<p>ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অতি রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত ইব্রাহিম রাইসি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। ৬০ বছর বয়সী শিয়া আলেম রাইসি এ নির্বাচনে জিতবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছিল। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির আশীর্বাদপুষ্ট প্রার্থী ছিলেন তিনি। দেশটির প্রভাবশালী রেভল্যুশনারি গার্ডেরও রাইসির প্রতি সমর্থন ছিল।</p> <p>অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে গত শুক্রবার দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টা ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ইরানের জনগণ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন দুই কোটি ৮৬ লাখ ভোটার। গতকাল প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট গণনার পর দেখা গেছে, রাইসি এক কোটি ৭৮ লাখ ভোট (৬২ শতাংশ) পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। এর ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী জামাল ওর্ফ প্রাথমিকভাবে ইব্রাহিম রাইসিকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।</p> <p>জামাল ওর্ফ বলেন, অন্য প্রার্থীদের পক্ষে এ ব্যবধান অতিক্রম করা সম্ভব হবে না। চার প্রার্থীর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাইসির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রেভল্যুশনারি গার্ডের সাবেক কমান্ডার মোহসেন রেজায়ি পেয়েছেন ৩৩ লাখ ভোট। আর ২৪ লাখ ভোট পেয়ে এর পরে আছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান আব্দুলনাসের হেম্মাতি।</p> <p>রাইসির দপ্তরে গিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইরানের বিদায়ি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। তিনি বলেছেন, ‘নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত আগামী ৪৫ দিন আমরা নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের পাশে থাকব এবং তাঁকে পূর্ণ সহযোগিতা করব।’ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ বলেছেন, রাইসি ইরানকে ভালোভাবে নেতৃত্ব দিতে পারবেন।</p> <p>ইরানের সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই। তাই রুহানি এবার প্রার্থী হতে পারেননি। নির্বাচনী প্রচার চলাকালে রাইসি বিস্তারিত কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কর্মসূচি প্রস্তাব করেননি। কিন্তু ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির চলা ২০১৫ পারমাণবিক চুক্তির পুনরুজ্জীবনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এই চুক্তি পুনরুজ্জীবিত হলে দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে।</p> <p>রাইসি বলেছেন, ‘নতুন সরকারের হয়ে মানুষের জীবন-জীবিকার সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা করব আমরা।’</p> <p>গত শুক্রবার ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি সিটি কাউন্সিলসহ স্থানীয় পরিষদের মূল নির্বাচন এবং পার্লামেন্ট ও বিশেষজ্ঞ পরিষদের মধ্যবর্তী নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে ব্যাপক উপস্থিতির জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেছেন, ‘ইরানিরা আবারও শত্রুদের ভাড়াটে গণমাধ্যমের অপপ্রচার এবং অকল্যাণকামী ও কুচক্রীদের অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। জনগণ দেশের রাজনৈতিক ময়দানের প্রাণকেন্দ্রে তাদের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে।’</p> <p>এদিকে ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, ‘জনাব ইব্রাহিম রাইসি, নির্বাচনে আপনার বিজয়ে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমার অভিনন্দন গ্রহণ করুন। অতীত থেকেই রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে ভ্রাতৃপ্রতিম সুসম্পর্ক বিরাজ করছে।’</p> <p>২০১৯ সালে ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে রাইসিকে নিয়োগ দেন আয়াতুল্লাহ খামেনি। বিচারক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করা রাইসি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছেন। আশির দশকে রাজনৈতিক বন্দিদের হত্যার ঘটনায় তিনি জড়িত, এমন সন্দেহে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে ওয়াশিংটন।</p> <p>ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পর প্রেসিডেন্ট দেশটির দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। ইরানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা ও পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে প্রেসিডেন্টের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। যদিও পরমাণুচুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা খামেনির হাতেই আছে।</p> <p><strong>রাইসির বিরুদ্ধে তদন্ত চাইল অ্যামনেস্টি</strong></p> <p>১৯৮৮ সালে হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দিকে বিচারবহির্ভূত হত্যায় ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির ভূমিকার পুরনো অভিযোগের তদন্ত করতে নতুন করে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি এই আহ্বান জানায়।</p> <p>সেই সময়ের এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কখনোই স্বীকার করে না ইরান। এ ছাড়া এই হত্যাকাণ্ডে নিজের ভূমিকার অভিযোগের ব্যাপারেও কখনো জনসমক্ষে মন্তব্য করেননি রাইসিও। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের শুরুর বছরগুলোতে সশস্ত্র বিরোধীদের নির্মূলে সংক্ষিপ্ত সময়ের বিচারে হাজারো মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ইরানে। দেশটির কিছু ধর্মীয় নেতা বলেছেন, বিচারকার্য সুষ্ঠু ছিল। ওই বিচারকার্যের প্রশংসা করেন তাঁরা। সেই সময় দেশটির বিচার বিভাগের বিচারক ছিলেন রাইসি। তবে তেহরানের চিরবৈরী প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াশিংটন এবং বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইরানে ভিন্নমত দমনে রাজনৈতিক বন্দিদের বিচারবহির্ভূত উপায়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে। সূত্র : পার্সটুডে, রয়টার্স, এএফপি।</p>