<p>ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ১২টা। নিজের দুই বছরের সন্তানকে কোলে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পুরাতন থানাপাড়ার বাসিন্দা শিরিনা আক্তার। তবে তিনি যে বাজারে কেনাকাটা করতে এসেছেন সেই বাজার একটু আলাদা। এখানে ক্রেতারা নির্দিষ্ট। তারা সবাই সমাজের স্বল্প আয়ের মানুষ, তবে পণ্য হরেক রকম। ১০ টাকায় ক্রেতারা কিনতে পারছে শাড়ি, লুঙ্গি। আবার দুই টাকায় তারা কিনতে পারছে একটি ব্লাউজ পিস।</p> <p>গতকাল সোমবার কুড়িগ্রাম শহরের কলেজ মোড়ের অস্থায়ী এই বাজার থেকে ১০ টাকার বিনিময়ে নিজের জন্য শাড়ি কিনেছেন গৃহবধূ শিরিনা আক্তার। শাড়ি কেনার পর তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদের আগত বাজারত কাপড়ের দাম বারি যায়। ইচ্ছা থাকলেও হামরা ছোয়াপোয়ার (ছেলেমেয়ে) জন্য কাপড় কিনবার পাই না। ১০ টাকাত এই শাড়িটা কিননুং, মুই ম্যালা খুশি। শাড়ি না পাইল এই ঈদত মোর শাড়ি কেনাই হইল না হয়।’</p> <p>স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এই বিশেষ ঈদ বাজারের উদ্যোগ নিয়েছে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)। শুধু কুড়িগ্রাম সদর নয়, পর্যায়ক্রমে ঈদের আগে নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ী উপজেলার প্রায় তিন হাজার মানুষের মধ্যে নামমাত্র মূল্যে এসব বস্ত্র বিক্রি করবে বলে জানিয়েছে এনজিও প্রতিষ্ঠানটি। তারা মূলত ২০১৬ সাল থেকে এই কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।</p> <p>শুধু শিরিনা নন, তাঁর মতো অরো অনেকে এসেছে এই ১০ টাকার ঈদ বাজারে।  তাদেরই একজন কুড়িগ্রাম সদরের খলিলগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মাহবুব রহমান। লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি ১০ টাকায় কিনলেন একটি লুঙ্গি। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুই বছর থাকি লুঙ্গি কেনা হয় না। গত ঈদের আগত আমার বেটা একটা লুঙ্গি কিনি দিছিল। এবারও নতুন লুঙ্গি পরে ঈদের নামাজ পরমো।’</p> <p>জানতে চাইলে ফুল এনজিওর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, ‘ফুল মূলত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে।  এর পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য এই উদ্যোগ। আমরা মূলত কুড়িগ্রাম, নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ী উপজেলার প্রায় তিন হাজার পরিবারের সঙ্গে এই আনন্দ ভাগাভাগি করার উদ্যোগ নিয়েছি।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমরা এসব এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের তালিকা করেছি। পরে আমরা খোঁজখবর নিয়ে তাদের একটি টোকেন দিয়েছি। যারা টোকেনধারী তারাই মূলত এই বাজার থেকে কেনাকাটা করতে পারবে। প্রথমই দিনেই কুড়িগ্রামে আমরা ৬০টি শাড়ি, ৬০টি লুঙ্গি ও ৪১টি ব্লাউজ পিস বিক্রি করেছি।’</p> <p>আব্দুল কাদের বলেন, ‘একই পরিবার থেকে একজন একটি লুঙ্গি বা একটি শাড়ি নিতে পারবে। পাশাপাশি চরাঞ্চলের মানুষের জন্য আমরা দুই টাকায় ইফতারি বিতরণ ও ছয় টাকায় বাজারের উদ্যোগ নিয়েছি।’</p> <p> </p>