ঢাকা, শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৬ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৬ মহররম ১৪৪৭

এমপির সঙ্গে নেই আ. লীগ বিএনপির কাঁটা ‘মান্নান ভূঁইয়া’

মনিরুজ্জামান, নরসিংদী
মনিরুজ্জামান, নরসিংদী
শেয়ার
এমপির সঙ্গে নেই আ. লীগ বিএনপির কাঁটা ‘মান্নান ভূঁইয়া’

নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যেমন স্বস্তি নেই, তেমনি সংসদের বাইরে থাকা বিএনপিও বিভেদে জর্জরিত। বর্তমান সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লার সঙ্গে নেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মান্নান ভূঁইয়া পরিষদ। এ কারণে নরসিংদীর অন্য সংসদীয় এলাকাগুলোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে শিবপুর এলাকা।

দশম সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন। তিনি স্থানীয় আবদুল মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের অনুসারীদের সহায়তা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহনকে পরাজিত করেন। এ কারণে সিরাজুল ইসলাম স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিরাগভাজন হন, সংসদ সদস্য হওয়ার সোয়া চার বছরেও যার রেশ কাটেনি। একাদশ নির্বাচনে এ দুজনই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

অন্যদিকে বিএনপির একসময়ের প্রভাবশালী নেতা ও দলটির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া আজ বেঁচে নেই। ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর সংস্কারপন্থী বলে তাঁকে বহিষ্কার করে বিএনপি। ওই ঘটনার পর থেকে মান্নান ভূঁইয়ার নিজ উপজেলা শিবপুরে বিএনপি এখনো তিন ভাগে বিভক্ত।

আওয়ামী লীগ : দলীয় প্রচেষ্টায় নবম সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে পরাজিত করে চমক দেখান আওয়ামী লীগের প্রার্থী জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন।

কিন্তু সংসদ সদস্য হওয়ার পরপরই দলীয় কাজে গুটিকয়েক নেতার হাতে ক্ষমতা দিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি। এ সুযোগে দলের বঞ্চিত নেতাকর্মীদের নিজের ছায়ায় নিয়ে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা নিজের অবস্থান তৈরি করেন। মনোনয়নের দাবিদার হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনে তাঁকে টপকে মনোনয়ন পেয়ে যান জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।
মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের হাত ধরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জহিরুলকে হারিয়ে তিনি বিজয়ীও হন।

কিন্তু দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ থেকে সরে যেতে হয় সংসদ সদস্যকে। এর মধ্যে মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের সদস্যসচিব ও উপজেলা চেয়ারম্যান আরিফ উল ইসলাম মৃধার সঙ্গে মতানৈক্য তৈরি হওয়ায় স্থানীয়ভাবে একা হয়ে পড়েন তিনি।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, গত সোয়া চার বছরেও দলের সহযোগী সংগঠন স্থানীয় যুবলীগকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা ছাড়া কারো সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে পারেননি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহনের বলয়ে থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

শিবপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আজিজুর রহমান ভুলু বলেন, ‘জহিরুল হকের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে সততা ও স্বচ্ছতা। আগামী দিনে এটাই তাঁকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কারণ তিনি জবানে এক, কথা দিয়ে কথা রাখার চেষ্টা করেন।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশীদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিরাজ মোল্লা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে গত সোয়া চার বছর স্বতন্ত্রভাবে চলেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো কর্মকাণ্ডে উনি ছিলেন না। এমনকি উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতার সঙ্গেও ওনার সমন্বয় কিংবা যোগাযোগ নেই।’

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্বতন্ত্র এমপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কালো টাকা দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের প্রলুব্ধ করে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাঁর কাছে নৌকা নিরাপদ নয়, যে কারণে বিগত নির্বাচনেও জননেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এবারও আমি আশাবাদী।’

