রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ উত্তরা শাখার প্রাথমিক ভবনটি এখন ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। এক দিন আগেও যে ভবনটি শিশু শিক্ষার্থীদের কলহাস্য-গুঞ্জনে মুখর ছিল, সেখানে পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিসের স্তূপ জমে আছে। পোড়া গন্ধে বাতাস ভারী। চারদিকে ছড়িয়ে আছে ছিন্নভিন্ন বই-খাতার ছাই আর আধপোড়া জঞ্জাল।
সরেজমিন মাইলস্টোন
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছিন্নভিন্ন বই-খাতা স্বজনদের হাহাকার
শরীফ শাওন

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, দুর্ঘটনার দ্বিতীয় দিনও স্কুল ক্যাম্পাসের বাতাস ভারী হয়ে আছে পোড়া গন্ধে। সেই গন্ধে মিশে আছে দুর্ঘটনায় হতাহত শিশুদের কান্না, আতঙ্ক আর অসমাপ্ত পাঠ। থমথমে পরিবেশের মধ্যে শুধু নিঃশব্দে কান্না করে যাচ্ছেন কেউ কেউ।
ভবনের সামনের খোলা জায়গায় পানি লেগে স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়ে আছে আংশিক পোড়া বই, আইডি কার্ড ও ব্যাগের টুকরা। এসবের ভেতর নিখোঁজ সন্তানদের চিহ্ন খুঁজে ফিরছেন অভিভাবকরা। কেউ পেয়েছেন সন্তানের ব্যবহৃত বই, কেউ নোটখাতা, আবার কেউ আইডি কার্ডের টুকরা।
এমন একজন অভিভাবক রাবেয়া খাতুন। মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বই-খাতাগুলো নিয়ে দেখছিলেন তিনি। হঠাৎ চিকার দিয়ে বলেন, ‘এটা আমার মেয়ের ব্যাগ...আর এটা আমার মেয়ের লেখা। ওর খোঁজ তো পাইলাম না।
রাবেয়া খাতুনের ভাই সাগর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাইসা মণি তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে দুর্ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ। ক্যাম্পাসসহ রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে খুঁজেও তার সন্ধান পাইনি। তাই আজ (মঙ্গলবার) আবার এসেছি। একটি ছেঁড়া খাতায় তার হাতের লেখা আর ব্যবহৃত ব্যাগ দেখে শনাক্ত করতে পেরেছি।’
স্কুল ক্যাম্পাসের চারপাশে নিরাপত্তা ও সহায়তা দিতে কাজ করছিলেন কিছু স্বেচ্ছাসেবক। ভবনের সিঁড়ির পাশে তাঁরা দড়ি দিয়ে একটি করিডর তৈরি করেছেন, অভিভাবকরা যাতে ভেতরে ঢুকে শেষবারের মতো একবার চেনা পরিবেশ দেখে আসতে পারেন। সেখানে কাউকে দেখা যায় নিঃশব্দে দেয়ালের পোড়া দাগ ছুঁয়ে কাঁদছেন, কেউ চোখ বন্ধ করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে সয়ে নেওয়ার চেষ্টায় বুকচাপা কষ্ট।
স্বেচ্ছাসেবক রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেকে ভেতরে এসে কেবল দাঁড়িয়ে থাকেন, কেউ কিছু বলেন না। শুধু একটা বই বা আইডি খুঁজে নেন। আমরা তাঁদের সহায়তা করছি, কিন্তু কাকে কিভাবে সান্ত্বনা দেব, তা বুঝে উঠতে পারছি না।’
সকালে ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল অভিভাবকদের ভিড়। এর মধ্যে অনেকের দাবি, তাঁদের সন্তান এখনো নিখোঁজ। রাতভর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও তাদের সন্ধান মেলেনি। তাই সকাল হতেই ছুটে এসেছেন ক্যাম্পাসে। তাঁরা জানেন না, সন্তানের ভাগ্যে কী ঘটেছে। শেষ স্মৃতি হিসেবে সন্তানের ব্যবহৃত একটি বই, খাতা, আইডি কার্ড বা ব্যাগ স্মৃতি হিসেবে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাঁরা।
সম্পর্কিত খবর

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ
তত্ত্বাবধায়ক ও নারী আসনের নির্বাচন নিয়ে একমত হতে পারেনি দলগুলো
নিজস্ব প্রতিবেদক

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রশ্নে একমত হলেও এই সরকারের কাঠামো কী হবে, সেই প্রশ্নে একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ও নির্বাচন নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। এ ছাড়া মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং ন্যায়পাল নিয়োগে বাছাই কমিটি গঠনের বিষয়ে আপত্তি বহাল রেখেছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। এ তিনটি বিষয়ে আগামী দিনে সিদ্ধান্ত জানাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাঠামো, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান নিয়ে আলোচনা করা হয়। সংলাপে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সংলাপের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শেষ করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
কমিশন সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগের জন্য প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী, পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠিত হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে নীতিগতভাবে আমরা সবাই একমত। তবে গঠন পদ্ধতি নিয়ে কিছুটা মতভেদ রয়েছে। কমিশনসহ বিভিন্ন দলের পক্ষে একটি বাছাই কমিটির কথা হয়েছে। এখানেও সমাধান না হলে র্যাংক পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। আমরা এ জায়গায় একমত হতে পারিনি। আমরা চাই, এটি সর্বশেষ অপশন হিসেবে সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক। সংসদে আলোচনা হবে। এ নিয়ে নাগরিকরা মতামত দিতে পারবেন। সভা-সেমিনার হবে। সেখানেও সমাধান না হলে আমরা ত্রয়োদশ সংশোধনীর পক্ষে। তবে এ ক্ষেত্রে সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের সুযোগ থাকবে না।’