আমদানি বন্ধের খবরে চড়ছে পেঁয়াজের বাজার। রাজধানী ঢাকার পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে দাম। সপ্তাহের শুরুতেও প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। গতকাল বৃহস্পতিবার তা বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকায়।
ভরা মৌসুমেও আমদানি বন্ধের অজুহাতে চড়েছে পেঁয়াজের দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে এখন পেঁয়াজ উৎপাদনের ভরা মৌসুম। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আবাদ বাড়ানোর মাধ্যমে এবার ভালো পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদনও হয়েছে। সেই পেঁয়াজ সবে বাজারে আসতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সরকার পেঁয়াজ আমদানির যে অনুমোদন দিয়েছিল, তার মেয়াদ ৫ মে শেষ হয়েছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১ মে থেকে ৬ মে পর্যন্ত ছয় দিন স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। ফলে এপ্রিলের পর আর আমদানির পেঁয়াজ দেশে আসেনি। পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমতি চেয়ে ব্যবসায়ীরা নতুন করে আবেদন করলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না।
ঈদের আগে যে ভারতীয় পেঁয়াজ ২৭ থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে, গতকাল রাজধানীর বাজারে তা বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।
গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটি কাঁচাবাজারে দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়। এই বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মোস্তফা মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ভারতীয় পোঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। তাই দাম বেড়েছে।
রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সিয়াম স্টোরের মো. রমিজ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজারে এখন দেশি ও আমদানীকৃত পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। মূলত আমদানি বন্ধ থাকায় পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। এর ফলে খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে।
রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পেঁয়াজ আমদানিকারক হাজি মো. মাজেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, গত ১০ থেকে ১২ দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি। ঈদের আগের সপ্তাহে ২১ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি করেছি। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম আর বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ পেঁয়াজের সরবরাহে ঘাটতি নেই। এর পরও বাজারে দাম বেড়ে গেলে আবার আমদানির সুযোগ দিয়ে দেবে সরকার।
খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, আড়ত থেকে তাঁরা বেশি দামে কিনেছেন, তাই বেশি দামে বিক্রি করছেন। অন্যদিকে আড়তদাররা বলছেন, স্থলবন্দরের আশপাশের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করে বেশি দামে বিক্রি করছেন। পাশাপাশি সরকার নতুন করে পেঁয়াজ ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) না দেওয়ায় দাম বাড়ছে।
১০ মাসে সাড়ে ৫ লাখ টন পেঁয়াজ এসেছে ভারত থেকে
আগে দেওয়া আমদানি অনুমতিপত্রের মেয়াদ ৫ মে শেষ হওয়ায় স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না। সেই অজুহাতে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ভারত থেকে আমদানীকৃত পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজি ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের ছুটির আগে এই পেঁয়াজ আড়তে বিক্রি হয়েছিল কেজি ২৮ টাকা; ঈদের ছুটির পর বাজারে দোকান খোলার সঙ্গে সঙ্গেই দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছে কেজি ৩২ থেকে ৩৫ টাকায়।
আমদানি বন্ধের খবরে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। খাতুনগঞ্জে ভালো মানের পেঁয়াজ গতকাল বিক্রি হয়েছে কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায়। চার দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ২৯ টাকায়।
কিন্তু সরকারের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও চাইছে এখনই আইপি না দেওয়া হোক। বাজার পরিস্থিতি দেখে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। কারণ পেঁয়াজের সংকট হয় মূলত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে, যখন ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দেশে পেঁয়াজ আসা জটিলতায় পড়ে। এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম; তাই বাজারে দাম বাড়ার সুযোগ নেই।
আইপি না বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তরের কেন্দ্রীয় পরিচালক রঞ্জিৎ কুমার পাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আপাতত সরকারের কাছ থেকে নতুন করে আইপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। নতুন সিদ্ধান্ত এলে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারব।’ তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ লাখ ৫৪ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এসেছে পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার টন। বাকি আইপির মেয়াদ পার হয়ে যাওয়ায় এবং সরকার নবায়ন না করায় পেঁয়াজ আসার সুযোগ নেই।
আইপি বন্ধ থাকার খবরে ভারত থেকে পেঁয়াজ না এলেও এত দিন আমদানি করা পেঁয়াজ গুদাম থেকে আসছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ আমদানিকারক জারিফ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মনজুর মোরশেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ভোজ্য তেলের তিক্ত অভিজ্ঞতায় মনে হয় না পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও সরকার এমন কিছু করবে। সরকারের অগ্রাধিকার থাকা উচিত বাজার যাতে অস্থিরতা না হয়, ভোক্তারা যাতে কষ্ট না পায়।
হিলি : আমদানির অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত পাঁচ দিনে পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। এতে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে এবং খুচরা বাজারে বাড়ছে দাম। আর আমদানিকারকদের ঘরে যেসব পেঁয়াজ মজুদ আছে তারা এখন ২৬ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। এতেও খুচরা বাজারে বাড়ছে দাম। একই সঙ্গে সরবরাহ কমায় দেশীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
বেনাপোল : বেনাপোল বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা ক্রেতা রাসেল হোসেন বলেন, দেশে এবার পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজেরও মজুদ রয়েছে। আমদানি বন্ধের মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় সংকটে পড়ার কথা নয়। অতিরিক্ত মুনাফা করতে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছেন। বিষয়টি সরকারের নজরদারিতে আনা দরকার।
সোনামসজিদ : দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ঈদুল ফিতরের টানা চার দিন ছুটির পর গত ৫ মে শেষ দিনের মতো ২২৭ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হয়। বন্দরের অন্যতম পেঁয়াজ আমদানিকারক নুরুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজ আমদানি পুরো বন্ধ রাখলে এর প্রভাব পড়তে পারে দেশের বাজারে। কৃষকের স্বার্থ দেখা উচিত। দেশে এখন পেঁয়াজ (ছাঁচি জাত) উঠছে, কিন্তু এর বড় অংশ সারা বছর ব্যবহারের জন্য সাধারণত মজুদ করা হয়। সামনে কোরবানির ঈদ। দেশের চাহিদা ও উৎপাদন মাথায় রেখে আমদানি বন্ধ না চালু থাকবে এবং এর শুল্ক কী হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
রাজবাড়ীর প্রান্তিক কৃষক লোকসানে
দেশের মোট চাহিদার প্রায় ১৪ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় রাজবাড়ী জেলায়। পেঁয়াজ উৎপাদনে রাজবাড়ী দেশে তৃতীয়। এবারও রাজবাড়ীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৭ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন হয়েছে।
জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুরের চাষি আব্দুল জলিল মণ্ডল, মজিদ ব্যাপারী ও আব্দুল হালিম মোল্লা জানিয়েছেন, এখন পেঁয়াজের বাজারদর বাড়লে লাভ কি? তাঁদের ঘরে তো আর পেঁয়াজ নেই। প্রায় এক মাস আগে তাঁরা তাঁদের ক্ষেতে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম এবং হিলি, বেনাপোল, রাজবাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি)
সম্পর্কিত খবর

