সুইস ব্যাংকসহ বিদেশি অন্যান্য ব্যাংকে দেশের কারা টাকা রেখেছে, এবার তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। অর্থপাচার ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) তা জানাতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে কর ফাঁকি ও অর্থপাচারে পানামা এবং প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা ব্যক্তিদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা ও তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে জানতে চেয়েছেন আদালত। আগামী ৬ মার্চের মধ্যে তাদের হলফনামা করে এসব প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউর এসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখে গতকাল এ আদেশ দেন মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুইস ব্যাংক ও বিদেশি অন্যান্য ব্যাংকে কারা টাকা রেখেছে, সে বিষয়ে বিএফআইইউকে বিস্তারিত জানাতে বলেছেন আদালত।
পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন আগামী ৬ মার্চের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি এই মামলার রুল শুনানির দিন ধার্য রেখেছেন আদালত।’
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ২৬ জানুয়ারি কর ফাঁকি ও অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত ৬৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা আদালতে দাখিল করে বিএফআইইউ ও বাংলাদেশ ব্যাংক। পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে এসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে উঠে আসা ৬৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পানামা পেপারসে ৪৩ ও প্যারাডাইস পেপারসে ২৬টির নাম রয়েছে।
বিভিন্ন দেশের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ) ও এফআইইউগুলোর সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক ফোরাম ‘এগমন্ট’ থেকে এই ১০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য পেয়েছে বলে বিএফআইইউ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে এই ১০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে দেশের সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিএফআইইউ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন দেওয়ার পরদিন দুদকের পক্ষ থেকেও একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়, যেখানে পানামা পেপারসে আসা ৪৭ ব্যক্তিসহ ৬৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তালিকা ছিল। এই ৬৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গত বছর ২৯ মার্চ ১৪ ব্যক্তির তালিকা আদালতে দাখিল করে দুদক।
৬৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তালিকায় আসা ৬১ ব্যক্তি ও সাত প্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা, অফশোরে বিদেশে বিনিয়োগের সঠিক তথ্য ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পাওয়া না গেলে অনুসন্ধানকাজে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়।’
সংস্থাটির আইনজীবী খুরশীদ আলম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আদালত এই ৬৮টি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে দুদকের পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন। পদক্ষেপ নিয়ে থাকলে তার অগ্রগতি জানাতে বলেছেন।’
২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর ডিআরইউর মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশ থেকে কানাডায় অর্থপাচারের সত্যতা পাওয়ার কথা বলেন। তাঁর বক্তব্যের সূত্র ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বাঙালি অধ্যুষিত কানাডার কথিত ‘বেগমপাড়ার’ প্রসঙ্গ উঠে আসে।
এর মধ্যেই বিদেশি ব্যাংক, বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার করা অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস।
সেই রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত রুলসহ আদেশ দেন। সুইস ব্যাংকসহ অন্যান্য বিদেশি ব্যাংকে বাংলাদেশের কে কত টাকা পাচার করেছে, সে তথ্য জানতে চান হাইকোর্ট। এ ছাড়া পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে বাংলাদেশি যেসব নাগরিক ও কম্পানির নাম এসেছে, তাদের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং সেই তদন্তের অগ্রগতি প্রতি মাসে আদালতকে জানাতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—তাও জানতে চাওয়া হয়।
বাংলাদেশি কোনো নাগরিক অথবা কম্পানি বা অন্য কোনো সত্তার অর্থপাচার, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের বিষয় নীরিক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে একটি বিশেষ তদন্তদল গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তার জবাবও চাওয়া হয় রুলে।