গ্রামজুড়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের বসবাস। অধিকাংশ বাড়ি টিনের তৈরি। কিন্তু গ্রামে ঢুকতেই শ্বেতপাথর দিয়ে তৈরি বিশাল দুটি অট্টালিকা দৃষ্টি কাড়ে সবার। কাছে গিয়ে না দেখলে মনে হবে রাজপ্রাসাদ।
বগুড়ায় গ্রামে শতকোটি টাকার বাড়ি
- ঋণখেলাপির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মালিক
নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

কথিত আছে, এই বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। আর তৈরি করতে সময় লেগেছে দীর্ঘ ১২ বছর। বর্তমানে কেউ বসবাস করে না এই বাড়িতে। শুধু একজন কেয়ারটেকার রয়েছেন দেখাশোনা করার জন্য।
বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের দেউলী সরকারপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে টুটুল। গ্রামের লোকজন জানায়, স্কুলজীবনে মা-বাবার ওপর অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন টুটুল।
তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। ঢাকার ধানমণ্ডিতে একটি স্কুল, গাজীপুর টাটকা ফুড প্রডাকশন ফ্যাক্টরি, গ্রামের বাড়িতে একটি ইটভাটা এবং একটি কোল্ড স্টোরেজ ছাড়াও শতাধিক বিঘা আবাদি জমি রয়েছে টুটুলের। এ ছাড়া আরো অনেক ব্যবসা রয়েছে তাঁর। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান টুটুল কিভাবে এত সম্পত্তির মালিক হলেন, তা নিয়ে এলাকায় রয়েছে নানা আলোচনা ও রহস্য।
বগুড়া জেলা শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে শিবগঞ্জ উপজেলার নিভৃত গ্রাম দেউলী সরকারপাড়া। মহাস্থান মোকামতলা হয়ে কিছুটা এগিয়ে পাকুরতলা এলাকায় পৌঁছে ডান দিকে ঘুরে কয়েক কিলোমিটার এবড়োখেবড়ো পথ পেরোলে দৃষ্টিতে আসবে এই প্রাসাদ। এলাকার লোক এটুকুই জানে, বাড়ির মালিক টুটুল সপরিবারে ঢাকায় থাকেন।
বাড়ির পুরো সীমানাসহ প্রতিটি অবকাঠামো দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা। দূর থেকে মনে হবে কলকতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। মূল ফটকটি নাটোরের উত্তরা গণভবনের নকশায় নির্মিত। ভেতরে চারতলা ভবনের প্রথম ইউনিট ও দ্বিতীয় ইউনিটের ওপর চৌকোনা চারটি গম্বুজ উত্তরা গণভবনের (একদা রানির প্রসাদ ছিল) মতো। মূল ফটক দিয়ে ঢোকার পরই হাতের বাঁয়ে চোখে পড়বে শ্বেতপাথরের হংস ফোয়ারার চার ধারে পাথরের শান বাঁধানো পুকুর। বাড়ির প্রথম ইউনিটে বড় দরজা দিয়ে প্রবেশের পর বিরাট হল রুম। দেয়ালের পরতে পরতে নকশা। দ্বিতীয় ইউনিটে প্রবেশের পর সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময় নজরে আসবে পোড়ামাটির ফলক (টেরাকোটা)। প্রতিটি ফলকে প্রাচীন ইতিহাসের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
দোতলার ঘরগুলো সুপরিসর। এখানে ফাইভ স্টার হোটেলের লাউঞ্জ ও রিসিপশনের মতো ডিজাইন করে রাখা হয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে চতুর্থ তলায় গিয়ে মনে হবে, বিদেশি হোটেলগুলোর মতো যেকোনো অনুষ্ঠান আয়োজন এখানে করা সম্ভব।
কাঠের জানালা-দরোজাসহ প্রতিটি কাজই প্রাচীন নকশায় তৈরি। দামি কাঠ ব্যবহার হয়েছে এসব কাজে। শ্বেতপাথরও আনা হয়েছে বিদেশ থেকে। বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। প্রতিটি ঘরেই এয়ারকন্ডিশনার আছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ২০০৬ সালে হঠাৎ করে টুটুল পৈতৃক টিনের বাড়ির পাশে প্রায় সাড়ে তিন একর জায়গা নিয়ে শুরু করেন এই বাড়ি নির্মাণের কাজ। শুরুতে প্রতিবেশীরা মনে করেছিল, মাঝেমধ্যে গ্রামে এসে অবস্থান করার জন্য তিনি এই বাড়ি তৈরি করছেন। কিন্তু দেখা যায়, ইটের পরিবর্তে কংক্রিটের গাঁথুনি দিয়ে শুরু করা হয় নির্মাণকাজ। পাশাপাশি দুটি ভবন তৈরি করা হয়। নির্মাণ শেষে বাড়ি দুটি ও সীমানাপ্রাচীরে টাইলসের পরিবর্তে শ্বেতপাথর দেওয়া হয়। এমনকি সেপটিক ট্যাংকের ওপরের অংশেও দেওয়া হয়েছে শ্বেতপাথর। নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকরাও এলাকার কেউ নয়। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে নির্মাণকাজ শেষে ২০১৮ সালে বসবাসের উপযোগী হয় বাড়ি দুটি।