বর্তমান সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই, এটা ঠিক না। আমি নেতাকর্মীদের যতটুকু মূল্যায়ন করা দরকার, চেষ্টা করেছি তার চেয়ে বেশি করতে। আর আমি এলাকায় যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছি তার মূল্যায়ন করবে জনগণ। জননেত্রী শেখ হাসিনার দেখানো পথেই আমি এলাকার সব কাজ করে গেছি। তাই আমি শতভাগ আশাবাদী, আগামী দিনে আমাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’

বর্তমান ও সাবেক দুই সংসদ সদস্যের বাইরে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূঁইয়া রাখিল। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমান সংসদ সদস্য আমাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। তাই ওনাকে নিয়ে ভাবার কিছু নেই। তিনি জনবিচ্ছিন্ন সংসদ সদস্য। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিয়েই মূলত তিনি ব্যস্ত থাকেন। তা ছাড়া শিবপুরের জনগণের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। আমি ছাত্ররাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছি। সাংগঠনিক নেতা হিসেবে যদি মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে আমি নিশ্চিত পাব।’

বিএনপি : শিবপুর আসনে চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানিয়েছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী থাকাকালে পুরো নরসিংদীর যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করেছেন মান্নান ভূঁইয়া। এর মধ্যে শিবপুরে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। গ্রামগঞ্জের রাস্তাঘাটও পাকা। প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ আছে। এসব কারণে এলাকায় তিনি দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে সংস্কারের ডাক দেওয়ায় মান্নান ভূঁইয়াকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। তখন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হারিছ রিকাবদার ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম মৃধা দল থেকে স্বেচ্ছায় সরে যান। তাঁরা যোগ দেন মান্নান ভূঁইয়ার সঙ্গে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে মান্নান ভূঁইয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার। এতে তখন বিএনপিতে দুটি ধারা তৈরি হয়। ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মান্নান ভূঁইয়ার সঙ্গে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জহিরুল হকের কাছে পরাজিত হন মান্নান ভূঁইয়া। আর জামানত হারান তোফাজ্জল হোসেন।

স্থানীয় লোকজন জানায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর নিজের পক্ষের নেতাকর্মীদের দিয়ে উপজেলা বিএনপির কমিটি করেন তোফাজ্জল হোসেন। ২০০৯ সালের ২১ ডিসেম্বর শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবদুল মান্নান খানকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও আবু ছালেহ রিকাবদারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যের কমিটি করা হয়। কিন্তু পরে মান্নান খানের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তোফাজ্জল হোসেন। এরপর তিনি সংস্কারপন্থীদের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ তুলে ২০১৩ সালে কমিটি ভেঙে দেন। তিনি নিজেই আহ্বায়ক হয়ে শিবপুরে আবার কমিটি করেন। কিন্তু মান্নান খান এ কমিটি না মেনে নিজেদের কমিটি বহাল রাখেন। তাঁদের সমর্থন দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। ফলে এখানে বিএনপির তিনটি ধারা তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের আবুল হারিছ রিকাবদারের সঙ্গে আরিফ উল ইসলাম মৃধার বিরোধ তৈরি হয়। এটাকে কাজে লাগিয়ে আবুল হারিছ রিকাবদারকে নিজের কবজায় নিয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি করেন তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার।

২০১০ সালের ২৮ জুলাই মান্নান ভূঁইয়া মারা যান। এরপর তাঁর অনুসারীরা গঠন করে আবদুল মান্নান ভূঁইয়া পরিষদ। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের সব নির্বাচনের বিভিন্ন পদে মান্নান ভূঁইয়ার অনুসারীদের অনেকে জয়লাভ করেছেন। শিবপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে রয়েছে মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের ২৮টি কমিটি। সর্বশেষ গত ২৯ মার্চ উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মো. মেরাজুল হককে সমর্থন দেয় মান্নান ভূঁইয়া পরিষদ। বিএনপি-আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে মেরাজুল জয়লাভ করেন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলটির এই সাংগঠনিক অবস্থার মধ্যেই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন বিষয়ে আলোচনা চলছে। বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু নিজেদের জানান দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হারিছ রিকাবদার বলেন, ‘মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে নেত্রী যাