<p>দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর প্রকাশের পরদিনই পুঁজিবাজারে ধস নেমেছে। অর্থনীতিতে স্থবিরতা বা স্লো ডাউনের শঙ্কায় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আতঙ্কিত বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে নিরাপদ অবস্থান খুঁজছেন। লোকসান হলেও শেয়ারে বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন তাঁরা। মূলত দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে পুঁজিবাজার ও তালিকাভুক্ত কম্পানির উত্থান-পতনের বিষয়টি সরাসরি সম্পৃক্ত।</p> <p>দেশের পুঁজিবাজার শুধু নয়—ভারত, পাকিস্তান ও জাপানের পুঁজিবাজারেও টালমাটাল অবস্থা চলছে। এর প্রভাব শুধু যে ওই সব দেশেই পড়ছে তা নয়। পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে মহাপতনে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম হ্রাসে প্রভাব ফেলেছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ সূত্রে জানা গেছে।</p> <p>চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটলেও বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। দেশে গত রবিবার করোনায় আক্রান্তের সন্ধান মেলে। এর পরদিনই গতকাল সোমবার ডিএসইর মূল্যসূচক কমেছে ২৭৯ পয়েন্ট বা ৬.৫১ শতাংশ। আর ৯৯ শতাংশ কম্পানির শেয়ারের দামে পতন ঘটেছে। এক দিনেই বাজার মূলধন কমেছে ১৭ হাজার ২৯১ কোটি টাকা। মূলত বাজারে বিক্রয়যোগ্য শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় এই মূলধন হ্রাস পেয়েছে।</p> <p>সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, চীনের পাশাপাশি বিশ্বের অনেক দেশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও দেশের পুঁজিবাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি। শেয়ার কেনাবেচায় স্বাভাবিক অবস্থায় উত্থান-পতন থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে পুঁজিবাজার প্রভাবিত হয়নি। তবে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপ ছিল। দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর পুঁজিবাজারে পতনের মাত্রা তীব্র হয়েছে। অব্যাহত বিক্রির চাপে কমেছে মূল্যসূচক ও লেনদেন।</p> <p>ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, পুঁজিবাজারে গতকালের পতন গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এতে ভিত্তি পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে অনেক শেয়ারের দাম। ২০১৩ সালে এই সূচক চালুর পর এক দিনে মূল্যসূচকের এমন পতন আর হয়নি। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি। তবে গতকাল এই সূচক দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৮ পয়েন্ট।</p> <p>বাছাই করা কম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক কমেছে ৮৮ পয়েন্ট, ১ হাজার ৪৬০ পয়েন্ট নিয়ে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হওয়া সূচকটি এখন ১ হাজার ৩৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক কম্পানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি ডিএসই শরিয়াহ সূচক যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এ সূচকটি ছিল ৯৪১ পয়েন্টে। সোমবার লেনদেন শেষে সূচকটি ৬৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৯২৯ পয়েন্ট।</p> <p>সূত্র বলছে, পুঁজিবাজারে পতনের মূল কারণ আতঙ্ক। করোনাভাইরাসের প্রভাব কত দিন স্থায়ী হবে তা নির্দিষ্ট নয়। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রভাব অর্থনীতিতে পড়ে, আর এর প্রভাব পুঁজিবাজারেও পড়ে। কারণ দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে কম্পানির আয় বা বিনিয়োগকারীর মুনাফা নির্ভর করছে। সেই ক্ষেত্রে করোনার নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারকেও প্রভাবিত করবে—এমন শঙ্কায় পতন ঘটে। গতকালের পতনের পেছনেও এই কারণই বলছেন বিশ্লেষকরা।</p> <p>ডিএসই সূত্র জানায়, শেয়ার বিক্রির চাপে গতকাল অনেকটাই ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে পুঁজিবাজার। বড় বড় ব্রোকারেজ হাউস থেকে অব্যাহত বিক্রির চাপে মূল্যসূচক ঘুরে দাঁড়াতেই পারেনি। একবার শেয়ার কেনার পরিমাণ বাড়ায় সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়নি। আতঙ্কের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার বিক্রির পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকার ডিলারদের পোর্টফোলিও থেকেও শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ে। মার্জিন ঋণে কেনা শেয়ারে ফোর্সড সেলও বৃদ্ধি পায়। বিদেশি, দেশি ও মার্জিন ঋণে কেনা শেয়ার বিক্রির চাপ নিতে পারেনি পুঁজিবাজার।</p> <p>বাজারের তথ্যানুযায়ী, গতকাল পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হলে টানা বিক্রির চাপে প্রথম সাত মিনিটেই মূল্যসূচকের ১০০ পয়েন্ট পতন হয়। সাড়ে ১০টায় লেনদেন শুরুর পর বেলা বাড়তে থাকলে সূচকের পতনও বাড়তে থাকে। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৫৫ কম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে দুই কম্পানির, দাম কমেছে ৩৫২ কম্পানি বা ৯৯.১৫ শতাংশের আর একটি কম্পানির শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।</p> <p>ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘কারোনা আতঙ্কের কারণে বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়ছে। করোনাভাইরাসের প্রভাব কত দিন থাকবে বা অর্থনীতিতে কতটুকু প্রভাব ফেলবে সে বিষয়ে কেউ অবগত নন। সে কারণে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।’</p> <p>টালমাটাল ভারতের পুঁজিবাজার : এক ধাক্কায় ২৩০০ পয়েন্ট নেমে গেল সেনসেক্স। আনন্দবাজার জানিয়েছে, একদিকে করোনা, অন্যদিকে ইয়েস ব্যাংক কেলেঙ্কারি—সব মিলিয়ে কয়েক দিন ধরে টালামাটাল অবস্থায় ভারতের পুঁজিবাজার। সোমবার সকাল থেকে দেশের বাজার আরো ভয়ানক হয়ে ওঠে। দিনের শুরুতেই এক ধাক্কায় ১৫০০ পয়েন্ট নেমে যায় সেনসেক্স। তার পর থেকে পতন অব্যাহত থাকে। একটা সময় ২৩০০ পয়েন্ট পড়ে যায় সেনসেক্স। ২০১০-এর পর এক দিনে সবচেয়ে বড় পতন এটি।</p> <p>পাকিস্তান : গতকাল পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জের কেএসই-১০০ সূচকটি ২১০৬ পয়েন্ট কমে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৪৫ মিনিটের জন্য লেনদেন বন্ধ রাখা হয়। </p> <p>জাপান : এদিকে করোনাঝড় ও বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় জাপানের পুঁজিবাজার টালমাটাল। এক দিনে জাপানের নিক্কেই সূচক কমেছে ১০৫০ পয়েন্ট বা ৫.০৭ শতাংশ। নিক্কেই সূচক গত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে।</p> <p> </p>