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ আইনের মাধ্যমে করতে চাই। এতে আইনি ত্রুটি থাকলে সংশোধন সহজ হবে। কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সক্রিয় নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজন। তবে সেই নির্বাহী বিভাগকে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে রাখতে হবে। যত বেশি কিছু সংবিধানে যুক্ত করা হবে, তত বেশি সংশোধন জটিল হয়ে পড়বে। তাই আমরা চাই আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা হোক এবং সেই আইনে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন আনা সহজ হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু এখন পর্যন্ত ন্যায়পাল কোনো দিন ফাংশন করেনি, তাই আমরা প্রথমে চাই এটি প্রতিষ্ঠিত হোক। আইন যুগোপযোগী করে, দায়িত্ব ও ক্ষমতা স্পষ্ট করে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হোক। ন্যায়পালকে শুধু তদন্তের ক্ষমতা না দিয়ে তার প্রতিবেদনের বাস্তব প্রয়োগের জন্য আইন তৈরি করতে হবে।’
নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রথম ধাপে প্রস্তাব করেছি, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫টি আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। পরবর্তী নির্বাচনে তা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩০টি হবে। আমরা চাই নারীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হোক। কিন্তু সমাজের বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে চাই।’
সংস্কার কমিশনের সাত শর বেশি সুপারিশ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা ৬৫০টির মতো প্রস্তাবে একমত হয়েছি। বাকিগুলোর বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি বা সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছি। সব প্রস্তাব সনদে আসবে না। তবে যেগুলো মৌলিক, যেমন—সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত, সেগুলো অবশ্যই গুরুত্ব পাবে।’
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা একমত হয়েছি যে জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই হতে হবে। এখানে কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে প্রায় সবাই একমত, একমাত্র বিএনপি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। কমিশনের প্রস্তাবে দুজন বিচারপতি যুক্ত করা হয়েছে, যেন এককভাবে তৃতীয় দল বা অন্য কেউ ডিসাইডিং ফ্যাক্টর না হয়ে যায়। আমরা আশা করি, বিচারপতিরা নিরপেক্ষ থাকবেন এবং হর্স ট্রেডিংয়ের আশঙ্কা কমবে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির বক্তব্য, যদি ঐকমত্য না হয়, তাহলে বিষয়টি সংসদে পাঠানো হোক। তবে জামায়াতসহ বেশির ভাগ দল মনে করে, সংসদে পাঠালে তা আর সিদ্ধান্তে পৌঁছবে না। সংসদে পাঁচ-ছয়টি দল থাকে, অথচ এখানে ৩০টির বেশি দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।’
নারী আসন বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. তাহের বলেন, পিআর হলে সরাসরি নারী ১০০ আসনের পক্ষে জামায়াত। আর আগের নিয়মে হলে সংরক্ষিত ৫০ আসন ঠিক আছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে বেশির ভাগ দল একমত। আর বিএনপিসহ কয়েকটি দল দ্বিমত জানিয়েছে। বিএনপি চায়, সর্বশেষ অপশন হিসেবে সংসদে সমাধান করতে হবে। আমরা এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বিএনপিকে আহবান জানাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে না হলে জুলাই সনদে আমরা স্বাক্ষর করব না। এর আইনি ভিত্তি দিতে হবে; যেন পরবর্তী সরকার এর মূল চেতনা থেকে বিচ্যুত না হতে পারে।’ ন্যায়পাল নিয়োগে কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে তিনি বলেন, নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন হতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকী বলেন, ‘জুলাই সনদের এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু, উচ্চকক্ষ, পিআর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হলেও আমরা ঐকমত্য হতে পারিনি। আবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছি। আশা করছি, আমরা যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছি, কমিশন জুলাই সনদে সেই বিষয়গুলো যুক্ত করবে।’ তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে চার দিন আলোচনা হলেও এখনো ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি। প্রথম জায়গাটি ছিল বাছাই কমিটি করা। বাছাই কমিটি যদি সর্বসম্মত হতে না পারে র্যাংক চয়েস পদ্ধতি করা। সেখানে গণসংহতি আন্দোলনের নতুন প্রস্তাব, পাঁচ সদস্যের যে বাছাই হবে, সেখানে বিচার বিভাগ থেকে একজন প্রতিনিধি রাখা।
