আমাদের শৈশবে এ দেশে কোনো ইগল ছিল না। ইগল নামে বিশ্বে বহু পাখি আছে তা জানা ছিল, কিন্তু তার একটিও খুঁজে পাইনি বাংলায়। বর্ণমালার প্রথম পাতায় মারমুখো এক পাখির ছবির নিচে ‘ঈ’তে ‘ঈগল’ লেখা থাকত। কিন্তু তিরিক্ষি সে পক্ষীর সাক্ষাৎ কোথায় পাওয়া যাবে, তা কেউ জানত না।
পাখি
তিলাবাজ হয়েছে তিলাইগল
- দেশের সর্বত্রই আছে নানা প্রজাতির ইগল পাখির সরব আনাগোনা, কিন্তু ওদের কারো বাংলা নাম ‘ইগল’ নয়। এ দেশে ইগলদের কুরা, বাজ, শবচুর, শদল ইত্যাদি নাম দেওয়া হয়েছে। ‘তিলাবাজ’ নামে গাঁয়ের অতি পরিচিত পাখিটিই ছিল ডাকসাইটে এক ইগল পাখি। বাংলায় ‘বাজ’ নাম হলেও পাখিটির ইংরেজি নাম ‘ক্রেস্টেড সার্পেন্ট ইগল’
ইনাম আল হক

‘তিলাবাজ’ নামে গাঁয়ের অতি পরিচিত পাখিটিই ছিল ডাকসাইটে এক ইগল পাখি। বাংলায় ‘বাজ’ নাম হলেও পাখিটির ইংরেজি নাম ‘ক্রেস্টেড সার্পেন্ট ইগল’। পারিবারিক আমবাগান থেকে সাপ, বেজি, ব্যাঙ, ইঁদুর, গিরগিটি ইত্যাদি শিকার করতে অনেক দেখেছি এ পাখিকে। দেশের মানুষ একে ‘তিলাবাজ’ নাম দিয়ে কালাবাজ ও মধুবাজ গোত্রের পতঙ্গ শিকারি পাখির দলে ফেলে রেখেছে। আসলে কিন্তু সে দেড় কেজি ওজনের নির্ভীক এক সর্পহন্তা।
আজও বাংলাদেশের সর্বত্র এ শিকারি পাখির দেখা মেলে। এর বসতি ভারত বর্ষের পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু করে তাইওয়ান পর্যন্ত বিস্তৃত। সব দেশেই ইগল বলে সুবিদিত হলেও বাংলায় সে ‘বাজ’ বলে আখ্যায়িত। এ কাহিনি জানার পর এই পাখিকে ‘তিলাবাজ’ বলতে আমাদের মুখে বেধেছে। মুখে মুখে আমরা এর নামকরণ করেছি ‘তিলাইগল’। তিন দশকে তিলাইগল নামটি আমাদের বন্ধুমহলে পরিচিত হয়ে গেছে। সাহস করে আমরা বাংলাদেশের অন্য ১৪ প্রজাতির ইগল পাখির নামেও ‘ইগল’ কথাটি জুড়ে দিয়েছি। ‘কুরা’ হয়েছে ‘কুরাইগল’, ‘শিকরে’ হয়েছে ‘শিকরেইগল’ ইত্যাদি। কালক্রমে ‘বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ’ এ দেশের ৬৫০ প্রজাতির পাখির প্রমিত নাম দিয়েছে। সেখানে আমাদের তিলাইগলের নাম হয়েছে ‘তিলা নাগইগল’। আকর্ষণীয় এ নাম কত দিনে বাংলার গ্রামগঞ্জে গিয়ে পৌঁছাবে, তা জানি না। তবে এরই মধ্যে শহুরে মানুষের মধ্যে ‘তিলাবাজ’ যে ‘তিলাইগল’ হয়েছে, এতেই আমরা উত্ফুল্ল।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’