ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৪ আগস্ট ২০২৫
২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৯ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৪ আগস্ট ২০২৫
২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৯ সফর ১৪৪৭

ভাগ্য খুলছে প্রশাসনের ৫ শতাধিক কর্মকর্তার

উবায়দুল্লাহ বাদল
উবায়দুল্লাহ বাদল
শেয়ার
ভাগ্য খুলছে প্রশাসনের ৫ শতাধিক কর্মকর্তার

প্রশাসনে আবার দুই স্তরের পদোন্নতির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। প্রথমে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এরপর খুলতে পারে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির দ্বার। এর মধ্যে পদোন্নতিযোগ্য সাত শতাধিক কর্মকর্তার চাকরিজীবনের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ শুরু করেছে সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)।

গত মঙ্গলবারও পদোন্নতির জন্য মন্ত্রিপরিষদসচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে বৈঠকে বসে এসএসবি। বৈঠকে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সব নথি, প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতিসহ সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। আরো দু-একবার বৈঠকের পর পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তার তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই উপসচিব পদে পদোন্নতি হতে পারে।

এর পরই হবে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিবের পদোন্নতি। তবে নাম প্রকাশ করে দায়িত্বশীলদের কেউ কথা বলতে রাজি নন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, এরই মধ্যে এসএসবির কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ জুলাই বসেছিল বৈঠক।
প্রথমে উপসচিব পদে পদোন্নতি হবে। এরপর অতিরিক্ত সচিব পদে হতে পারে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের ২১২ পদে কর্মকর্তা আছেন ৩৭০ জন। যুগ্ম সচিবের ৫০২টি পদে রয়েছেন এক হাজার ৩৪ জন।

সুপারনিউমারারি পদসহ উপসচিবের অনুমোদিত পদসংখ্যা এক হাজার ৪২০। বিপরীতে কর্মরত আছেন এক হাজার ৪০২ জন। অর্থাৎ প্রতিটি স্তরেই নির্দিষ্ট পদের চেয়ে উল্লেখ করার মতো কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন। ফলে পদ খালি না থাকায় পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আগের পদেই কাজ করে যেতে হবে।

পদোন্নতির বিধিমালা অনুযায়ী, সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পাঁচ বছর চাকরিসহ অন্তত ১০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলেই উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা। সে অনুযায়ী বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা সেই যোগ্যতা অর্জন করেছেন ২০২২ সালের ৩ জুন। এরপর প্রায় তিন বছর হতে চলছে, কিন্তু তাঁদের আজও পদোন্নতি হয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ২০১২ সালের ৩ জুন সরকারি চাকরিতে যোগ দেন বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। সেই হিসাবে তাঁদের উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জিত হয় ২০২২ সালের ৩ জুন। নানা কারণে এর দুই বছর পর ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি উপসচিব পদে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের তথ্য চেয়ে পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গঠিত হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে মন্ত্রিপরিষদসচিব, মুখ্য সচিব ও জনপ্রশাসনসচিবসহ এসএসবিতে বড় পরিবর্তন আসে। নানা কারণেই আর ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের ভাগ্যে পদোন্নতির দরজা খোলেনি।

এই ব্যাচে ২৭৭ জন কর্মকর্তা ২০১২ সালে যোগদান করেন। লেফট আউটসহ প্রশাসন ক্যাডারের ৩১৯ জন কর্মকর্তা পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। এ ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারের ২২৩ কর্মকর্তা ডিএস পুলে যোগ দিতে আবেদন করেছেন। এসব কর্মকর্তার প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা-দুর্নীতির বিষয়সহ ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে চাকরিজীবনের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত এবং পরিবারের সদস্যসহ নিকটাত্মীয়দের সম্পর্কেও খোঁজ নেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্য থেকে অন্তত আড়াই শ কর্মকর্তার পদোন্নতি হতে পারে বলে জানা গেছে।

