আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়েছেন তাঁরা।
আন্দোলনকারীদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা এবং সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
অন্যদিকে শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশীরা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেন আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক।
আন্দোলনরত প্রার্থীরা জানান, কোটা পুনর্নির্ধারণের আগে তাঁদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা হয়েছে। সরকার আইন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে তাঁদের নির্বাচিত করেছে। নিয়োগপত্রও পেয়েছেন তাঁরা।
এ অবস্থায় তাঁদের নিয়োগ বাতিল করা বৈষম্যমূলক।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে পুরনো কোটার ভিত্তিতে নির্বাচিত হওয়া ছয় হাজার ৫৩১ জনের ফল বাতিল করেন হাই কোর্ট। আদালত মেধার ভিত্তিতে নতুন করে ফল প্রকাশের আদেশও দেন। সেদিন রাত থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা।
ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সচিবালয়ে যাওয়া ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের একজন জান্নাতুল নাইম বলেন, ‘সচিবালয়ে গিয়ে আমরা সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ মাসুদ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। আগে আমাদের যেমন আশ্বস্ত করা হয়েছিল, এবারও সেই একইভাবে আশ্বস্ত করে বলা হয় যে এটা আদালতের রায়। ফলে পুরো ব্যাপারটিই আদালতের এখতিয়ার। এর পরও বলেছেন সরকারের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে।
’
জান্নাতুল নাইম বলেন, ‘সচিবের পর আমরা উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের ছয় হাজার ৫৩১ জনের মধ্যে কাউকেই বাদ দেওয়া হবে না।’ আমরা উপদেষ্টা মহোদয়কে একটা কথাই বললাম, যেন অতি দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে আমাদের নিয়োগ প্রদান করা হয়।’
নাইম আরো বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সব সময় শুধু আশ্বস্ত করা হচ্ছে। আগেরবার আমরা ঘরে ফিরে গিয়েছিলাম। কিন্তু এবার আর ঘরে ফিরব না। যত দিন পর্যন্ত আমাদের দাবি মানা না হবে আমরা রাজপথে থাকব এবং কর্মসূচি চলমান থাকবে।’
গত শুক্রবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাঁর বাসভবন যমুনার দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এরপর গত সোমবার দুপুরে শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা শাহবাগ মোড় আটকে অবস্থান নিলে পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা ও জলকামান ব্যবহার করে সরিয়ে দেয়। পুলিশের লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন। তবে সোমবার রাত থেকেই তারা শাহবাগে অবস্থান নেন। এর আগে তাঁরা প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাই কোর্টের একটা রায় হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমরা আপিল করেছি রায় পুনর্বিবেচনার জন্য।’
আন্দোলনকারীদের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ১৪ জুন তৃতীয় ধাপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত পরীক্ষা হয় ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় একই বছরের ২১ এপ্রিল। ১২ জুন সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় এবং ফল প্রকাশিত হয় ৩১ অক্টোবর। এতে ছয় হাজার ৫৩১ জন চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।
এরপর সুপারিশপ্রাপ্ত হননি, এমন ৩১ জন হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগ কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ ছয় হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ ফেব্রুয়ারি বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট।
এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশীদের আন্দোলন স্থগিত : শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশীরা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেন আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জি এম ইয়াছিন। তিনি জানান, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেওয়ায় আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জি এম ইয়াছিন আরো বলেন, ‘এনটিআরসিএ এখন পর্যন্ত ১৭টি নিয়োগ পরীক্ষার সুপারিশ করলেও মাত্র পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ সুপারিশ করেছে। এতে প্রায় ১২ থেকে ১৩ হাজার যোগ্য শিক্ষক বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। বহু নিবন্ধিত শিক্ষক একাধিকবার পরীক্ষায় পাস করেও চাকরির সুপারিশ পাননি। তাই ২০২১ সালের ৮ অক্টোবর থেকে আমরা আন্দোলন করে আসছি।’