ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

নাটোরে দৈনিক ‘প্রান্তজন’ সম্পাদকের দুই হাত ভেঙে দিল দুর্বৃত্তরা

  • বগুড়ায় দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা
নাটোর ও বগুড়া প্রতিনিধি
নাটোর ও বগুড়া প্রতিনিধি
শেয়ার
নাটোরে দৈনিক ‘প্রান্তজন’ সম্পাদকের দুই হাত ভেঙে দিল দুর্বৃত্তরা

নাটোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রান্তজন পত্রিকার সম্পাদক সাজেদুর রহমান সেলিমের ওপর হামলা চালিয়ে তাঁর দুই হাত ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল রবিবার দুপুরে কলেজ থেকে ফেরার পথে দুর্বৃৃত্তরা তাঁর ওপর হামলা চালায়।

অন্যদিকে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় দুই সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জলেশ্বরীতলার জেলখানা মোড়ে একটি জুস বারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

আহত দুই সাংবাদিক হলেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের বগুড়া প্রতিনিধি খোরশেদ আলম এবং অনলাইন পোর্টাল বগুড়া লাইভের স্টার করেসপন্ডেন্ট আসাফুদৌলা নিয়ন। তাঁদের সঙ্গে থাকা তৌহিদুল ইসলাম নীরব নামের একজনও আহত হয়েছেন।

নাটোরে আহত সেলিম সদর উপজেলা পণ্ডিত গ্রামের তসলিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি চন্দ্রকলা কলেজের প্রভাষক।

হামলার পর তাঁকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার শিকার সেলিম জানান, চন্দ্রকলা কলেজ থেকে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মোটরসাইকেলে নাটোর শহরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। পথিমধ্যে চন্দ্রকলা গ্রামের আব্দুল ওহাবের নেতৃত্বে কয়েকজন তাঁর ওপর হামলা চালায়। ওহাব স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন সেলিম।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুর্বৃত্তরা সেলিমের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। তারা সেলিমকে পাশের একটি চায়ের স্টলে নিয়ে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে হকিস্টিক ও বাটাম দিয়ে ব্যাপক মারধর করে ফেলে রেখে যায়। ওই সময় তাঁর মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার আগে সেলিমকে আর কলেজে না আসার হুমকি দেয়।

পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় সেলিমকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

আহত সেলিম জানিয়েছেন, হামলাকারীদের মধ্যে আব্দুল ওহাব ছাড়া অন্যদের তিনি চেনেন না। হামলায় তাঁর দুই হাত ভেঙে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয়েছে। তিনি এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।

নাটোর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পলাশ কুমার সাহা জানান, এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায় আহত সেলিমের দুই হাত ভেঙে গেছে। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তাঁর দুই ভাঙা হাতে প্লাস্টার করা হয়। নাটোর সদর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, সেলিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আহত সেলিমকে গতকাল অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে বলে নাটোর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক পলাশ কুমার সাহা জানান।

অন্যদিকে বগুড়ায় হামলার শিকার সাংবাদিক খোরশেদ আলম বলেন, বিকেল ৩টার দিকে আমরা জুস পান করতে যাই। জুস পান করে বাইরে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করে একদল কিশোর বয়সী বখাটে সন্ত্রাসী এসে প্রথমে সাংবাদিক নিয়নকে ঘিরে ধরে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা মারধর শুরু করে। মাথায় কিল-ঘুষি দেয়। এরপর ছুরিকাহত করতে গেলে নিয়ন আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাঁকেও রাস্তায় ফেলে মারধর করতে থাকে। এ সময় নীরব নামের একজন আহত হন।

সাংবাদিক নিয়ন বলেন, হামলাকারীদের চিনি না। তবে এর মধ্যে একজন পূর্বপরিচিত। সম্ভবত এরা আগে থেকে আমাদের অনুসরণ করছিল। জুস বার থেকে বের হওয়ার সময় কয়েকজন আমাকে ঘিরে ধরে নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করে। আমি পরিচয় দিয়ে বাইরে বের হওয়ার সময় তারা পেছন থেকে আমাকে আক্রমণ করে। আমার মাথায় ও চোখে অনেক কিল-ঘুষি মারতে থাকে। আমি ডান চোখে আঘাত পেলে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিই। আমাকে রক্ষা করতে গিয়ে খোরশেদ আলম ও নীরব আহত হয়েছেন। কী কারণে তারা আমাদের মেরেছে, বিষয়টি এখনো পরিষ্কার হতে পারিনি।

বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। হামলাকারীদের আটক করতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। এই হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

শেয়ার
তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে  পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

শেয়ার
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

মন্তব্য

২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।

আনুপাতিক পদ্ধতির মাধ্যমেই সব শ্রেণি ও মতধারার সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনদলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

মন্তব্য

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
শেয়ার
রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।

সেখানে বারান্দায় একটি শয্যায় রেখে চলতে থাকে রোগীর চিকিৎসা। পরের দিন ১৪ জুলাই সকালে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত স্থায়ী অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।

পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তখন কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীকে প্রথমে অক্সিজেন এবং পরবর্তীতে স্যালাইন দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত একটা অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর বাকির মোড়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।
সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে দ্রুত তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ধরা পড়ে তাঁর শরীরে ডেঙ্গুসহ নানা জটিলতা। তবে তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন।

এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।

খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। 

পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।

ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।    

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