ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭
পবিত্র কোরআনের আলো । ধা রা বা হি ক

ঈমানের পরিচয়, ঈমানের দাবি

notdefined
notdefined
শেয়ার
ঈমানের পরিচয়, ঈমানের দাবি

২৪. তুমি কি দেখো না, আল্লাহ কিভাবে উপমা দিয়ে থাকেন? পবিত্র বাক্য (কালেমায়ে তাইয়্যিবা) পবিত্র বৃক্ষসদৃশ, যার শেকড় (জমিনে) সুদৃঢ় ও শাখা-প্রশাখা ঊর্ধ্বে বিস্তৃত। [সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ২৪ (দ্বিতীয় পর্ব)]

তাফসির : আলোচ্য আয়াতে মহান আল্লাহ পবিত্র বাক্য বা কালেমায়ে তাইয়্যিবাকে সজীব বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বৃক্ষের শেকড় যেমন মাটিতে শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত করে, তেমনি ঈমানদারের ঈমান ক্রমেই উৎকর্ষ সাধন করে। ঈমান এমন বৃক্ষ, যা নিরবচ্ছিন্নভাবে ফল দেয়।

সেই ফল ইহকাল ও পরকাল দুই জগতেই কাজে আসে।

সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো ঈমান। ঈমানের বিপরীত কুফর। ঈমান সত্য, কুফর মিথ্যা।

ঈমান আলো, কুফর অন্ধকার। ঈমানই জীবন, কুফর মৃত্যুতুল্য। ঈমান শুধু মুখে কালেমা পড়ার নাম নয়, ইসলামকে তার সব অপরিহার্য অনুষঙ্গসহ মনেপ্রাণে গ্রহণ করার নাম ঈমান।

ঈমান হলো, ওহি বা আসমানি প্রত্যাদেশের মাধ্যমে জানা সব কিছুকে সত্য বলে বিশ্বাস করা।

ঈমানের ভেতর অজ্ঞতা, অনুমান, কল্পনা ও কুসংস্কারের কোনো অবকাশ নেই।

ঈমান অবিচল বিশ্বাসের নাম। সংশয় ও দোদুল্যমানতা এখানে থাকতে পারে না। বিশ্বাস যদি দৃঢ়ই না হয়, তাহলে তা ঈমান হয় কিভাবে? মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তারাই ঈমানদার, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনে, পরে সন্দেহ পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।

’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১৫)

কোনো বিষয়কে শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আস্থার ভিত্তিতে মেনে নেওয়া ঈমানের দাবি। ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য ও দৃশ্যমান বিষয় ঈমানের বিষয়বস্তু নয়। এসব তো মানুষ এমনিতেই মেনে নেয়। এতে ঈমান আনা না আনার প্রশ্নই অবান্তর। মুমিনকে এ জন্য মুমিন বলা হয়, সে না দেখা বিষয় শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সংবাদের ভিত্তিতে বিশ্বাস করে।

সত্যের সাক্ষ্যদান ও ইসলামের স্তম্ভগুলো যথাযথ পালন ঈমানের দাবি। অন্তরের বিশ্বাসের সঙ্গে মুখেও সত্যের সাক্ষ্য দেওয়া ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। হাদিস শরিফে এসেছে, মহানবী (সা.) রবিআ গোত্রের প্রতিনিধিদলকে ঈমানের ব্যাপারে বলেছিলেন, ‘তোমরা কি জানো ঈমান কী?’ তারা বলেছে, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন।’ আল্লাহর রাসুল বলেছেন, ‘ঈমান হলো এ সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল। আর নামাজ কায়েম করা, জাকাত দেওয়া, রমজানের রোজা রাখা ও যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক-পঞ্চমাংশ (রাষ্ট্রীয় কোষাগারে) প্রেরণ করা (ঈমানের পরিচায়ক)।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৩)

ঈমানদার কখনো সত্য গোপন করে না। আবার সে কখনো মিথ্যা ও অবাস্তব সাক্ষ্যও দেয় না। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দেন, নিশ্চয়ই তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, ফেরেশতারা ও জ্ঞানীরাও (এ সাক্ষ্য দেয়); আল্লাহ ন্যায়নীতিতে প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮ )

ঈমান মানে সমর্পণ। ঈমান আনার অনিবার্য পরিণতি হলো বান্দা নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করবে, তাঁর প্রতিটি আদেশ শিরোধার্য মনে করবে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘বলে দাও, আমার নামাজ, আমার ইবাদত (কোরবানি), আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর উদ্দেশে। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আমাকে এরই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর আমি তাঁর সম্মুখে সর্বপ্রথম মাথানতকারী।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬২-১৬৩)

গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