স্বস্তির জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ
সাইদুজ্জামান, ডাম্বুলা থেকে

ক্রিকেট ম্যাচ, তার ওপর রবিবার। গতকাল তাই উদ্দাম পার্টির প্রস্তুতি ছিল রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের উপড়ে পড়া গ্যালারির। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকে ডিজের মিউজিক, দর্শকদের ড্রাম পেটানো আর ট্রাম্পেটের চড়া সুরে কান পাতা দায়। সেই পার্টিই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় দারুণ ক্ষিপ্রতায় কুশল মেন্ডিসকে শামীম হোসেন রান আউট করতেই।
বিশ ওভারের ক্রিকেটে ছন্দ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুতলয়ের ক্রিকেটে ছন্দের সেই গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে পেয়ে আর পেছনে তাকায়নি বাংলাদেশ দল।
অবশ্য ম্যাচজুড়েই শামীমের প্রতিপত্তি দেখা গেছে।
কিন্তু সে ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন লিটন ও শামীম। অধিনায়কের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়ে তাওহিদ ফেরেন, একই ওভারে তাঁর সঙ্গে ড্রেসিংরুমে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই ধাক্কায় অবশ্য কাবু হওয়ার অবস্থায় নেই শামীম। আগের ম্যাচে ৫ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকা এই বাঁহাতি শুরু থেকে চড়াও হন লঙ্কান বোলারদের ওপর। ওদিকে অধিনায়কও থিতু হয়ে গেছেন উইকেটে। তাঁরা জুটি বেঁধে ছোটান রানের গতি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে লিটন ও শামীম মিলে তোলেন ৭৭ রান, তা-ও মাত্র ২১ বলে! ১৩ ম্যাচ পর ফিফটির দেখা পান লিটন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের দ্বাদশ পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস। এক বাউন্ডারি আর পাঁচ ছক্কায় ৫০ বলে ৭৬ রান করে যখন আউট হন অধিনায়ক, ততক্ষণে লড়াইয়ের জন্য আশাব্যঞ্জক পূঁজি এক রকম হয়ে গেছে বাংলাদেশের। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পেতে মরণপণ দৌড়েও ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি শামীম। তাতে ২৭ বলে তাঁর ৪৮ রানের ইনিংস পঞ্চাশ ছুঁতে না পারার আক্ষেপে শেষ হয়েছে। অবশ্য তাঁর মনে কোনো আক্ষেপ নেই, ‘দল জিতেছে। তাতে অবদান রাখতে পেরেছি। এতেই আমি খুশি।’ শামীম আরো খুশি ১৬ জুলাই কলম্বোয় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা নয়, জয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
ম্যাচ শুরুর আগের রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের চালচিত্র না বললেই নয়। হাজার তিরিশেক দর্শকের ঠাঁই হয় এ মাঠে। তবে দুই দিন ধরে টিকিটের জন্য আহাজারি শোনা যাচ্ছিল, তাতে বোঝাই যাচ্ছিল যে পর্যাপ্ত আসন নেই। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় খেলা শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে গ্যালারি ভরে গেছে। বরাবরের মতো গ্যালারি লাগোয়া গাছেও চড়ে বসেন বিনা টিকিটের দর্শক। তাই বলে সিঁধ কেটে বিনা টিকিটের দর্শক ঢোকে ডাম্বুলায়, সেটি অজানা ছিল। গতকাল সেটিও দেখা হলো, বাংলাদেশ ইনিংসের ব্যাটিং পাওয়ার প্লে চলাকালে ভিআইপি স্ট্যান্ডের দিককার কাঁটাতারের বেড়ার নিচের মাটি সরিয়ে অন্তত শ খানেক টিকিটহীন দর্শক ঢুকে পড়লেন স্টেডিয়াম চত্বরে। বিনা বাধায় যোগ দিলেন গ্যালারির উৎসবে। নিজ দলের ব্যাটিং ভরাডুবিতে ক্ষণে ক্ষণে লাউড স্পিকার থেমেছিল বটে। তবে পুরোপুরি থামেনি। পুরস্কার বিতরণীর পরও কিছু দর্শককে দেখা গেছে হাসিমুখে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। কয়েকজন তো বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বলেও গেলেন, ‘ওয়েল প্লেইড বাংলাদেশ!’

অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দে অভিযান শুরু

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবৈধ ব্যাটারির রিকশার দাপট বেড়েছে। সেগুলো জব্দে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। গতকাল মালিবাগে অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দ করে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি : ফোকাস বাংলা
।
মানবতাবিরোধী অপরাধ
বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ আসামির আত্মসমর্পণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ পলাতক ২৪ আসামিকে আত্মসমর্পণের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে বাংলা-ইংরেজি দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিতে বলা হয়েছে। আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল রবিবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই বিচারক হলেন মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেওয়া হয়।
শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘এর আগে ১০ জুলাই এই মামলার ২৬ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
পরে ট্রাইব্যুনাল আগামী ২২ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন। যে দুজন আসামি অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন তাঁরা হলেন রাফিউল হাসান রাসেল ও মো. আনোয়ার পারভেজ।
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় মোট ৩০ জন আসামি। এর মধ্যে চারজনকে এদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ১৬ জুলাই ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২। এই মামলার শুনানি করেন প্রসিকিউটর মো. সাইমুম রেজা তালুকদার। শুনানিতে তিনি বলেন, পলাতক আট আসামির গ্রেপ্তার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় প্রয়োজন। তখন ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৬ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। আদেশের সময় মামলার ১৬ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার আটজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

হত্যা মামলায় জামিন
আমি রাজনীতি বুঝি না : অপু বিশ্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর ভাটারা থানার এনামুল হক নামের এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আত্মসমর্পণ করে অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস জামিন পেয়েছেন। গতকাল রবিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। শুনানি চলাকালে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি একজন অভিনয়শিল্পী। এটাই আমার পেশা।
এদিন অপু বিশ্বাস আদালতে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি মুখে কালো মাস্ক, মাথায় সাদা ওড়না ও বোরকা পরেছিলেন। তাঁর আইনজীবী আব্দুল মান্নান খান জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
এরপর অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি একজন অভিনেত্রী। অভিনয় করার জন্য অনেক কিছু করতে হয়েছে। আমি রাজনীতি বুঝি না। রাজনীতি করিও না। করতেও চাই না।’ এ সময় আইনজীবীরা আহা আহা সাধু বলতে থাকেন। অনেক আইনজীবী উত্তেজিত হয়ে বলেন, অপু বিশ্বাস এমপি হতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনার দোসর তিনি। এ সময় অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি অভিনেত্রী। আমাকে যে পোশাক দেওয়া হয়, সে পোশাক পরে অভিনয় করতে হয়। অভিনয় এমনই। ওই সময় আমি খারাপ অবস্থায় ছিলাম। পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। আমার একটা বাচ্চা আছে।’ এ সময় অপু বিশ্বাসের চোখ ছলছল করতে দেখা যায়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে অপু বিশ্বাস গত ২ জুন হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান। পরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মো. ওয়াহিদুজ্জামানের আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিননামা দাখিল করেন তিনি।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের ওপর গুলি চালানো হয়। এনামুল হকের পায়ে গুলি লাগে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার শ’ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেন তিনি। মামলায় অপু বিশ্বাস, আশ্না হাবিব ভাবনা, নুসরাত ফারিয়া, অভিনেতা জায়েদ খানসহ ১৭ জন তারকাকেও আসামি করা হয়। মামলায় এসব অভিনেতা-অভিনেত্রীকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে এই মামলায় গত ১৮ মে গ্রেপ্তার হন আরেক চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। পরদিন তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২০ মে জামিন পান তিনি।