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বিতর্কমুক্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্র্যাকটিস করতে না পারলে গণতন্ত্র আবারও হুমকিতে পড়বে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে কমিশনের প্রস্তাবে বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টতা ত্রয়োদশ সংশোধনীর প্রত্যাবর্তনের প্রাথমিক ধাপ আকারে রূপ নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ে ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতির প্রবর্তন হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে একটি সুস্পষ্ট ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। এটি পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পাঠালে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার যে ঐকান্তিক প্রয়াস চলছে, তা অর্থহীন হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়কের প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ে পাঁচ সদস্যের কমিটি হয়েছে, সেই কমিটি নিয়ে আমাদের ঐকমত্য আছে। কিন্তু বাছাই কমিটি যে নাম সংগ্রহ করবে বিভিন্ন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল থেকে, সেখানে আমাদের আপত্তি। অনেক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নেই, আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের কোনো অবদান নেই। তাই এখানে শুধু সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল থেকে নাম সংগ্রহ করা যেতে পারে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাঠামো নিয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। আর চলমান নারী ৫০ আসনে আনুপাতিক হারে নির্বাচনের প্রস্তাব করেছি। সরাসরি নির্বাচনে নারী ১০০ আসনে নির্বাচন করা বিষয়ে বেশির ভাগ দলই একমত।’
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, ‘নারী ১০০ আসন চাই এবং সরাসরি নির্বাচন চাই। ইউপি বা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো তিনটা ওয়ার্ড মিলে সরাসরি নির্বাচন দেওয়া হোক।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান
মারণাস্ত্র ব্যবহার নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সাবেক আইজিপি মামুন
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলন দমন করতে মারণাস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো এবং ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবেই হয়েছিল বলে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। সম্প্রতি আদালতে দেওয়া তাঁর পাঁচ পৃষ্ঠার জবানবন্দির নথিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জবানবন্দিতে মামুন দাবি করেন, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব ও গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ ছিলেন অতি-উৎসাহী।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতিদিন রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় নিয়মিত বৈঠক হতো। সেখানে অংশ নিতেন দুজন সচিব, স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবির হারুন অর রশীদ, র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপির ডিজি, এনটিএমসির জিয়াউল আহসানসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। ওই বৈঠকগুলো থেকেই মূলত আন্দোলন দমনসংক্রান্ত সব ধরনের সিদ্ধান্ত ও পরামর্শ হতো।
মামুন তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, কোর কমিটির এক বৈঠকে আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ককে আটক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী তাঁদের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে মানসিক চাপ ও নির্যাতনের মাধ্যমে আন্দোলন প্রত্যাহারে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়া গণমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়।
তাঁর ভাষ্য, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান ডিবির তৎকালীন প্রধান হারুনকে ‘জনাব হারুন’ সম্বোধন করতেন।
সাবেক আইজিপি বলেন, “আন্দোলনকারীদের নজরদারিতে রাখা, ভয়ভীতি ছড়াতে গুলি চালানোর গোপন পরিকল্পনা হয়। তৎকালীন র্যাব মহাপরিচালক হারুন অর রশীদের নেতৃত্বেই হেলিকপ্টার মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনাও ছিল রাজনৈতিক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই আমাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে ‘লেথাল উইপন’ ব্যবহারের নির্দেশ এসেছে।
জবানবন্দিতে মামুন আরো দাবি করেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা মারণাস্ত্র ব্যবহারে পরামর্শ ও উসকানি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট বিকেলে একটি হেলিকপ্টার এসে পৌঁছায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে। আমি ওই হেলিকপ্টারে তেজগাঁও বিমানবন্দরে যাই এবং সেখান থেকে সেনানিবাসে আশ্রয় নিই।’
সাবেক পুলিশপ্রধান হিসেবে আন্দোলন দমনে গুলি চালিয়ে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় অনুতপ্ত বলেও জানান মামুন। তাঁর ভাষ্য, ‘আমি দুঃখিত, অনুতপ্ত। আমি চাই সত্য প্রকাশ হোক।’
আদালতের নথিতে বলা হয়, সম্প্রতি সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের শর্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামুনকে রাজসাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশে রাজনৈতিক পালাবদলের ধারাবাহিকতায় অনেক নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। মামুনই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা, যিনি আদালতে এমন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত


শোভাযাত্রা
