দেশে মাতৃমৃত্যুর একটা অন্যতম কারণ এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি। সময়ের সঙ্গে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জরায়ুর অংশ তিনটি—
- জরায়ুর বডি
- ফেলোপিয়ান টিউব
- জরায়ুর মুখ।
- জরায়ুর বডিতে যখন ভ্রূণ স্থাপিত হয় তখন একে বলে স্বাভাবিক প্রেগন্যান্সি।
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির স্থানসমূহ
- ফেলোপিয়ান টিউব ৯৭% (এই স্থানেই বেশি হয়)
- ডিম্বাশয়
- জরায়ুর মুখ
- সিজারিয়ান স্কার
- পেটের ভেতর বা অ্যাবডোমিনাল
সাধারণ মানুষের মধ্যে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় সাধারণত টিউব রাপচার বা ফেটে যাওয়ার পর প্রচণ্ড পেটে ব্যথা, ইন্টারনাল ব্লিডিং এবং শক নিয়ে হাসপাতালে উপস্থিত হতে দেখা যায়। যখন মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। দ্রুত ডায়াগনসিস এবং চিকিৎসায় রোগী পেতে পারে নতুন জীবন।
কারণসমূহ
- জরায়ুর ইনফেকশন
- পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ
- জরায়ু এবং ফেলোপিয়ান টিউবের জন্মগত ত্রুটি
- আগে ফেলোপিয়ান টিউবের কোনো অপারেশন হয়ে থাকলে
- যৌনবাহিত রোগ (গোনোরিয়া, ক্ল্যামাইডিয়া)
- এন্ডোমেট্রিওসিস
- বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা
- আইভিএফ
লক্ষণ
(১) সাধারণ প্রেগন্যান্সির লক্ষণগুলো থাকবে
(২) মাসিক বন্ধ থাকতে পারে বা না-ও থাকতে পারে
(৩) রিপ্রোডাকটিভ এজের মহিলাদের হঠাৎ তীব্র তলপেটে ব্যথা, রক্তক্ষরণ, ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ইন্টারনাল ব্লিডিংয়ের জন্য পেট ফুলে শক্ত হয়ে যাওয়া, ব্যথা পিঠে এবং শুয়ে থাকলে তীব্র ব্যথায় শ্বাসকষ্ট হওয়া।
রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
- আল্ট্রাসোনোগ্রাফি
- সেরাম বেটা এইচসিজি
- প্রস্রাব পরীক্ষা করে প্রেগন্যান্সি টেস্ট
চিকিৎসা মেডিসিনের মাধ্যমে—
যেখানে ভ্রূণের থলি ছোট থাকবে, বিটা এইচসিজির পরিমাণ অল্প থাকবে, ইন্টারনাল ব্লিডিং ন্যূনতম হবে।
সেখানে মেডিসিনের মাধ্যমে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির চিকিৎসা করা যেতে পারে।
দ্বিতীয় উপায় শল্য চিকিৎসা বা সার্জারি—
- ল্যাপারোস্কোপি—আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির সার্জিক্যাল ব্যবস্থাপনায় ল্যাপারোস্কোপির ভূমিকা অসাধারণ অতি দ্রুত শনাক্ত করে, ল্যাপারোস্কোপিক্যাল সার্জারির মাধ্যমে ভ্রূণটিকে তার অস্বাভাবিক স্থান থেকে সরিয়ে, বের করে আনা যায়। অতিরিক্ত ইন্টারনাল ব্লাড সাকশনের মাধ্যমে বের করে ফেলা যায়।
প্রয়োজনে ফেলোপিয়ান টিউব কাটতে হতে পারে।
- ল্যাপারোটমি—ল্যাপারোটমি বা পেট কেটে চিকিৎসা দেওয়া হয়, যখন রোগীর অবস্থা ক্রিটিক্যাল থাকে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রক্তের জোগাড় রাখা জরুরি। পরবর্তী সময়ে প্রেগন্যান্সির হার কিছুটা হলেও কমে যায়। পুনরায় এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ১৪ শতাংশ।
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি যেহেতু একটা অবসস্ট্রেটিক ইমারজেন্সি, তাই বাঁচতে হলে কিছুটা হলেও এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির লক্ষণগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। এতে মৃত্যুঝুঁকি কমবে। আসুন আমরা জানি, বুঝি এবং জীবন বাঁচাই।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. সুমাইয়া আক্তার
স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন
কনসালট্যান্ট, ওজিএসবি এবং আইআরসিএইচ, ঢাকা।