়ে যাচ্ছি।’
স্থানীয় বাসিন্দারা বলে, এসব উদ্যানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। প্রশাসনের উদাসীনতায় এগুলো এখন মাদকসেবী ও বখাটেদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। উন্মুক্ত পার্কগুলোতে নারী উত্ত্যক্ত, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ বাড়ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে উল্টো হামলার শিকার হয়।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দায়িত্বরত এক আনসার সদস্য বলেন, “রাজধানীর বেশির ভাগ পার্কের অবস্থা প্রায় একই। তবে সোহরাওয়ার্দীতে মাদক সেবনের ‘শিল্পচর্চা’ হয় বললে ভুল হবে না। এখানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীও যুক্ত। আবার বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় মাদক ব্যবসাও চলে। আমরা চাইলে কিছু করতে পারি না। সঠিক ব্যবস্থা নিতে হলে ম্যাজিস্ট্রেট নামাতে হবে।”
রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকায় থাকা ছোট্ট মতিঝিল পার্কে গিয়ে দেখা যায়, পরিবেশ নোংরা, ইটের চত্বরজুড়ে কয়েকটি বেঞ্চ বসানো। পার্কে প্রবেশ করতেই গাঁজার গন্ধ। বসার জায়গাগুলো দখল করে আছে মাদকসেবীরা। সেখানে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী ইয়াসিন পারভেজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য মাঝেমধ্যে এখানে আসি। কিন্তু গাঁজার গন্ধে টেকা দায়। মনে হয়, পার্কটা যেন মাদকসেবীদের জন্যই তৈরি।’
ইয়াসিন পারভেজের অভিযোগ, পুলিশি টহল থাকলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা দেখা যায় না। কোনো বড় ঘটনা ঘটলেই সাময়িক অভিযান চলে, পরে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায় সবকিছু।
সম্পর্কিত খবর

শাহজালালে প্রতিজন যাত্রীর সঙ্গে দুজন সঙ্গী প্রবেশের নির্দেশনা
নিজস্ব প্রতিবেদক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগমন ও বহির্গমন প্রতিজন যাত্রীর সঙ্গে সর্বোচ্চ দুজন সঙ্গী প্রবেশ করতে পারবেন—এমন নির্দেশনা জারি করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এই নির্দেশনা আগামী রবিবার (২৭ জুলাই) থেকে কার্যকর হবে। বিমানবন্দর এলাকার ডিপারচার ড্রাইভওয়ে ও অ্যারাইভাল ক্যানোপিতে যাত্রীপ্রতি সর্বোচ্চ দুজন ব্যক্তি ভেতরে প্রবেশের অনুমতি পাবেন।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক রাখা, যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়, বিমানবন্দর এলাকায় আসা সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল ও কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
যানজট ও নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের পদক্ষেপকে জরুরি বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিমানবন্দর সূত্র বলছে, প্রয়োজনে এই নিয়ম আরো কড়াকড়ি করা হতে পারে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ পরিচয়পত্র রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনার মামাতো ভাই হিরা কারাগারে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার আমির হোসেন হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামাতো ভাই শেখ ওয়ালিদুর রহমান হিরাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালত এই আদেশ দেন।
এদিন হিরাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক মো. মাসুদ রানা তাঁকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

দেড় দশকে ‘আওয়ামী সন্ত্রাসে’ নিহতদের তালিকা তৈরির নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের ‘সন্ত্রাসী’ হামলা এবং তৎকালীন ‘সরকারের নির্দেশে’ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বাবা মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ, ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ এবং মামা মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই নির্দেশ দেন।
সাক্ষাতে আবরার ফাহাদের পরিবার দাবি জানায়, আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের তালিকা তৈরি করে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। একই সঙ্গে আবরার হত্যা মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে সরকারের উদ্যোগ চান তাঁরা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা পুরো জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। এ ঘটনার বিচার অবশ্যই শেষ হবে। গণ-অভ্যুত্থানের আগের ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ও তাদের সংগঠনের হাতে যারা প্রাণ হারিয়েছে, তাদের প্রতিটি ঘটনার সঠিক তদন্ত হবে। তৎকালীন সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে, সেগুলোও তদন্তের আওতায় রয়েছে।
সাক্ষাৎকালে মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ বলেন, ‘দেশের স্বার্থে কথা বলার কারণেই আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অসম পানিবণ্টনের বিরুদ্ধেও সে কথা বলেছিল। আজও তার মা ছেলের জন্য কান্না করে।

হাসিনার কার্যালয়ের ১৫ চালককে রাজউকের প্লট
- রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান!
নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ের ১৫ চালককে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঝিলমিল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ১৫ চালককে প্লট দেওয়া হয়।
গত বুধবার কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে এই অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। গতকাল সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানান।
দুদক সূত্র জানায়, রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে নানা দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ঝিলমিল প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার ক্ষেত্রে চার শ্রেণিতে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বরাদ্দের ক্ষেত্রে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে চিঠি দিলে রাজউক তা বাস্তবায়ন করে। ওই প্রকল্পে ১৩/এ ধারার আওতায় বিভিন্ন সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২-এর গাড়িচালক, বিশেষ সহকারীর গাড়িচালক, সহকারী একান্ত সচিব-১-এর চালক, একান্ত সচিব-১ ও ২-এর চালক, প্রটোকল অফিসারের চালক, মুখ্য
সচিবের চালক, চিফ ফটোগ্রাফারের চালকসহ প্রায় ১৫ জন চালককে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।
তবে এসআরও এবং রাজউক বিধিতে অসামান্য অবদানের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া পাওয়া যায়নি। প্লট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের কোন কোন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রয়েছে তার উল্লেখ পাওয়া যায়নি।