ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭
পবিত্র কোরআনের আলো

তাওরাতের জন্য তুর পাহাড়ে মুসা (আ.)-এর অবস্থান

শেয়ার
তাওরাতের জন্য তুর পাহাড়ে মুসা (আ.)-এর অবস্থান

১৪২. আর আমি মুসা (আ.)-কে ৩০ রাত্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছি (নির্ধারণ করেছি) এবং আরো ১০ (রাত্রি) দিয়ে তা পূর্ণ করেছি। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত সময় ৪০ রাত্রিতে পূর্ণ হয়। আর মুসা (আ.) তার ভাই হারুনকে বলল, 'আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে এবং তাদের সংশোধন করবে আর বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবে না।' (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৪২)

তাফসির : আল্লাহ তাআলা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য সর্বমোট ১০৪ খানা কিতাব নাজিল করেছেন।

তার মধ্যে তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিল ও কোরআন মজিদ শ্রেষ্ঠতম ও সবচেয়ে বড়। তাওরাত হজরত মুসা (আ.)-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আলোচ্য আয়াতে তাওরাত প্রাপ্তির জন্য আল্লাহর নির্দেশে মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে অবস্থান, ৪০ দিন রোজা পালন ও ইতিকাফ আদায়ের বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

তাওরাতের জন্য তুর পাহাড়ে মুসা (আ.)-এর অবস্থান

বর্ণিত আছে যে হজরত মুসা (আ.) মিসরে অবস্থানকালে বনি ইসরাইলের সঙ্গে ওয়াদা করেছেন যে যদি আল্লাহ তাআলা তাদের শত্রুকে ধ্বংস করে দেন, তাহলে তাদের কিতাব দান করবেন।

সে কিতাবে আদেশ-নিষেধ, করণীয়-বর্জনীয়সংক্রান্ত বিধিবিধান থাকবে। অতঃপর যখন ফেরাউন ধ্বংস হয়ে গেল, তখন মুসা (আ.) তাঁর প্রতিপালকের কাছে আসমানি কিতাব প্রার্থনা করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা (আ.)-কে প্রথমে ৩০ দিন ইতিকাফ ও রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সেটি ছিল জিলকদ মাসে।
রোজার কারণে সৃষ্ট মুখের দুর্গন্ধ নিয়ে নিজ প্রভুর দরবারে যাওয়াকে তিনি অপছন্দ করেন। তাই তিনি মেসওয়াক করে নেন। তখন ফেরেশতারা বলল, 'আমরা আপনার মুখ থেকে মেশকে আম্বরের সুঘ্রাণ উপভোগ করছিলাম, আর আপনি কি না মেসওয়াক করে তা নষ্ট করে দিলেন!' তখন আল্লাহ তাআলা অতিরিক্ত আরো ১০ দিন রোজা ও ইতিকাফের নির্দেশ দেন। এই ১০ দিন ছিল জিলহজের প্রথম দশক। (রুহুল মাআনি)

আত্মশুদ্ধিতে ৪০ দিনের বিশেষ তাৎপর্য

এ আয়াতের ইঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছে যে আত্মশুদ্ধি অর্জন ও অভ্যন্তরীণ অবস্থার সংশোধনে ৪০ দিনের একটা বিশেষ তাৎপর্য আছে।

এক হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি ৪০ দিন নিরলসভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, আল্লাহ তাআলা তার অন্তর থেকে জ্ঞান ও হিকমতের ঝরনাধারা প্রবাহিত করে দেবেন (রুহুল বয়ান)। এ ছাড়া ৪০ দিন প্রথম তাকবিরের সঙ্গে জামাতে নামাজ পড়তে পারলে কপটতা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কথা হাদিসে এসেছে। তা ছাড়া এ আয়াতের দ্বারা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ধীর ও স্থিরভাবে সম্পাদনের তাগিদ রয়েছে। কেননা মুসা (আ.)-কে আসমানি কিতাব দিতে ৪০ দিন সময় নেওয়া হয়েছিল।

হারুন (আ.)-কে মুসা (আ.)-এর স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণ

যখন মুসা (আ.) তাঁর নির্ধারিত সময় পূর্ণ করার জন্য তুর পাহাড়ে যাওয়ার মনস্থ করলেন, তখন তিনি তাঁর ভাই হারুন (আ.)-কে তাঁর অনুপস্থিতিতে বনি ইসরাইলদের পরিচালনা করার জন্য স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করেন এবং তাঁকে ওসিয়ত করেন হেদায়েত ও সংশোধনের কাজ অব্যাহত রাখার জন্য আর সতর্ক করে গেলেন ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পথ থেকে দূরে থাকার জন্য। মূলত এটা ছিল নিছক সতর্কতা ও উপদেশমূলক কথা। অন্যথায় হারুন (আ.) নিজেও অত্যন্ত শরিফ ও সম্মানিত নবী ছিলেন। (ইবনে কাছির)

এতে প্রমাণিত হয়, যেকোনো কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রয়োজনে অন্যত্র গেলে সে কাজের ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো লোক নিয়োগ করে যাওয়া কর্তব্য। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও যখন কোথাও সফরে যাবেন, তখন প্রতিনিধি নিয়োগ করে যাওয়া উচিত। রাসুল (সা.) মদিনার বাইরে গেলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাহাবিকে খলিফা নিযুক্ত করতেন। একবার তিনি হজরত আলী (রা.)-কে এবং অন্যবার হজরত আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম (রা.)-কে মদিনার খলিফা বানিয়েছেন।

(তাফসিরে মা'আরেফুল কোরআন ও ইবনে কাছির অবলম্বনে)

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