<p>বগুড়ায় রাত হলেই জুয়ার আড্ডাগুলো হয়ে উঠছে মিনি ক্যাসিনো। দিনমজুর থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরাও এসব জুয়ার আড্ডায় মেতে থাকছেন ভোররাত পর্যন্ত। বগুড়া শহরের সাতমাথাকেন্দ্রিক একটি, নবাববাড়ি রোডে একটি, কাটনারপাড়া ও সেউজগাড়ীতে একটি জুয়ার আসর দীর্ঘদিন ধরে চালু আছে।</p> <p>এ ছাড়া জেলা শহরের আশপাশ এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা এমন আরো কয়েকটি জুয়ার আসর পরিচালনা করে আসছে। তবে জেলা পুলিশ বিভাগ বলছে জেলায় কোনো ক্যাসিনো নেই। কোথাও জুয়ার আড্ডাও চলে না।</p> <p>জানা যায়, বগুড়া শহরে কয়েকটি নামিদামি ক্লাব ঘর রয়েছে। এসব ‘ক্লাব’ ঘরে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা জুয়াড়িরা ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারে না। সারা রাত খোলা থাকে ক্লাবগুলো। ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানের নাম করে প্রতিষ্ঠিত ক্লাব ঘরে কোনো খেলার সরঞ্জাম নেই। জাতীয় বা স্থানীয় পর্যায়ে কোনো ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশও নেয় না এরা। ইচ্ছা করেই নিজেদের আড়াল করে রেখে জুয়ার আড্ডা পরিচালনা করাই যেন একমাত্র উদ্দেশ্য।</p> <p>বগুড়া জেলা শহরে এই ক্লাব ঘরগুলোই এখন মিনি ক্যাসিনো হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। শহরের কাটনারপাড়ায় শহীদ তারেক সংঘ নামের একটি ক্লাব রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীনতাযুদ্ধের পরপরই ১৯৭২ সালে। পরে ২০০৬ সালে এর নতুন ভবন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ক্লাবটিতে রাতভর জুয়ার আসর ও মাদক সেবন চলে। এর আগে র‌্যাব এখানে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা ছাড়াও জুয়ার আসরের কয়েক লাখ টাকা জব্দ করেছিল। এখনো সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। জুয়ার আসরের পরিধি বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি।</p> <p>জানতে চাইলে শহীদ তারেক সংঘের সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী শাহীনুর ইসলাম শাহীন বলেন, আগে বসলেও এখন এখানে কোনো জুয়ার আসর বসে না। তবে র‌্যাবের অভিযানের তথ্য স্বীকার করেন তিনি।</p> <p>আলতাফুন্নেছা মাঠ ঘেঁষেই ইউএফসি ক্লাব। একনজরে দেখলে মনে হবে ধানমণ্ডি মাঠ ঘেঁষে থাকা আবাহনীর নাম। একটা সময় আবাহনীর মতো বগুড়ার ক্রীড়াঙ্গনে উজ্জ্বল পদচারণ ছিল তাদেরও। সেই ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে এখন। এ ক্লাব এখন জুয়ার আয়োজন ছাড়া আর কোনো কিছুর সঙ্গে নেই। রাতভর জুয়ার আসর বসে সেখানে।</p> <p>বগুড়া শহরের সাতমাথায় রয়েছে টাউন ক্লাব। এখানকার ক্লাব ঘরে নিয়মিত জুয়ার আসর বসে। দীর্ঘদিন ধরে এই জুয়ার আসর পরিচালিত হলেও কেউ কিছুই বলে না। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে দুপুর থেকে রাতভর জুয়া ও মাদকের আসর চলে। এই অভিযোগের আংশিক স্বীকার করে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শামিম কামাল বলেন, ছোট আকারে কার্ড খেলা চলে। ক্লাব চালাতে এটা করতে হয়। আর রাত ১১টার পর ক্লাব বন্ধ হয়ে যায়। তিনি জানালেন, এই ক্লাবের নেতৃত্বে ১৯ বছর ধরে রয়েছেন তিনি।</p> <p>বগুড়া শহরের নবাববাড়ি রোডে একটি ক্লাব ঘর রয়েছে। রাইফেল ক্লাব নামের ঘরটি আগে একতলা থাকলেও এখন সেখানে দামি ভবন গড়া হয়েছে। এই ক্লাবে গভীর রাত পর্যন্ত শহরের নামিদামি মানুষেরও পদচারণ আছে। ক্লাবে যাতায়াতকারী একাধিক ব্যক্তি নিশ্চিত করেছেন, সেখানে জুয়া ও মাদক সেবন হয়। বগুড়া রাইফেল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহতাসিম মেহেদী বলেন, এটাকে জুয়া বলা যাবে না। হালকা কার্ড খেলা হয়। বয়স্করা এসে সময় কাটান।