ফরিদপুরে সদ্য ঘোষিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা সমন্বয় কমিটি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কমিটির পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচানা-সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের মধ্যেও কেউ এনসিপিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, আবার কেউ কেউ সমালোচনা করছেন।
সদ্যঘোষিত এনসিপির কমিটি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘দেখতে পাচ্ছি আমরা, তৎকালীন সময়ের আওয়ামী লীগের সম্মানিত দালালরা, ফ্যাসিবাদের কোলে বসে থাকা দোসররা মুখ লুকিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিচ্ছেন এই দলে।
বাদ যাচ্ছে না সহযোগী সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদ।’
গত ৫ জুন এনসিপি ফরিদপুর জেলা শাখার ২৩ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এ কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৈয়দা নীলিমা দোলা। এ ছাড়া পাঁচজন যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং ১৭ জন সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
এ ছাড়া গত ৩ জুন কেন্দ্র স্বাক্ষরিত সংগঠনটির ‘শ্রমিক উইং’-এর জেলা কো-অর্ডিনেশনের ৩৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে প্রধান সমন্বয়কারী এস এম জুনায়েদ জিতু, দুজন রয়েছেন যুগ্ম সমন্বয়কারী। এ কমিটিতেও ফ্যাসিবাদের দোসর ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা সোহেল রানা।
গত শনিবার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের সদস্যসচিব সোহেল রানা লিখেছেন, ‘এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার আগে কখনো খতিয়ে দেখার চেষ্টাও করেননি জুলাইয়ে তাঁদের ভূমিকা ছিল।
যাদের পদ-পদবি দেবেন, তাঁরা কী চান? মানুষের জন্য রাজনীতি, নাকি টেন্ডারবাজি, দখলদারি করে নিজের পকেট ভারী?’
সোহেল আরো লিখেন, ‘সময় ভালো চলছে...বসন্তের কোকিল আসবে ঝাঁকে ঝাঁকে। সময় খারাপ হলে এদের কি আদৌ খুঁজে পাওয়া যাবে? যেটার ফলাফল হবে ‘সাপের ডিম সাপেই খাবে!’
গতকাল সোমবার জানতে চাইলে এ বিষয়ে সোহেল রানা বলেন, এনসিপির কাছে কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও সাধারণ মানুষের অনেক চাওয়া-পাওয়া আছে। যুবসমাজ ও ছাত্রসমাজ চাচ্ছে দলটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করবে। কিন্তু সেখানে দেখা যাচ্ছে এনসিপির কমিটিতে আওয়ামী লীগের দোসর ও ফ্যাসিবাদের আত্মীয়-স্বজনের জায়গা হয়েছে। কিছু বিতর্কিত ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়েছে।
এগুলো দেখে আমরা হতাশাগ্রস্ত হয়েছি। এ জেলায় শ্রমিক উইং কমিটিতেও ফ্যাসিবাদের দোসররা স্থান পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়েই তো এনসিপি কমিটি। তাই এনসিপি নিয়ে কথা বলা ও ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের রয়েছে। তা না হলে আওয়ামী লীগের মতোই এ কমিটির অবস্থা হয়ে যাবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনিসপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমাদের কমিটি হওয়ার পর থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটির অনেকেই অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁরা সহযোগিতাও করছেন। তার পরও রাজনীতি করতে এলে কিছু বিতর্ক হয়ে থাকে। ফরিদপুরে এনসিপির কমিটিতে অন্য কোনো দলের পূর্বে পদে ছিলেন এমন কেউ নেই। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে অনেকের ছবি থাকতে পারে, কিন্তু আমরা ছবির রাজনীতি দেখছি না। কমিটি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যে নেতা সমালোচনা করছেন, তিনি বাদে প্রায় সবাই আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।’