একটি চারতলা আরেকটি তিনতলা বাড়ির ছাদে রয়েছে চারটি করে গম্বুজ। প্রধান ফটকে রয়েছে চারটি গম্বুজ। দুটি বাড়ি ছাড়াও আলাদা করে রয়েছে আকর্ষণীয় ডিজাইনের রান্নাঘর, দুটি পুকুর, বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর ভাস্কর্য নিয়ে তৈরি করা একটি পার্ক ও ফুলের বাগান।
বর্তমানে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে বাড়িটি একনজর দেখার জন্য। কিন্তু বাড়ির মালিক গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।
কেয়ারটেকার জয়ন্ত কুমার জানান, অপরিচিত লোকজনকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিতে কর্তৃপক্ষের নিষেধ আছে। এদিকে লোকজনের ভিড় হওয়ার কারণে বাড়ির সামনে গড়ে উঠেছে একটি হোটেলসহ কয়েকটি দোকান। পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার বাড়িটি পরিদর্শন করেছেন।
গত বছর এপ্রিল মাসে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার হন সাখাওয়াত টুটুল। তিনি জেলহাজতে থাকার পর থেকে তাঁর বড় ভাই ফজলুল বারি তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা করছেন। ফজলুল বারি জানান, তিনি আসলে এসব ব্যাপারে কথা বলতে চান না। টুটুল কেন এত টাকা খরচ করে এই বাড়ি নির্মাণ করেছেন তাও পরিষ্কার নয়। তবে এটা ঠিক যে এই বাড়ির কারণেই তাঁকে জেল খাটতে হচ্ছে।
দেউলী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বলেন, ‘টুটুল ভাই এলাকায় খুবই জনপ্রিয় মানুষ। এলাকার মানুষের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ান তিনি।’ কী কারণে এই প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি করা হয়েছে এ বিষয়ে তিনিও কিছু বলতে পারেননি।
সম্পর্কিত খবর

চাঁদা দাবির অডিও ফাঁস
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতাকে শোকজ
খুলনা অফিস

খুলনা মহানগরীর শিববাড়ী মোড়ে জিয়া হলের পরিত্যক্ত ফাঁকা জায়গায় জুলাই স্মৃতি উদযাপন আয়োজনে মেলা বসানো নিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির কথোপকথনের অডিও ফাঁস হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয়ধারী জহুরুল হক তানভীর ও সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে খুলনায় ব্যাপক গুঞ্জন চলছে।
মেলার আয়োজক বগুড়ার মন্টু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের স্বত্ব্বাধিকারী মন্টুর কাছে চাঁদা দাবির এক মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ডের অডিও ফাঁস হয়।
ফাঁস হওয়া রেকর্ডে সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদকে মেলার আয়োজকের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করতে শোনা যায়। কল রেকর্ডে আয়োজক মন্টুকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার দ্বারা সবাইকে কি ঠাণ্ডা করা সম্ভব? আমার কাছে দুই টাকা (দুই লাখ) রেডি আছে, আপনি বললে এখনই দিয়ে যাব।’
জবাবে আজাদ বলেন, ‘আমি পারব সবাইকে ঠাণ্ডা করতে, অন্তত সবাই ঠাণ্ডা থাকবে, কেউ ওই দিকে ঘুরেও তাকাবে না, যদি ১০ টাকা (১০ লাখ) দেন।
এ সময় মন্টু বলেন, ‘আমার দ্বারা তো সবাইকে ঠাণ্ডা করা সম্ভব না।’
জবাবে আজাদ বলেন, ‘আপনার পুলিশ কমিশনারও ঠাণ্ডা করতে পারবে না, বলে দিয়েন তারে।’
পরে মন্টু বলেন, ‘আপনাদের ছোট ভাইয়েরা এসে তানভীর ভাইয়ের কথা বলছে।’
জবাবে আজাদ বলেন, ‘মেলা ভাঙতে তো আমরা কাউকে পাঠাইনি, তাহলে ওদেরই দিয়ে দেন।
মন্টু বলেন, ‘দুই টাকা দিবার চাচ্ছি, আজকেই আসতেছি, ভাই। আর প্রতি গ্রুপে তো দিতে পারব না, ভাই। আপনারা বড় ভাই হয়ে যদি কন্ট্রোল করতে না পারেন।’