</p> <p>বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার শহরের একজন পেশাদার জুয়াঢ়ি আব্দুল জলিল। সারা বছর রেলওয়ে জংশন শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় তিনি বসান জুয়ার আসর। তাঁর জুয়ার আসরে বিভিন্ন খাবার থেকে শুরু করে ইয়াবা, ফেনসিডিল, বাংলা মদ, গাঁজাসহ নেশার সামগ্রীর ব্যবস্থা আছে। ফলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রেন ও সড়কপথে বড় বড় জুয়াড়ি জলিলের জুয়ার আসরের নিয়মিত মুখ। </p> <p>এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিদিন পুলিশ প্রশাসনকে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ায় বন্ধ হয় না জলিলের জুয়ার আসর। এলাকায় অবাধে সারা বছর রমরমা জলিলের জুয়ার আসরের ব্যাপারে কেউ মুখ খুললেই পড়তে হয় রোষানলে। জুয়া বন্ধের জন্য এলাকাবাসী একাধিকবার আদমদীঘি থানা ও বগুড়া জেলা পুলিশকে অবহিত করেও কোনো ফল পায়নি।</p> <p>সান্তাহার টাউন পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আনিসুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আগে কী হয়েছে জানি না, এখন কোনো আসর বসানো হয় না। চুরি করে কেউ খেললেও খেলতে পারে।</p> <p>বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার দুবলাগাড়ী হাটের পূর্ব-দক্ষিণ পাশে দুরুলিয়া গ্রামের একটি বাঁশঝাড়ের ভেতর উপজেলা প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিমের নেতৃত্বে প্রতিদিন রাত ১১টা থেকে ভোররাত পর্যন্ত জুয়ার আসর চলছে।</p> <p>এ ছাড়া জামুন্না পল্লী বন্ধু হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের পারিত্যক্ত শ্রেণিকক্ষ, জামুন্না হাট এলাকার চড়াপাথার, খরনা হাট এলাকার চড়াপাথার ও ডোমনপুকুরসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জুয়ার আসর বসে।</p> <p>নন্দীগ্রাম ভাটরা ইউনিয়নের কুমিড়া পণ্ডিতপুকুর টাইগার ক্লাবে সন্ধ্যার পর নিয়মিত নাইন কার্ড, থ্রি কার্ড দিয়ে চলে জুয়া খেলা। সেখানে ভাটরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদুল বারীসহ অনেকে খেলাধুলা করেন। প্রত্যক্ষদর্শী কেউ এ ব্যাপারে মুখ খুলতে সাহস পায় না। ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদুল বারী নিজে খেলায় অংশ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।</p> <p>উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের সিধইল গ্রামের শুখানগাড়ীতে বেলালের নেতৃত্বে জুয়া চলে। সেখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে জুয়াড়ুরা এসে কখনো তাস দিয়ে আবার কখনো ডাবু ফরের মাধ্যম জুয়া খেলে। এক সপ্তাহ থেকে এই জুয়ার আসর বন্ধ রয়েছে।</p> <p>বগুড়ার ধুনট উপজেলা সদরে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলামের নিজের বাসায় জুয়া খেলা হয়। তাঁর চাচাতো ভাই ফরহাদ হোসেনের নেতৃত্বে বেলকুচি ও চৌকিবাড়ি গ্রামে খেলা হয়। ভাণ্ডারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বাবুর নেতৃত্বে বানিয়াজান বাঁধ এলাকা ও মানিকপোটল গ্রামে জুয়া খেলা হয়। এলাঙ্গী বাজার ও ছোট এলাঙ্গী গ্রামে এলাঙ্গী ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে জুয়া খেলা হয়। নিমগাছি ইউনিয়নের বেড়েরবাড়ি গ্রামের বাঁশবাগানে আনছার আলীর নেতৃত্বে খেলা হয়।</p> <p>ধুনট থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, এ ব্যাপারে তাঁদের কাছে তথ্য রয়েছে। অভিযান পরিচালনা করা হবে শিগগিরই।</p>