<p>চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত ঝুঁকিপূর্ণ জঙ্গল সলিমপুর পাহাড় এখন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। সরকারি এই পাহাড়ে এখন বসবাস করছে ২১ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ। অবৈধভাবে বসবাসকারী এই পরিবারগুলোকে উচ্ছেদে গত ১০ বছরে কয়েক দফা বড় অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। ফলে পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি স্থাপন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলছে। এতে প্রতি বর্ষায় সেখানে পাহাড়ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটলেও এদের স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়ার কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।</p> <p>স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুর এলাকাটি চট্টগ্রাম মহানগরীর একেবারে দোরগোড়ায় অবস্থিত। এ কারণে যোগাযোগের সুবিধা পেয়ে চট্টগ্রামের ভাসমান মানুষগুলো স্বল্প খরচে বসবাসের জন্য এলাকাটিকে বেছে নিয়ে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করছে। গত তিন দশকে এখানে হাজার হাজার একর সরকারি সুউচ্চ পাহাড় কেটে সাবাড় করে গড়ে তোলা হয়েছে বসতি। বর্তমানে কিছু সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী রাজত্ব করছে এখানে। তাঁদের অধীনে এই এলাকাটিকে কয়েকটি সমাজে ভাগ করা হয়েছে। এসব সমাজের মানুষ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে দুটি সমিতি। এর একটি হলো ছিন্নমূল সমবায় সমিতি এবং অন্যটি অলিনগর সমবায় সমিতি। এই দুই সমিতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু নেতা অবৈধ ওই এলাকার উন্নয়নের নামে পাহাড়ি জায়গার দখল বিক্রি করেন। একেকটি ভাসমান পরিবার তাঁদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা থেকে ৮-১০ লাখ টাকায় পাহাড়ের দখল কিনে সেখানে বসবাসের অনুমতি এবং ওই সমিতির সদস্য পদ লাভ করে। এভাবে কালক্রমে ছিন্নমূল সমবায় সমিতিতে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার পরিবার এবং অলিনগর সমবায়ে প্রায় ছয় হাজার পরিবার সংযুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ দুটি সমিতিতে এখন প্রায় ২২ হাজার পরিবার রয়েছে। আর প্রত্যেক পরিবারে সদস্য গড়ে পাঁচজন হলে এখানে মোট বসবাসকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ১০ হাজারের মতো। ফলে এই পাহাড় এখন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। আর এই পাহাড়ি এলাকার অবৈধ বসবাসকে বৈধ করতে সমিতির নেতারা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এই উদ্দেশ্যে এখানে স্কুল, মাদরাসা, এতিমখানা, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন পন্থায় এখানে আনা হয়েছে বিদ্যুৎ, পানির লাইনসহ নানা সুবিধা। সবমিলিয়ে অবৈধ দখলগুলো বৈধ হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। এদিকে ইচ্ছেমতো পাহাড় কেটে স্থাপনা তৈরি করায় প্রতিবছর বর্ষায় এখানে কোনো না কোনো পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে।</p> <p>পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত দুই দশকে এখানে পাহাড়ধসে শিশুসহ অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরেও সুউচ্চ পাহাড় ধসে পড়ে। তবে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় বাসিন্দারা।</p> <p>সলিমপুর ছিন্নমূল বস্তি এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছ থেকে দুই লাখ টাকায় ২ শতাংশ জায়গা কিনে ঘর বানিয়েছেন তিনি। অন্য বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যাঁদের মাথা গোঁজার মতো নিজস্ব জায়গা নেই, ঝুঁকি থাকলেও তাঁরা পাহাড়ে বসবাস করতে বাধ্য। আমরা সেরকমই।’</p> <p>সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আসলে এই পাহাড় এখন রীতিমতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। আমি শুনেছি, আগে কয়েকবার পাহাড়গুলো দখলমুক্ত করতে উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত উচ্ছেদ করা যায়নি। তবে বর্তমান জেলা প্রশাসক এসব বিষয়ে সিরিয়াস। তাঁকে বিষয়গুলো জানাব।’ এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন বলেন, ‘বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে ভাসমান লাখো মানুষ এসে এই পাহাড় দখল করে বসবাস করছে। আর এই সুযোগ নিয়ে কিছু ব্যক্তি সরকারি পাহাড় বেচাকেনার ব্যবসায় নেমেছে। আগের জেলা প্রশাসক এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাদের উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আবার তারা ঠিকই সংযোগ নিয়েছে।’ স্থানীয় এমপি দিদারুল আলম বলেন, ‘সেখানে পাহাড়গুলো এখন বড় বড় গ্রাম হয়ে গেছে। অর্থবিত্ত থাকার পরও অনেকে পাহাড় কেটে ঘর বানাচ্ছে। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমিও সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব।’</p>