<p>চট্টগ্রামে একই দিনে দুই অভিযানে ৭০০টি সোনার বার জব্দের ঘটনায় পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি পুলিশ নজর দিচ্ছে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং মহানগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার এলাকায়।</p> <p>চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা কালের কণ্ঠকে বলেন, জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইফতেখার হাসানের করা ৬০০ পিস সোনার বার জব্দের মামলাটির তদন্ত করছেন পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক। আসামি করিম খান কালু ও রাকিবকে গতকাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।</p> <p>চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, ১০০ সোনার বার জব্দ মামলার আসামি লাভু শাহা ও বিলাল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মহিউদ্দিন মুরাদ চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।</p> <p>জেলা পুলিশ সুপার কালের কণ্ঠকে বলেন, জোরারগঞ্জ থানার মামলার দুই আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তেমন কোনো তথ্য দেয়নি। তারা অভিজ্ঞ বলেই মনে হয়েছে। তবে গাড়ির নম্বর ধরে গাড়ির মালিককে খোঁজা শুরু হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে কিভাবে সোনা পাচার হয়ে চট্টগ্রামে আনা হয়েছে এবং রিয়াজুদ্দিন বাজারসহ চট্টগ্রামের পাচারকারীদের মধ্যে কারা এর সঙ্গে জড়িত সেই বিষয়ে</p> <p>পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সোনার বারগুলোর গন্তব্য ঢাকা এবং অন্য একটি দেশ হতে পারে বলে আপাতত মনে হচ্ছে।’</p> <p>জোরারগঞ্জ থানার সোনারপাহাড় এলাকা থেকে উদ্ধার করা ৬০০ পিস সোনার বার নগরীর স্টেশন রোড থেকে পাজেরো গাড়ির তেলের ট্যাংকের সঙ্গে কৌশলে বাঁধা হয়েছিল বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ফলে পাশের রিয়াজুদ্দিন বাজারের হুন্ডি ব্যবসায়ী ও সোনা পাচারকারীদের টার্গেট করে তদন্ত শুরু করেছে। অন্য চালানটি বদনাশাহ মাজার এলাকা থেকে প্রাইভেট কারে তোলা হয়েছিল বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায়ও পুলিশ রিয়াজুদ্দিন বাজারের পাচারকারীদের টার্গেট করে তদন্ত শুরু করেছে।</p> <p>এদিকে গতকাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামিদের সোপর্দ করার পর আসামিদের পক্ষে একদল লোককে বেশ তৎপর দেখা যায় আদালত প্রাঙ্গণে। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরাও এমন তথ্য পেয়েছি। আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের পক্ষের লোকজনের তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। তার মানে, পাচারকারী সিন্ডিকেট খুব শক্ত এবং তারা আসামিদের জামিনে মুক্ত করার তৎপরতা চালিয়েছে। কিন্তু আদালত রিমান্ড আবেদন আমলে নিয়েছেন। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে পাচারকারীদের তৎপরতা হালে পানি পায়নি।’ ওদিকে শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে পাচারের সোনা দুবাই থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছেছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। কিন্তু বিমানবন্দর দিয়ে কারা সোনা পাচারে সহায়তা করেছে, দুবাই থেকে কারা পাঠিয়েছে, সেসব প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানান পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ‘আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। তাই এখনই বাড়তি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’</p> <p>পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি রাতে রিয়াজুদ্দিন বাজারের বাহার মার্কেটের ষষ্ঠ তলার দুটি কক্ষে অভিযান চালিয়ে ২৫০টি সোনার বার জব্দ করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। সোনার মালিক ছিলেন ফটিকছড়ি উপজেলার বাসিন্দা ও রিয়াজুদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী আবু আহমেদ। তিনি কসমেটিকস ব্যবসার আড়ালে সোনা পাচার করতেন বলে তদন্তে উঠে আসে। তাঁর সঙ্গে জসিম উদ্দিন নামের একজনের নাম পান তদন্তকারীরা। এরপর রিয়াজুদ্দিন বাজারকেন্দ্রিক দুটি পাচারচক্রের কথা জানা গেলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। পরে উচ্চ আদালতের বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে জামিনের চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েন আবু আহমেদ। নগর গোয়েন্দা পুলিশ ও জেলা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, দুবাইভিত্তিক সোনা পাচারকারী সিন্ডিকেট নিষ্ক্রিয় থাকার পর ফের সক্রিয় হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রিয়াজুদ্দিন বাজারের পাচারকারীরাও।</p>