হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। একই সঙ্গে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরও বন্ধ করা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের কাছে মার্কিন ভিসাধারী কয়েকজনের তথ্য চেয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে এসব তথ্য না দিলে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ হারাতে পারে। ওই ঘটনার মাসখানেকের মধ্যে সেই পথেই হাঁটল দেশটির প্রশাসন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম গত বৃহস্পতিবার এক্স পোস্টে লিখেছেন, “আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় হার্ভার্ডের ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রগ্রাম সার্টিফিকেশন’ বাতিল করেছে প্রশাসন। এটি সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সতর্কবার্তা হবে।”
এদিকে এই সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দেশটির প্রশাসনের অচলাবস্থা আরো বাড়ল। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে হার্ভার্ড এক বিবৃতিতে একে ‘বেআইনি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বোস্টন আদালতে দায়ের করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ আইনের ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’।
ভুক্তভোগীদের দ্রুত সহায়তা ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রতিশোধমূলক এই পদক্ষেপ হার্ভার্ড সম্প্রদায় ও দেশের জন্য গুরুতর হুমকি। এটি হার্ভার্ডের একাডেমিক ও গবেষণা কার্যক্রমকে দুর্বল করে দেবে।
’
বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত শিক্ষাবর্ষে ছয় হাজার ৭০০ জনেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী হার্ভার্ডে ভর্তি হয়েছেন, যা এর মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশ।
মূলত চলতি বছরের শুরু থেকেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের টানাপড়েন শুরু হয়। জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থানের অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা তহবিল ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাঁর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘চরম বামপন্থী, মার্ক্সবাদী ও মার্কিনবিরোধী’ চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে পড়েছে। হার্ভার্ডের পাশাপাশি নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও কথিত ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগে ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়েছে।
হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, তারা শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়ায় জাতিগত পরিচয়কে প্রাধান্য দেওয়া চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইহুদি শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের শিকার হতে দিচ্ছে।
এসব অভিযোগে হার্ভার্ডের প্রতি খড়্গহস্তও হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। কয়েক সপ্তাহে হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান এবং চুক্তি জব্দ বা বাতিল করা হয়। সর্বশেষ গত সোমবার ইহুদি শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও জাতিগত হয়রানির অভিযোগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ ছয় কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রণালয় (এইচএইচএস) ।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। গত বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে আতঙ্ক ও হতাশা দেখা দেয়। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স