পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর উচ্চহারে বিশ্বে শীর্ষ দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। প্রতিদিন গড়ে ৪১ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। বছর শেষে এই প্রাণহানি ১৫ হাজারে গিয়ে পৌঁছায়। এভাবে নানা বয়সী মানুষের মৃত্যু ঘটলেও শিশুর সংখ্যা বেশি বলে উঠে এসেছে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) প্রতিবেদনে।
পানিতে ডুবে কেন এত মৃত্যু
- বড় কারণ সচেতনতার অভাব
- ডুবে শিশুমৃত্যুতে বিশ্বে শীর্ষ দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ
- দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪০ শিশু ডুবে মারা যায় : ইউনিসেফ
- ঈদের পর দুই দিনে পানিতে ডুবে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক

এদিকে বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৪০টি শিশু মর্মান্তিকভাবে পানিতে ডুবে মারা যায় বলে জানিয়েছে শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা ইউনিসেফ। সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ পানিতে ডোবা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের সময় অনেকে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে পুকুর বা জলাশয়ে সাঁতার কাটার চেষ্টা করে। এতে দুর্ঘটনা ঘটে।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, কিছু সহজ পদক্ষেপ নিলে শিশুদের ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব। তা হলো ছোট শিশুদের নজরে রাখা, বিশেষ করে যখন তারা পানির আশপাশে থাকে।
প্রতিবার ঈদের সময় পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যায়। ঈদের পরের দুই দিনে (রবিবার ও সোমবার) অন্তত ৩০ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে।
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাউনিং রিসার্চ সেন্টার (আইডিআরসি) বাংলাদেশের ডিরেক্টর ড. আমিনুর রহমান শিশুস্বাস্থ্য, মানসিক বিকাশ ও অপমৃত্যু রোধে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘অপঘাতজনিত কারণে আমাদের দেশে প্রতিবছর যত শিশু মারা যাচ্ছে, তার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া। বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার সর্বাধিক। এর মধ্যে আবার সর্বাধিক ভারতে। কিন্তু জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশে যত শিশু পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে, তা ভারতের চেয়ে বেশি। সবাই বলে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় বেশি শিশু মারা যায়। আসলে বেশি শিশু মারা যায় পানিতে ডুবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধ সরকারের পরিকল্পনায় আছে। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ব্যাধির প্রতিরোধ কার্যক্রমের আওতায় এজেন্ডা আছে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার কমানোর।’
সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে ‘জীবন রক্ষার উদ্যোগে ইউনিসেফের অঙ্গীকার’ শীর্ষক পানিতে ডোবা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মশালায় ইউনিসেফ বাংলাদেশের অফিসার ইনচার্জ ও চাইল্ড প্রটেকশন চিফ ড. এলিসা কল্পনা বলেন, ‘বাংলাদেশে পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে ইউনিসেফ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। সুইমসেফ প্রগ্রামের মাধ্যমে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জীবন রক্ষাকারী দক্ষতা শেখানো হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই প্রগ্রাম শুধু জীবন বাঁচায় না, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধেও সহায়তা করে। খেলাধুলার মাধ্যমে মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তাদের ভবিষ্যৎ গড়ার পথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা দেয়, যা সমাজের ক্ষতিকর প্রথাগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহায্য করে।’
ছুটিতে পানিতে ডুবে মৃত্যুর কয়েকটি ঘটনা : ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে গত সোমবার বিকেলে নদীতে ডুবে সিনান (২) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের চরগোরকপুর এলাকায় কংস নদীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সিনান ওই এলাকার মো. মোনায়েম হোসেনের ছেলে। মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে পানিতে ডুবে আয়াত (২) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার উপজেলার আউটশাহী ইউনিয়নের মুসল্লিপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শিশুটি গ্রামের রাসেল ছৈয়ালের ছেলে।
চট্টগ্রামের পটিয়ায় পুকুরে ডুবে চাচা-ভাতিজার মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় একটি পুকুরে ডুবে এ দুজন মারা যায়। তারা হলো উপজেলার আশিয়া ইউনিয়নের মধ্যম বাথুয়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বজল আহমদের ছেলে মোহাম্মদ নাছির (৫৫) ও তাঁর ভাতিজা মোহাম্মদ আইরিয়ান (১৫)। এ ছাড়া লোহাগাড়ায় ইটভাটার পুকুরে ডুবে মোহাম্মদ তানজিম (৪) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজার সৈকতের কলাতলী সায়মন বিচ পয়েন্ট এলাকায় গত সোমবার দুপুর ২টার দিকে গোসলে নেমে শাহীনুর রহমান (৬০) এবং তাঁর ছেলে সিফাত (২০) মারা যান। তাঁরা রাজশাহী থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছিলেন।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামে মেয়েকে সাঁতার শেখাতে গিয়ে গত সোমবার দুপুরে পুকুরে ডুবে বাবা-মেয়ের মৃত্যু হয়। মৃত দুজন হলো হামিদপুর গ্রামের বাসিন্দা ইটভাটা ব্যবসায়ী বাবুল আহমদ (৬০) ও তাঁর মেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ছাত্রী হালিমা মোহাম্মদ (১৭)। [প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন বিভিন্ন জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]
সম্পর্কিত খবর

রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা


কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
- চার জেলায় ৪ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়া বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচ জেলায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ভূন্দুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৪০), গোলাম শহিদের ছেলে বলু মিয়া (৫৫) ও ফুলবাবু (৫০)। তাঁরা সবাই জমি নিয়ে বিরোধে থাকা শাহাজাহান মিয়ার পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহুদিন ধরে ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া ও রাজু মিয়ার মধ্যে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্য কয়েকটি জেলায়ও পৃথক ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে সোহাগ সরদার (২৭) নামের যুবদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রূপা (১৮) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী দাবি করেছেন, রূপা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানকিদাহ এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে টাঙ্গন নদী থেকে। মৃত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম।

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড্ডয়নের পরপরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট বিজি ১৪৮ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছিল। এটি ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বিমানটি বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮-এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্য একটি ফ্লাইট বিজি ১২২-এ অনবোর্ড সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুবাই থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিমানের ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাশিয়ায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি অ্যান-২৪ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রাথমিক খবরে জানানো হয়েছে, কেউই বেঁচে নেই। সিভিল ডিফেন্স, জরুরি ও দুর্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, অ্যান-২৪ বিমানটি পরিচালনা করছিল সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারা। প্রথমে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, চীনের কাছাকাছি আমুর অঞ্চলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মতো দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। এ কারণে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন ক্রু।
স্থানীয় জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটি গন্তব্যের কাছাকাছি থাকাকালে হঠাৎ করে রাডারের বাইরে চলে যায়। গভর্নর অরলোভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।
উড়োজাহাজটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ যাত্রী ও ছয় ক্রু ছিলেন বলে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ আগেই জানিয়েছিলেন। যেখানে উড়োজাহাজটি ‘রাডার থেকে হারিয়ে যায়’, সেটি রাশিয়ার তাইগা বনভূমি অঞ্চলে পড়েছে।
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আন্তোনভ আন-২৪ উড়োজাহাজ সাধারণত যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত এই মডেলের হাজারের বেশি উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় এখন সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে আরটি।
সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং খারাপ দৃশ্যমানতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স