এদিকে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিতে নিয়মিত হিসেবে ২০তম ব্যাচকে বিবেচনা করা হচ্ছে। এবারের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ক্যাডারের ২৪৪ কর্মকর্তার পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাডার থেকেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হবে। সব মিলে পদোন্নতির জন্য প্রায় ৩০০ কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তবে এই ব্যাচের ৪৩ জন কর্মকর্তা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে বিভিন্ন জেলার ডিসির দায়িত্ব পালন করায় তাঁদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

২০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়োগপ্রক্রিয়া ১৯৯৯ সালে শেষ হয়। ২০১৯ সালে যুগ্ম সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও তাঁদের পদোন্নতি হয়েছে ২০২১ সালে। যুগ্ম সচিব হিসেবে দুই বছর চাকরি করলেই অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জিত হয়। সেই হিসাবে ২০২৩ সালে এই ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জিত হয়েছে। যোগ্যতা অর্জনের অন্তত দুই বছর পর তাঁদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি জুলাই সনদে ছাড় দেওয়া হবে না : নাহিদ

    নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি জুলাই সনদে ছাড় দেওয়া হবে না : নাহিদ

জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি, জুলাই সনদে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এক পার্সেন্ট ছাড়ও দেওয়া হবে না। যে মৌলিক সংস্কার এবং বন্দোবস্তের কথা আমরা বলেছি, সেই জুলাই সনদে আমরা এক বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেব না।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে (কেআইবি) জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

এ সময় তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি জুলাই সনদ আদায় না করে সরকার যেতে পারবে না। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচন, ভোটাধিকার, গণতন্ত্রের জন্য আমাদের লড়াই ছিল। আমাদের এই মুহূর্তের বড় সংকট হলো স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক ঐক্য ধরে রাখা।

যদি রাজনৈতিক দলের ছাড় দেওয়ার মানসিকতা না থাকে, তাহলে আরেকটি এক-এগারো আসবে। ছাড় দিতে দিতে আমরা শেষ পর্যায়ে এসেছি। আমরা এবার আর ছাড় দেব না। এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, একাত্তরের পর কিভাবে রক্ষীবাহিনী দিয়ে, বাকশাল তৈরি করে কিভাবে লুটপাট করা হয়েছিল।
নব্বইয়ের পরেও কী হয়েছিল, তা আমরা দেখেছি। চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর সেই ভুল হতে দেব না। সমীকরণ এখনো শেষ হয়নি, যাঁরা সমীকরণ মিলিয়ে ফেলছেন, তাঁরা ভুল করছেন। তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পার হয়েছে, ফলে অনেক ধরনের হিসাব-নিকাশ আমরা করছি। এক বছর আমরা কী পেলাম, তরুণরা কী পেল, দেশে কী কী পরিবর্তন হলো? গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরেও নতুন বাংলাদেশ আমরা পাইনি।

এনসিপির মুূখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না। যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, তাহলে আমার যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, সংস্কারের জন্য, একটি নতুন সংবিধানের জন্য রক্ত দিয়েছিল, সেই মরদেহটা সরকারের ফেরত দিতে হবে। তিনি বলেন, একই সংবিধানে, একই ফ্যাসিবাদী সিস্টেমে নির্বাচনে যাচ্ছি। তাহলে এতগুলো মানুষের শহীদ হওয়ার দরকার কী ছিল? সম্মেলনের যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আর একটা ফ্যাসিবাদের কারখানা রয়ে গেছে এখনো, বঙ্গভবন। এটার পতন আপনাদের হাত ধরে হবে ইনশাআল্লাহ।

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ইদানীং মিডিয়া প্রেজেন্স দেখেন, টক শোগুলো দেখেন। দেখবেন খুব স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগকে প্রাসঙ্গিক করার, ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। সামান্তা শারমিন আরো বলেন, এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। এটি শুধু এনসিপি এবং যুবশক্তির কাজ নয়, যুবকদের এই দায়িত্ব নিতে হবে। রাজনৈতিক পক্ষকে নতুন করে ভাবতে হবেতারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবে, নাকি নতুন রাজনীতি করবে। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, জুলাই পদযাত্রায় দেখেছি, তরুণদের মধ্যে জোয়ার এসেছে। তাঁরা দেশ নিয়ে স্বপ্নের কথা বলেছেন, রাজনীতি নিয়ে সম্ভাবনার কথা বলেছেন। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হয়েছে, এটাকে আমাদের লালন করতে হবে। যাঁরা রাজনৈতিক দলের নেতারা আছেন, আমরা আশা করব তাঁরা এটিকে লালন করবেন।

