একটি বেলা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত উপকূলের দুঃখী কিন্তু সংগ্রামী মানুষের সঙ্গে কাটালেন বিশ্বের অন্যতম ‘সুখী দেশের’ রাজকুমারী। প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া মুগ্ধ হয়েছেন তাদের উদ্যম আর উদ্ভাবনী কুশলতায়। অন্যদিকে শুধু রূপকথার গল্পেই রাজকুমারীর কথা শোনা অতি সাধারণ মানুষগুলো সত্যিকারের এক রাজকন্যাকে পাশে পেয়ে আপ্লুত হয়েছে।
প্রায় চার ঘণ্টা জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনার উপকূলীয় জনপদ কয়রার মানুষের দুঃখ-কষ্ট আর সম্ভাবনার কথা শুনলেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছা দূত সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া।
ঝটিকা সফরে তিনি দেখলেন স্থানীয়দের লবণ পানি জয়ের চিত্র। নারীর অগ্রযাত্রার বিভিন্ন দৃষ্টান্ত দেখে বিস্ময় মেশানো মুগ্ধতা ছিল তাঁর চোখে। সংগ্রামী নারীরা তাঁকে দেখিয়েছেন পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরার কৌশল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বিকল্প পেশা হিসেবে ভেড়া ও মৌমাছি পালনের সম্ভাবনা, প্রত্যন্ত এলাকায় ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারও প্রত্যক্ষ করেন ক্রাউন প্রিন্সেস।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে কয়রার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের গিলাবাড়ী পান্ডুগাজী ইউনাইটেড একাডেমির মাঠে অবতরণ করে রাজকুমারীর হেলিকপ্টার। ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়াকে সেখানে স্বাগত জানান স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান, খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান।
প্রথমে গাড়িযোগে তাঁরা যান সুন্দরবন-তীরবর্তী নয়ানী গ্রামে। সেখানে ইউএনডিপি ও সুইডেনের সহায়তায় নির্মিত বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও পানি শোধনাগার থেকে গ্রামীণ নারীদের পানি সংগ্রহের দৃশ্য দেখেন প্রিন্সেস।
তিনি তাদের সঙ্গে কথাও বলেন। নয়ানী গ্রামের লিপিকা বিশ্বাস, চম্পা রানীসহ অন্যরা প্রিন্সেসকে জলবায়ু পরিবর্তন ও নোনা পানির বিস্তারের সঙ্গে বরাবর তাঁরা কিভাবে যুদ্ধ করতেন তা জানান। আগে গ্রামীণ উৎস থেকে পানীয় জল সংগ্রহের জন্য নারীদের নিজের বাড়ি থেকে অনেক দূরে যেতে হতো। অনেক সময় তা-ও লবণমুক্ত পানি পাওয়া কঠিন হতো। বৃষ্টির পানি সঞ্চয়ের ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে সহজেই লবণমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাচ্ছে।
ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া একই ইউনিয়নের সুন্দরবনসংলগ্ন শিকারীবাড়ি গ্রামেও যান। সেখানে ইউএনডিপি ও ইউএনসিডিএফের সহায়তায় স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে চলা কার্যক্রম দেখেন তিনি। ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ শিকারী বলেন, প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া স্থানীয় মানুষের জীবন-সংগ্রামের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। নারী ও তরুণদের সঙ্গে বসে গল্প করেন।
কয়রায় প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়ার এর পরের কর্মসূচি ছিল মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিদর্শন ও কয়রা উপজেলা সদরের মদিনাবাদ পোস্ট অফিসের স্মার্ট পোস্ট সেন্টার উদ্বোধন। এসব সেরে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তিনি কয়রা সদরের কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের মাঠ থেকে হেলিকপ্টারে উড়ে যান চট্টগ্রামের উদ্দেশে।
প্রিন্সেসের সফরের সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সুইডেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা ও বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়োহান ফরশেল প্রমুখ।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছাদূত সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া চার দিনের বাংলাদেশ সফরের প্রথম দিন গত সোমবারই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। সেদিন ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতিও নিজের চোখে দেখেন তিনি। গত বছরের অক্টোবরে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর এটিই তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর। কাল ২১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন প্রিন্সেস। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের প্রচারণাই রাজকন্যা ভিক্টোরিয়ার এ সফরের উদ্দেশ্য।