চলতি বছর হাজি সেবার নামে সরকারি খরচে হজে যাওয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। সেই সিদ্ধান্ত মানেনি ধর্ম মন্ত্রণালয়। কারণ এবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৩০ কর্মকর্তা হজে গেছেন। আবার হজ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনসহ হজযাত্রীদের সহায়তার জন্য সরকারি খরচে হজে গেছে ১০ সদস্যের একটি গ্রুপ।
বন্ধ হয়নি সরকারি খরচে হজ
হাজি সেবার নামে ব্যয় ১৫ কোটি টাকা
- * সরকারি খরচে হজে গেছেন ৪৫৩ জন * তালিকায় মন্ত্রী-সচিবের পছন্দের লোক
দেলওয়ার হোসেন

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা ও কয়েকজন মিডিয়াকর্মী নানাভাবে তদবির করে রাষ্ট্রীয় অর্থে হজে যাওয়ার দলে যুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মন্ত্রী তাঁদের পছন্দের কয়েকজনকে এই দলে যুক্ত করেছেন। এই তালিকায় আছেন একাধিকবার হজে যাওয়া ব্যক্তিরাও ।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, হজ হচ্ছে শারীরিক ও অর্থনৈতিক ইবাদত। এ দুটি সামর্থ্য যাঁর থাকবে তাঁর ওপর হজ ফরজ। তাই বিশেষ সুবিধা নিয়ে তদবির করে হজে যাওয়া ঠিক হবে না। এখানে হালাল ও হারামের বিষয়ও আছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি টাকায় বেশি মানুষ হজে যাওয়ার কারণে হজের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সাধারণ অনেকের ইচ্ছা থাকার পরও হজে যেতে পারছেন না। গত কয়েক বছর বাংলাদেশে হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বহুবার বৃদ্ধি করার পরও কোটা পূরণ হয়নি।
নামেই হাজি সেবা, ব্যয় ১৫ কোটি টাকা : হজযাত্রীদের সেবার নামে এবার ৪৫৩ জন ব্যক্তি সরকারি খরচে হজে গেছেন।
তালিকাভুক্ত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কালের কণ্ঠ’র কথা হয়েছে, তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে না পারলেও ‘হাজি সাহেবদের সেবা’ করতে যাচ্ছেন—এমন একটি সাধারণ উত্তর পাওয়া গেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে হাজি সেবা দলের সদস্যদের হজ করার কোনো সুযোগ নেই। তালিকাভুক্তরা বলছেন, প্রতিবছর বলা হয় হজ করা যাবে না। কিন্তু সবাই হজ করে আসেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার সরকারি খরচে হজে যাওয়া ব্যক্তিরা বিমানের টিকিট বাবদ এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রত্যেককে ৩৫ হাজার টাকা করে হজ অফিসে জমা দিতে হবে খাওয়ার খরচ বাবদ। মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিমানভাড়ার বাইরে সব খরচ সরকার বহন করবে। একেকজনের পেছনে সরকারের খরচ হবে চার লাখ টাকা।
হাজি সেবার নামে যাঁরা হজে গেলেন : এবার ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের নেতৃত্বে হজ প্রতিনিধিদলে রয়েছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাতজন সচিব ও জ্যেষ্ঠ সচিব, দুজন অতিরিক্ত সচিব, দুজন সংসদ সদস্য এবং একজন নির্বাচন কমিশনার। ৫৫ সদস্যের হজ প্রশাসনিক দলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা আছেন ২২ জন এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ৩৩ জন। হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী ৭৪ সদস্যের দলে রয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ২২ পিওন এবং ১২ জন গাড়িচালক। ২৫ সদস্যের কারিগরি দলে আছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাতজন কম্পিউটার অপারেটর। সমন্বিত হজ চিকিৎসা দলে আছেন ২৮৯ জন। এর মধ্যে ৮৫ জন চিকিৎসক, ৫৫ জন নার্স, ২৪ জন ফার্মাসিস্ট, ২৫ জন ওটি/ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এসব দলের অনেক কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট দলের কাজ সম্পর্কে কিছু জানেন না।
সাংবাদিকদের দলে সাংবাদিক নেই : সরকারি খরচে হজে নিতে এবার সাংবাদিকদের নামে অধিকাংশই এ পেশায় যুক্ত নন- এমন ব্যক্তিদের নিয়ে দল গঠন করা হয়েছে। ধর্মমন্ত্রী ও সচিব তাঁদের নিজ এলাকার তিনজন সাংবাদিকের নাম দিয়ে ১০ জনের একটি তালিকা করেন। অন্য সাতজনই সাংবাদিক নন। অথচ তাঁদের মক্কা, মদিনা, মিনা আরাফায় বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনসহ হজযাত্রীদের সহায়তা করার কথা বলা হয়েছে। গত ৪ জুন তাঁরা সৌদি আরবে গেছেন।
ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, যাঁরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংবাদ পরিবেশন করেন তাঁদের নামে তালিকা করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের বেশির ভাগ পরিচিত কোনো সাংবাদিক নন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যাঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো, তাঁদের সরকারি খরচে হজে পাঠানো হয়।’
সম্পর্কিত খবর