এ বিষয়ে মেলার আয়োজক মন্টু বলেন, ‘ফাঁস হওয়া রেকর্ডিং আমার এবং সাজ্জাদের কল রেকর্ডিং। রেকর্ডিংয়ে যা শুনেছেন, সব সত্য।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মহানগরের আহবায়ক আল শাহরিয়ার বলেন, ‘আমি ভিডিওটি দেখেছি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র। ঢাকায় বসেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, ‘পুলিশ কমিশনারের শ্যালক মন্টু আমার কাছে কমপক্ষে ১০০ বার ফোন দিয়েছে। ওর কাছে আমি কখনো টাকা-পয়সা চাই নাই, কোনো কিছুই চাই নাই। ওর সঙ্গে কোনো টাকা-পয়সা লেনদেন হয়নি। এটা পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করেছে। এটা তো ছয় মাস আগের ঘটনা। ও তো টাকা নিজেই অফার করেছে। যদি জবরদস্তি করতাম, তাহলে এত দিন বলতে পারত। এখন কেন বলছে?’
জহুরুল হক তানভীর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের অনার্সের শিক্ষার্থী এবং সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মহানগরীর সদস্যসচিব ও মুখ্য সংগঠক। গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নানা কর্মসূচিতেও তাঁদের সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে দেখা যায়।
এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও খুলনা প্রি-ক্যাডেট স্কুলসংলগ্ন মাঠে এক মাসের জন্য খুলনা শিল্প ও বাণিজ্য মেলা শুরু হয়ে দেড় মাস চলে। পরে পত্রিকায় খবর ছাপা হলে সেটি বন্ধ হয়। ওই মেলার আয়োজক ছিল মন্টু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, যেটি পরিচালনা করেন সাবেক এমপি এস এম কামালের সহযোগী রাসেল ওরফে মেলা রাসেল।
কারণ দর্শানোর নোটিশ : এদিকে মেলার আয়োজকের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মহানগর কমিটির সদস্যসচিব জহুরুল ইসলাম তানভীর ও মুখ্য সংগঠক সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। সংগঠনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গত সোমবার রাতে শোকজের চিঠি আপলোড করা হয়।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলামের স্বাক্ষর করা শোকজের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সংগঠনের শৃঙ্খলা ও নীতিমালার পরিপন্থী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড একজন দায়িত্বশীল হিসেবে আপনার অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং সংগঠনের ভাবমূর্তির জন্য হানিকর। কেন আপনার বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না—তা এই নোটিশ প্রাপ্তির ৩ (তিন) কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া গেলে সংগঠন আপনার বিরুদ্ধে একতরফা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য থাকবে।’

কেএমপি কমিশনার
পুলিশকে দূরে ঠেলে দেবেন না
খুলনা অফিস

খুলনার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এবং সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গত ২৫ জুন থেকে খুলনার মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের (কেএমপি) অপসারণ চেয়ে সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে আন্দোলন অব্যাহত আছে। গতকাল মঙ্গলবারও আন্দোলনকারীরা খুলনার বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে কেএমপি কমিশনারের আপসারণ দাবি করেছে।
এসবের মধ্যেই গতকাল কেএমপি কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার কেএমপি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে তাঁর অপসারণ দাবির প্রসঙ্গ উঠে এলে তিনি বলেন, ‘চাকরি থেকে পদত্যাগের সুযোগ নেই। কর্তৃপক্ষ চাইলে আমাকে বদলি করতে পারে।
খুলনার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গত ১০ মাসে খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকায় ২৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কেএমপি কমিশনার বলেন, ‘মাদকের কারণে আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। মাদকের বিক্রেতা, বাহক এবং যারা খুলনার বাইরে থেকে মাদক নিয়ে আসে তাদের ওপর পুলিশের কঠোর নজরদারি আছে। গত সপ্তাহেও হরিণটানা থানা এলাকা থেকে ১৯ হাজার পিস ইয়াবা আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া নিয়মিত অভিযানে মাদকদ্রব্য উদ্ধার হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘স্কুল-কলেজপড়ুয়ারা আমাদের সন্তান। সন্ধ্যায় তাদের পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে হবে। তারা যেন সন্ধ্যার পর ঘরের বাইরে অযথা আড্ডা না দেয়, সেদিকে অভিভাবকসহ সবাইকে নজর দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার জানান, খুলনা শহরে ২০ থেকে ২২ হাজার ইজি বাইক চলাচল করে। এর অন্তত ৬০ শতাংশ প্রতিদিন বাইরে থেকে শহরে প্রবেশ করে। ইজি বাইকের চালকরা ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় যানজট সৃষ্টি হয়। কেএমপির উদ্যোগে এ পর্যন্ত ছয় হাজার ৫০০ ইজি বাইক চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অন্যদেরও তিন-চার মাসের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া খুলনার সব ইজি বাইককে দুই রঙে বিভক্ত করে রং অনুযায়ী এক দিন বাদে এক দিন চলাচলের ব্যবস্থা করার বিষয়ে ভেবে দেখা যেতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান, উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আবু তারেক, উপপুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) সুদর্শন কুমার রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উত্তাল সমুদ্রে নেমে চবির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিখোঁজ আরো দুজন
বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার

কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতের হিমছড়ি পয়েন্টে উত্তাল সমুদ্রে গোসলে নেমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ হয়েছেন তাঁর সহপাঠী আরো দুই শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার সকালে এই ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া কে এম সাদমান রহমান সাবাব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
অরিত্র হাসান বগুড়ার নিধনিয়া দক্ষিণ পাড়া এলাকার বাসিন্দা আর আসিফ বগুড়ার দক্ষিণ নারুলি এলাকার বাসিন্দা।
সাবাবের বন্ধু আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ মিয়া বলেন, “প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে সোমবার আমরা পাঁচ বন্ধু কক্সবাজার বেড়াতে আসি। উঠেছি মেরিন ড্রাইভের সাগরপারের একটি হোটেলে। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আমরা হিমছড়ি সৈকতে যাই।
রিয়াদ আরো বলেন, ‘কিছু সময় পর সাবাবের লাশ তীরে ভেসে আসে। অন্য দুজনকে পাওয়া যাচ্ছে না।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সকালে খবর পেয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও কক্সবাজারের ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে জানায়, সাগর উত্তাল থাকায় উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে।’
কক্সবাজার হিমছড়ি তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক সোমনাথ বসু বলেন, ‘বন্ধুরা মিলে উত্তাল সাগরে নেমেছিল। ঢেউয়ে তিনজন তলিয়ে যায়। একজনের লাশ ভেসে এলেও দুজন নিখোঁজ রয়েছে। আমরা সৈকতে আছি। তাদের উদ্ধারে চেষ্টা চলছে।’
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা দোলন আচার্য জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রদের সন্ধান করছে। সাগর উত্তাল। এ সময়ে সাগরে উদ্ধার অভিযান চালাতে যে ধরনের সরঞ্জাম প্রয়োজন তা কক্সবাজার স্টেশনে নেই। তাই উদ্ধারকাজে বেগ পেতে হচ্ছে।
সাবাবের মরদেহ জেলা হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। সেখান থেকে তাঁর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
গত রাত সাড়ে ৮টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

রাজধানীতে স্বামীকে শ্বাসরোধে হত্যা ও স্ত্রীকে কুপিয়ে ডাকাতি
- আরো ৪ জেলায় ৫ খুন
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ডাকাতির সময় হামলায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তা ছাড়া দেশের সাত জেলায় আরো পাঁচ খুন এবং চার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচা এলাকায় বাসায় গৃহস্থদের শ্বাস রোধ করে হত্যা ও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। নিহত ব্যক্তির নাম ইসমাইল খান (৮০)।
পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার ভোরে বারান্দার গ্রিল কেটে ডাকাতদল ওই বাসায় ঢোকে। এরপর তারা বাসার লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণালংকারসহ মালপত্র লুট করতে শুরু করে। বাধা পেয়ে তারা ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে আঘাত করে।
কক্সবাজারে ইউপি সদস্য খুন
কক্সবাজারের উখিয়ায় জালিয়াপালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা কামাল হোসেনকে হত্যা করে মরদেহ খালে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ও উখিয়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।
সোমবার রাত ১১টার দিকে তিনি মনখালীর নিজ বাড়ি থেকে ওষুধ আনার জন্য স্থানীয় বাজারের ফার্মেসিতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। তাঁকে খোঁজাখুঁজির পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় একটি খাল থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মরদেহ উদ্ধারের সময় তাঁর নাক দিয়ে রক্ত পড়তে দেখা গেছে। তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন মনে করছে। পুলিশ বলছে, হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে অভিযান চলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই শিশু ধর্ষণ ও হত্যা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও সরাইল উপজেলায় দুই শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আখাউড়ায় মাজার এলাকা থেকে এক বাকপ্রতিবন্ধী শিশুর (১৪) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় এক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরাইলে মসজিদের দোতলায় পাওয়া গেছে ৯ বছরের স্কুলছাত্রী ময়নার মরদেহ। এ ঘটনায় মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে আটক করা হয়েছে।
ভোলায় রিকশাচালক খুন
ভোলা সদরে রিকশাচালক মতলব ফরাজীকে (৬০) ছুরি মেরে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার রাতে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, যাত্রীর ছদ্মবেশে দুর্বৃত্তরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ঝিনাইদহে সম্পত্তির বিরোধে যুবক নিহত
সুদীপ জোয়ার্দ্দার (৩৫) নামের এক যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পারিবারিক বিরোধের অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার রাতে নিজ বাড়িতে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় সুদীপের। প্রথমে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হলেও পরবর্তী সময়ে তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। যুবকের মৃত্যুর পর তাঁর সত্ভাই পলাতক রয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জে যমজ শিশুর মরদেহ পুকুরে
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ছয় মাস বয়সী দুই যমজ শিশুর মরদেহ বাড়ির পেছনের পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, মা-বাবাই শিশুদের হত্যা করেছেন। সোমবার রাতের এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
ভালুকায় পোশাককর্মীর মরদেহ
ময়মনসিংহের ভালুকায় আকলিমা আক্তার (২৫) নামের এক নারী শ্রমিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দু্পুরে উপজেলার সিডস্টোর এলাকার একটি বাসা থেকে ওই মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড, তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
বগুড়ায় নদীতে নবজাতকের মরদেহ
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ইছামতী নদী থেকে বাজারের ব্যাগে মোড়ানো নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের আড়কাটিয়া গ্রামে নদীর ঘাট এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ প্রাথমিকভাবে এটিকে ‘অবাঞ্ছিত গর্ভ’ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুর লাশ বলে ধারণা করছে। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।