পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারতীয় মিডিয়া বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ নিয়ে নানা রকম মিথ্যা তথ্য তুলে ধরে বদনাম ছড়াচ্ছে। এ বিষয়ে দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সত্য বিষয় নিয়েও তারা (ভারতীয় মিডিয়া) তিলকে তাল করছে। কিন্তু অন্যান্য দেশ এসব কথা বিশ্বাস করছে না।
গতকাল সোমবার রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে ‘বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে বাংলাদেশ তুলা চাষের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সত্য খবর একবার প্রকাশ করে আপনারা (গণমাধ্যম) দায়িত্ব শেষ করবেন না। ফলোআপ করতে হবে।
এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়সীমা পেছানো উচিত হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই বিষয়টি জানা, উত্তরণের জন্য আগের সরকার ও ব্যবসায়ীরা তেমন কিছুই করেননি।
২০২৬ সালেই আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করব। এখান থেকে পেছানোর সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘দেশে এখন অর্থ সংকট চলছে, এ জন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। ট্যাক্স-জিডিপি রেশিওতে লজ্জাজনক অবস্থায় আছে বাংলাদেশ।
এখান থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পূর্ণ সদিচ্ছা আছে দেশের জন্য ভালো কিছু করার।’
ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালার সভাপতিত্বে এবং ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন (কাস্টম বন্ড), তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ফকরে আলম ইবনে তাবিব, বাংলাদেশ কটন জিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সাবের প্রমুখ।
তুলাকে কৃষি পণ্য ঘোষণা করা হবে শিগগিরই
তুলাকে কৃষি পণ্য ঘোষণা করা এবং দেশে তুলা উৎপাদন বৃদ্ধিতে দুই মাসের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে সরকার। দেশিও তুলার ওপর আরোপিত ট্যাক্স জরুরিভিত্তিতে প্রত্যাহার করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আহ্বান জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। তামাক চাষের জমির কিছু অংশে তুলা চাষ করলে কৃষকও লাভবান হবেন, আবার দেশও অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে। দেশের জন্য ভালো তা কোনো গোষ্ঠীর বিপক্ষে গেলেও সেই সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবে না ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। এ ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
ওমান প্রবাসীরা পাসপোর্ট নিয়ে সমস্যায় আছেন। এসব প্রবাসীর কষ্ট লাঘবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, পাসপোর্ট নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা অর্ধেকে নেমে আসবে—উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তুলা রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কারোপ করছে। তবে বাংলাদেশ এর বাইরে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ কটন জিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সাবের বলেন, বাংলাদেশে তামাক কৃষি পণ্য, অথচ তুলাকে এখনো কৃষি পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এর ফলে তুলা চাষি ও জিনার্সরা কৃষি ঋণ নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ঋণ নিতে দিতে হয় বাড়তি সুদ। সরকারের নীতি সহায়তা পেলে অন্তত দুই লাখ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করে আমদানীকৃত তুলার চার ভাগের এক ভাগ দেশে উৎপাদন করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
দেশে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার তুলা আমদানি করতে হয়। বিপুল এই বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে এক-চতুর্থাংশ দেশে উৎপাদন করা সম্ভব বলে মনে করেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. ফকরে আলম ইবনে তাবিব।
তিনি বলেন, ধানের জমিতে তুলা চাষ হয় না। তুলা মূলত চরাঞ্চল, বরেন্দ্র এলাকা, দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকা, পাহাড়ি এলাকাসহ উঁচু জমিতে তুলা চাষ করা হয়। নীতি সহায়তা দেওয়া হলে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত না করেই দেশে ২০ থেকে ২৫ লাখ টন তুলা উৎপাদন করা সম্ভব।
তুলা বীজ থেকে ভোজ্যতেল ও গবাদি পশুর খাদ্য খৈল পাওয়া যায়। ফলে তুলা চাষ বাড়ালে আমদানিনির্ভর ভোজ্যতেল ও খৈল আমদানি কমবে; বলেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক।