নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বালু নদের তীরে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। বর্ষা এলেই রূপগঞ্জের নয়ামাটি ও পিরুলিয়া এলাকায় নৌকা তৈরির ধুম পড়ে যায়। কারিগররা এ সময় মহাব্যস্ত। কায়েতপাড়ায় নৌকার হাটটিতে তখন চলে নৌকা বেচাকেনার রমরমা ব্যবসা।
গ্রামীণ ঐতিহ্য
২০০ বছরের নৌকার হাট
রাসেল আহমেদ, রূপগঞ্জ

গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের গোলাকান্দাইল বাজারে প্রতি বৃহস্পতিবার নৌকার হাট বসে। ইছাখালী-নগরপাড়া সড়কের অদূরে নৌকার গ্রাম। এলাকা দুটি বর্ষায় পানিতে ডুবে যায়। গ্রামগুলো মাথা তুলে থাকে দ্বীপের মতো।
যেভাবে শুরু : রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পিরুলিয়া ও নয়ামাটি এলাকার কারিগররা দেড় শ বছরের বেশি সময় ধরে নৌকা গড়ে আসছেন।
পিরুলিয়া এলাকার অশীতিপর বৃদ্ধ অঞ্জন কুমার দাস বলেন, ‘আমার জন্মের আগে থেইক্যা বাপ-দাদারা গয়না (নৌকা) বানাইয়া আইতাছে হুনছি। নয়ামাটি ও পিরুলিয়া ছাড়া গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের গোলাকান্দাইল, সাওঘাট এলাকার কারিগররা নৌকা তৈরি কইরা আইতাছে।’
কারিগর কারা : পিরুলিয়া ও নয়ামাটি যে নৌকার গ্রাম, তা সবাই জানে। গ্রাম দুটির ৯০ ভাগ মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের।
সাওঘাট এলাকার কারিগর প্রদ্যুত কুমার সরকার বলেন, ‘আগে ব্যবসা ভালাই আছিলো। অহন কাঠ আর লোয়া (লোহা) পেরেকের দাম বাইড়া যাওনে লাভ কম অয়।’
কারিগরদের কথা : পিরুলিয়া ও নয়ামাটি এলাকার কারিগররা এখন নৌকা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছেন। মোটামুটি লাভের মুখও দেখছেন তাঁরা।
পিরুলিয়া এলাকার সত্যেন দাস এমন তথ্য দেন। তাঁর ছেলে পড়াশোনা করছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। নয়ামাটি এলাকার রমেশ দাস বলেন, ‘কই খারাপ তো নাইগো, দাদা। মোডা ভাত আর মোডা কাপড় পরবার পারি। এইডাই সুখ।’
কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের পর ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রচলন বেশি হওয়ায় লগি-বৈঠার নৌকার কদর কিছুটা কমে গেছে। এর পরও ব্যবসা মন্দ নয়। প্রতিবছর বর্ষায় নৌকা তৈরির ধুম চলে।
বন্যা হলে নৌকার বিক্রি বাড়ে বলে জানালেন সুনীল দাস। তিনি বলেন, ‘আটাশি আর আটানব্বই সালের বন্যায় অনেক টেহা লাভ অইছিল।’ নয়ামাটি এলাকার নৌকার কারিগর নিত্যানন্দ দাস বলেন, ‘কাডের দাম বাইড়া যাওনে লাভটা কম হয়। নাইলে ব্যবসা খারাপ না। ডাইল-ভাত খাইবার পারি।’
নৌকার হাটে বেচাকেনা : বালু নদের তীরে কায়েতপাড়া বাজারে বর্ষাসহ বছরজুড়ে প্রতি বৃহস্পতিবার নৌকার হাট জমে। ঢাকার নিম্নাঞ্চলসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা নৌকা কিনতে আসেন। দাম তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এখানকার নৌকার কদর বেশি।
গোলাকান্দাইল বাজারের সামনে বিলে বসে ব্যতিক্রমী নৌকার হাট। এ হাটে প্রতি বৃহস্পতিবারে প্রায় কয়েক হাজার নৌকা ওঠে। নৌকা তৈরির গ্রামগুলোর কারিগররা আসেন এখানে। গজারি কাঠের একটি নৌকার দাম পড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। আর কোষা নৌকা মেলে সাত থেকে আট হাজার টাকায়। বৈঠার দাম চার-পাঁচ শ টাকা।
নৌকা বিক্রেতা সুবল চন্দ্র দাস বলেন, ‘ব্যবসা ভালোই, তয় পানি বেশি অইলে লাভও বেশি অয়।’
ঢাকার ত্রিমোহনী থেকে নৌকা কিনতে আসা সুরুজ আলী বলেন, ‘এ হাটে তুলনামূলকভাবে কম দামে নৌকা পাওয়া যায়।’ আড়াইহাজার থেকে নৌকা কিনতে আসা ওদুদ মিয়া বলেন, ‘এ হাটে নৌকার দাম কম। তাই এহান থেইক্যা কিনবার আইছি।’
সম্পর্কিত খবর

রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা


কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
- চার জেলায় ৪ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়া বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচ জেলায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ভূন্দুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৪০), গোলাম শহিদের ছেলে বলু মিয়া (৫৫) ও ফুলবাবু (৫০)। তাঁরা সবাই জমি নিয়ে বিরোধে থাকা শাহাজাহান মিয়ার পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহুদিন ধরে ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া ও রাজু মিয়ার মধ্যে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্য কয়েকটি জেলায়ও পৃথক ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে সোহাগ সরদার (২৭) নামের যুবদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রূপা (১৮) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী দাবি করেছেন, রূপা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানকিদাহ এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে টাঙ্গন নদী থেকে। মৃত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম।

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড্ডয়নের পরপরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট বিজি ১৪৮ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছিল। এটি ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বিমানটি বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮-এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্য একটি ফ্লাইট বিজি ১২২-এ অনবোর্ড সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুবাই থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিমানের ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাশিয়ায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি অ্যান-২৪ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রাথমিক খবরে জানানো হয়েছে, কেউই বেঁচে নেই। সিভিল ডিফেন্স, জরুরি ও দুর্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, অ্যান-২৪ বিমানটি পরিচালনা করছিল সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারা। প্রথমে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, চীনের কাছাকাছি আমুর অঞ্চলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মতো দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। এ কারণে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন ক্রু।
স্থানীয় জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটি গন্তব্যের কাছাকাছি থাকাকালে হঠাৎ করে রাডারের বাইরে চলে যায়। গভর্নর অরলোভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।
উড়োজাহাজটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ যাত্রী ও ছয় ক্রু ছিলেন বলে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ আগেই জানিয়েছিলেন। যেখানে উড়োজাহাজটি ‘রাডার থেকে হারিয়ে যায়’, সেটি রাশিয়ার তাইগা বনভূমি অঞ্চলে পড়েছে।
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আন্তোনভ আন-২৪ উড়োজাহাজ সাধারণত যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত এই মডেলের হাজারের বেশি উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় এখন সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে আরটি।
সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং খারাপ দৃশ্যমানতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স