ইউনিসেফের শোক
শিশুদের গোপনীয়তা রক্ষা ও দায়িত্বশীল সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ চলাকালে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত ও হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি বেঁচে যাওয়া শিশুদের পরিচয় ও গোপনীয়তা রক্ষা এবং দায়িত্বশীলভাবে সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল মঙ্গলবার শোক প্রকাশ করে ইউনিসেফ বাংলাদেশে তাদের ফেসবুক পেজে একটি বিবৃতি পোস্ট করে। বিবৃতিতে বলা হয়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতিসংঘের পতাকা অর্ধনমিত রেখে জাতির সঙ্গে শোক দিবস পালন করছে ইউনিসেফ।
আহতদের দ্রুত ও সম্পূর্ণ সুস্থতা কামনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অনেক প্রাণহানি হয়েছে, যার মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। আমরা আমাদের গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি সেই সব পরিবারের সদস্যদের প্রতি, যাঁরা তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

‘বোনের কাছে আমার লাশটা পৌঁছে দিয়ো’
বিশ্বজিৎ পাল বাবু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

মা সমিরন বেগম মারা গেছেন প্রায় ১৫ বছর আগে। একমাত্র ভাই থাকেন প্রবাসে। বাবা অসুস্থ। একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।
শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন মাসুকা (৪০)। বিমান দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন।

মাইলস্টোনে অনভিপ্রেত ঘটনা নিয়ে যা বলল আইএসপিআর
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর উত্সুক জনতা ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় উদ্ধারকাজে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। একদল উত্সুক জনতার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি ও বাদানুবাদের সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছে আইএসপিআর। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানিয়েছে আইএসপিআর।
আইএসপিআর জানায়, গত সোমবার দুপুর আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়।
উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে দুর্ঘটনাস্থলে উত্সুক জনতার ব্যাপক ভিড় দেখা দেয়, যা ইভাকুয়েশন ও রেসকিউ কার্যক্রমকে বারবার ব্যাহত করে।
আইএসপিআর আরো জানায়, উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে বিকেলের দিকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কিছু উত্সুক জনতা ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় উদ্ধারকাজে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।
ফলে একদল উত্সুক জনতার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি ও বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়, যা এক পর্যায়ে একটি অনভিপ্রেত ঘটনার অবতারণা করে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পাশে থেকে পেশাদারি ও সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধের সঙ্গে কর্তব্য পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

শেওড়াপাড়ায় আবাসিক ভবনে আগুন, ৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শেওড়াপাড়ার একটি চারতলা আবাসিক ভবনের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে আগুন লেগে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খবর পেয়ে আধাঘণ্টার মধ্যে তা নিয়ন্ত্রণে এনেছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ১৪ মিনিটে দক্ষিণ শেওড়াপাড়ার ৫৩২ নম্বর ভবনের আগুনের তথ্য পায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৬টা ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।