শাড়িকে আর্য অবদান বানানোর দুরন্ত কোশেশ ছিল। বিষয়টি ঔপনিবেশিকতার সাংস্কৃতিক প্রভাব হতে পারে। তবে মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা সভ্যতা জানান দেয়, শাড়ি ডাহা অনার্য অবদান। এ কারণে বাংলাদেশে নারী আর শাড়ি একাকার।
ঐতিহ্য
মণিপুরি শাড়ির জিআই স্বীকৃতিতে তাঁতিরা আনন্দিত
সাইফুল ইসলাম, মৌলভীবাজার ও মোস্তাফিজুর রহমান, কমলগঞ্জ

নিত্যপ্রয়োজনীয় কাপড়, শাড়ি, গামছা, শাল, বিছানার চাদর ফানেক, লাহিঙ, ওড়নাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাপড় মণিপুরি নারীরা নিজেরাই বুনে থাকেন। প্রায় প্রতিটি মণিপুরি ঘরেই তাঁত রয়েছে। আজ এই শাড়ি ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পেয়েছে, সুনামও বিশ্বব্যাপী।
উজ্জ্বল রঙের দেশি সুতায় তৈরি হয় মণিপুরি শাড়ি।
তাঁতি প্রিয়াঙ্কা ও স্বর্ণালী সিংহা বলেন, আমাদের হাতের তৈরি শাড়ি জিআই সনদ পাওয়ায় অনেক আনন্দ লাগছে। এই শাড়ির সুনাম এখন বাড়বে।
বাংলা একাডেমির নাট্যসাহিত্য পুরস্কারজয়ী লেখক-গবেষক শুভাশিস সিনহা বলেন, ‘মণিপুরি শাড়ি এমনিতেই সমাদৃত। এর জিআই সনদ আমাদের জন্য একটি বিশাল অর্জন।’
শ্রীমঙ্গল নিরব মণিপুরি হ্যান্ডিক্রাফটের নৃপেণ কুমার নয়ন বলেন, জিআই সনদ অর্জনে মণিপুরি শাড়ির চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। একই কথা জানান মডার্ন মণিপুরি শাড়িঘরের বিপুল সিংহ, রবীন্দ্র সিংহসহ অনেকে।
অনলাইনে বিশাল বাজার সৃষ্টি করা উদ্যোক্তা চয়ন সিংহ বলেন, ‘অনলাইনে মণিপুরি শাড়িসহ কাপড় বিক্রি করে থাকি, সেখানে শাড়ির বিপুল চাহিদা রয়েছে।’
সিলেট বিভাগের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে মণিপুরি জনগোষ্ঠীর বসবাস বেশি। মণিপুরি শাড়িসহ অন্যান্য কাপড় এই কমলগঞ্জে উৎপন্ন হয়ে থাকে। তাই মণিপুরি জনগোষ্ঠীসহ উপজেলাবাসী এই পণ্যের জিআই সনদ অর্জনে গর্ব বোধ করছেন। পণ্য জিআই করার আগে দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই স্বীকৃতি দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)।
কমলগঞ্জের লেখক ও গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, ‘ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হলো এমন একটি সনদ, যা একটি পণ্যের উৎপাদন বা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রাকৃতিক বা সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দেয়। এ ধরনের সনদ পণ্যটির উৎসস্থল ও তার বিশেষত্বকে চিহ্নিত করে, যা পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করে।’
মণিপুরি শাড়ি বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক নিদর্শন, যা মূলত জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বেশি উৎপন্ন হয়। এই শাড়ি শুধু মণিপুরি জনগণের ঐতিহ্য নয়, বরং বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগণের মধ্যে একটি জনপ্রিয় পোশাক হয়ে উঠেছে। বিশেষ নকশার মাধ্যমে এই শাড়ি আলাদা হয়ে ওঠে, যা অন্যান্য শাড়ির থেকে স্বতন্ত্র।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাঈল হোসেন বলেন, ‘মণিপুরি অধ্যুষিত কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার সর্বাধিক উৎপাদিত পণ্য মণিপুরি শাড়ি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় উৎসাহের পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং তাঁতিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। তাঁদের জন্য দ্রুত সময়ে আরো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।’
গত ৩০ এপ্রিল বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে নতুন করে আরো ২৪টি দেশি পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশকের (জিআই) স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বর্তমানে ৫৬টি জিআই পণ্য রয়েছে। কোনো একটি দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও মানুষের সৃজনশীলতা মিলে কোনো পণ্য তৈরি হলে তাকে বলা হয় সেই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে বিভিন্ন দেশ এই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে।
সম্পর্কিত খবর

রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা


কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
- চার জেলায় ৪ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়া বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচ জেলায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ভূন্দুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৪০), গোলাম শহিদের ছেলে বলু মিয়া (৫৫) ও ফুলবাবু (৫০)। তাঁরা সবাই জমি নিয়ে বিরোধে থাকা শাহাজাহান মিয়ার পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহুদিন ধরে ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া ও রাজু মিয়ার মধ্যে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্য কয়েকটি জেলায়ও পৃথক ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে সোহাগ সরদার (২৭) নামের যুবদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রূপা (১৮) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী দাবি করেছেন, রূপা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানকিদাহ এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে টাঙ্গন নদী থেকে। মৃত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম।

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড্ডয়নের পরপরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট বিজি ১৪৮ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছিল। এটি ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বিমানটি বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮-এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্য একটি ফ্লাইট বিজি ১২২-এ অনবোর্ড সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুবাই থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিমানের ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাশিয়ায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি অ্যান-২৪ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রাথমিক খবরে জানানো হয়েছে, কেউই বেঁচে নেই। সিভিল ডিফেন্স, জরুরি ও দুর্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, অ্যান-২৪ বিমানটি পরিচালনা করছিল সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারা। প্রথমে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, চীনের কাছাকাছি আমুর অঞ্চলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মতো দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। এ কারণে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন ক্রু।
স্থানীয় জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটি গন্তব্যের কাছাকাছি থাকাকালে হঠাৎ করে রাডারের বাইরে চলে যায়। গভর্নর অরলোভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।
উড়োজাহাজটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ যাত্রী ও ছয় ক্রু ছিলেন বলে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ আগেই জানিয়েছিলেন। যেখানে উড়োজাহাজটি ‘রাডার থেকে হারিয়ে যায়’, সেটি রাশিয়ার তাইগা বনভূমি অঞ্চলে পড়েছে।
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আন্তোনভ আন-২৪ উড়োজাহাজ সাধারণত যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত এই মডেলের হাজারের বেশি উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় এখন সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে আরটি।
সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং খারাপ দৃশ্যমানতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স