তিনি বলেন, গত এক বছর ধরে তরুণদের বিভিন্নভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনে তরুণরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তরুণদের হেয় করে দেখা, ছোট করে দেখার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এনসিপির এই নেত্রী বলেন, তরুণরা বাংলাদেশকে সামনে নিয়ে যাবেন। আমাদের এমন রাজনীতি করতে হবে, যেখানে নারীরা সামনে থেকে রাজনীতি করতে পারেন। এমন কোনো রাজনৈতিক নেত্রী নেই, যাঁদের সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়নি। এই সংস্কৃতি আমাদের ঠেকাতে হবে। এ ক্ষেত্রে তরুণরা মোকাবেলা করবেন প্রত্যাশা করি।

 

মন্তব্য

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ এক মাস বাড়ল

    আগামী সপ্তাহে আবার সংলাপ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ এক মাস বাড়ল

জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া প্রণয়ন করা হলেও এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। এখন বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ চলছে। আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার সংলাপে বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এমন পরিস্থিতিতে কমিশনের মেয়াদ ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরো এক মাস বাড়ানো হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার কমিশনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। গত সোমবার রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এসংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে কমিশনকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের কার্যক্রম শুরু করে। সে সময় কমিশনকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছিল, যা আগামী ১৫ আগস্ট শেষ হচ্ছে। সূত্র মতে, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসন, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমনবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা ও গ্রহণের জন্য কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ প্রণয়ন করছে। গত ৩১ জুলাই দ্বিতীয় দফা সংলাপ শেষ করার মাধ্যমে জুলাই সনদের প্রাথমিক খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।

জানা যায়, প্রথম পর্বের সংলাপে ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য এবং দ্বিতীয় পর্বে গুরুত্বপূর্ণ ১৯টি সাংবিধানিক বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই প্রস্তাব বা সুপারিশগুলোর বিষয়ে কমিশন পর্যায়ক্রমে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এবং সেই ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আরো কথা বলবে। এরপর জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষরিত হবে।

কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ এবং জুলাই সনদ মানার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে সংলাপে বসবে ঐকমত্য কমিশন। এই কমিশনের সহসভাপতি হিসেবে রয়েছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। অন্য সদস্যরা হলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফররাজ হোসেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।

ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলী রীয়াজের বৈঠক : ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানে ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের বাসায় ওই বৈঠক হয়। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও কমিশন সদস্য মনির হায়দারও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ওই বৈঠকে চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সেলর এরিক গিলান উপস্থিত ছিলেন। গত দুই দিনে ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন জাতীয় নাগরিক পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।

 

মন্তব্য

ডাকসুর একমাত্র নারী ভিপি মাহফুজা খানম আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ডাকসুর একমাত্র নারী ভিপি মাহফুজা খানম আর নেই
মাহফুজা খানম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ছিলেন ডাকসুর একমাত্র নারী ভিপি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

পারিবারিক সূত্র জানায়, গতকাল সকালে মাহফুজা খানম শরীরচর্চার জন্য বের হয়েছিলেন।

পথে অসুস্থ বোধ করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

গতকাল বাদ আসর ইন্দিরা রোডের বাসায় বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মাহফুজা খানমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আজ বুধবার তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে।

সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানানো যাবে। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দুপুর ১২টায় নেওয়া হবে ডাকসু ভবনে। বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হবে। এরপর তাঁকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।

মাহফুজা খানম জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের চেয়ারপারসন ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর উপদেষ্টা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। তিনি সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের স্ত্রী।

মাহফুজা খানম ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক, ১৯৬৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৬৬-৬৭ ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভিপি নির্বাচিত হন মাহফুজা খানম। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সালে ছিলেন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক।

