নাটোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রান্তজন পত্রিকার সম্পাদক সাজেদুর রহমান সেলিমের ওপর হামলা চালিয়ে তাঁর দুই হাত ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল রবিবার দুপুরে কলেজ থেকে ফেরার পথে দুর্বৃৃত্তরা তাঁর ওপর হামলা চালায়।
অন্যদিকে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় দুই সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জলেশ্বরীতলার জেলখানা মোড়ে একটি জুস বারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহত দুই সাংবাদিক হলেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের বগুড়া প্রতিনিধি খোরশেদ আলম এবং অনলাইন পোর্টাল বগুড়া লাইভের স্টার করেসপন্ডেন্ট আসাফুদৌলা নিয়ন। তাঁদের সঙ্গে থাকা তৌহিদুল ইসলাম নীরব নামের একজনও আহত হয়েছেন।
নাটোরে আহত সেলিম সদর উপজেলা পণ্ডিত গ্রামের তসলিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি চন্দ্রকলা কলেজের প্রভাষক।
হামলার পর তাঁকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার শিকার সেলিম জানান, চন্দ্রকলা কলেজ থেকে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মোটরসাইকেলে নাটোর শহরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। পথিমধ্যে চন্দ্রকলা গ্রামের আব্দুল ওহাবের নেতৃত্বে কয়েকজন তাঁর ওপর হামলা চালায়। ওহাব স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন সেলিম।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুর্বৃত্তরা সেলিমের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। তারা সেলিমকে পাশের একটি চায়ের স্টলে নিয়ে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে হকিস্টিক ও বাটাম দিয়ে ব্যাপক মারধর করে ফেলে রেখে যায়। ওই সময় তাঁর মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার আগে সেলিমকে আর কলেজে না আসার হুমকি দেয়।
পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় সেলিমকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
আহত সেলিম জানিয়েছেন, হামলাকারীদের মধ্যে আব্দুল ওহাব ছাড়া অন্যদের তিনি চেনেন না। হামলায় তাঁর দুই হাত ভেঙে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয়েছে। তিনি এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।
নাটোর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পলাশ কুমার সাহা জানান, এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায় আহত সেলিমের দুই হাত ভেঙে গেছে। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তাঁর দুই ভাঙা হাতে প্লাস্টার করা হয়। নাটোর সদর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, সেলিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আহত সেলিমকে গতকাল অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে বলে নাটোর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক পলাশ কুমার সাহা জানান।
অন্যদিকে বগুড়ায় হামলার শিকার সাংবাদিক খোরশেদ আলম বলেন, ‘বিকেল ৩টার দিকে আমরা জুস পান করতে যাই। জুস পান করে বাইরে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করে একদল কিশোর বয়সী বখাটে সন্ত্রাসী এসে প্রথমে সাংবাদিক নিয়নকে ঘিরে ধরে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা মারধর শুরু করে। মাথায় কিল-ঘুষি দেয়। এরপর ছুরিকাহত করতে গেলে নিয়ন আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাঁকেও রাস্তায় ফেলে মারধর করতে থাকে। এ সময় নীরব নামের একজন আহত হন।’
সাংবাদিক নিয়ন বলেন, ‘হামলাকারীদের চিনি না। তবে এর মধ্যে একজন পূর্বপরিচিত। সম্ভবত এরা আগে থেকে আমাদের অনুসরণ করছিল। জুস বার থেকে বের হওয়ার সময় কয়েকজন আমাকে ঘিরে ধরে নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করে। আমি পরিচয় দিয়ে বাইরে বের হওয়ার সময় তারা পেছন থেকে আমাকে আক্রমণ করে। আমার মাথায় ও চোখে অনেক কিল-ঘুষি মারতে থাকে। আমি ডান চোখে আঘাত পেলে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিই। আমাকে রক্ষা করতে গিয়ে খোরশেদ আলম ও নীরব আহত হয়েছেন। কী কারণে তারা আমাদের মেরেছে, বিষয়টি এখনো পরিষ্কার হতে পারিনি।’
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। হামলাকারীদের আটক করতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। এই হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।