মন্তব্য
সুজনের জনমত জরিপ

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষে আসন চান ৭১ শতাংশ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষে আসন চান ৭১ শতাংশ মানুষ

একজন ব্যক্তিকে দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান না দেশের ৮৯ শতাংশ নাগরিক। আর সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ বা দ্বিতীয় কক্ষে আসন বণ্টনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৭১ শতাংশ মানুষ।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত জনমত যাচাইয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

জনমত যাচাইয়ের ফলাফল উপস্থাপন করেন সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন।

তিনি জানান, চলতি বছরের মে থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশজুড়ে এক হাজার ৩৭৩ জনের মতামত এবং ১৫টি নাগরিক সংলাপের ভিত্তিতে জরিপটি পরিচালনা করে সুজন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নারী ছিলেন ৩৩৫ জন, পুরুষ এক হাজার ৩৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ছিলেন পাঁচজন।

সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জরিপের ফলাফল প্রমাণ করে, জনগণ সংস্কারের পক্ষে।

তারা বর্তমান ব্যবস্থার পরিবর্তন চায়। বিদ্যমান পদ্ধতি, প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার হয়ে উঠতে সহায়তা করেছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এসবের আমূল সংস্কার দরকার।

তিনি আরো বলেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক, মানবিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের পথে এগিয়ে যাবে।

সুজনের জরিপ অনুযায়ী,  দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা (জাতীয় সংসদ ও সিনেট) গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৬৯ শতাংশ; নির্দিষ্ট নারী আসন ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে সংরক্ষণের পক্ষে ৬৩ শতাংশ; উচ্চকক্ষে নারীদের জন্য ৩০টি আসন সংরক্ষণের পক্ষে ৬৯ শতাংশ; নির্বাচনকালে ১২০ দিনের জন্য নিরপেক্ষ সরকার গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৩ শতাংশ। অতীতের তিনটি জাতীয় নির্বাচনের অনিয়ম ও জালিয়াতি তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৭৯ শতাংশ। নিম্নকক্ষে বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৬ শতাংশ আর উচ্চকক্ষে এই প্রস্তাবের পক্ষে ৮২ শতাংশ। একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা হতে পারবেন নাএই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছেন ৮৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। নির্বাচন শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে ফল প্রকাশের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৬ শতাংশ।

নির্বাচনের সময় নির্বাহী বিভাগের এমন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে, যা ভোট প্রভাবিত করতে পারে, তা গ্রহণের আগে নির্বাচন কমিশনের অনুমতির বিধান চেয়েছেন ৮৭ শতাংশ মানুষ। নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দিতে ব্যর্থ বা অসত্য তথ্য দিলে প্রার্থিতা বা ফল বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৮ শতাংশ।

৯২ শতাংশ মানুষ মনে করেন, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন না। জরিপে আরো উঠে এসেছে, মন্ত্রিপরিষদশাসিত সরকার চান ৮৭ শতাংশ; রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি চান ৮৮ শতাংশ; সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন চান ৮৭ শতাংশ; খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে দেখতে চান ৮৮ শতাংশ; জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল চান ৮০ শতাংশ। দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন ও প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন ৯০ শতাংশ; প্রতিটি জনশুমারির পর একটি স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ গঠনের পক্ষে রয়েছেন ৮৪ শতাংশ; প্রবাসীদের জন্য পাসপোর্টের তথ্য ব্যবহার করে পোস্টাল ব্যালট বা অনলাইনে ভোটের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৭ শতাংশ; জাতীয় ভোট নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ গঠনের পক্ষে রয়েছেন ৮৮ শতাংশ; না ভোটের বিধান চান ৮৩ শতাংশ এবং স্থায়ী স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৯০ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, শুধু নির্বাচন হলেই সুশাসন আসে না। সুশাসনের জন্য প্রয়োজন কাঠামোগত সংস্কার। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময় অর্থপাচারসহ নানা দুর্নীতির তদন্ত হওয়া দরকার। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কার জরুরি।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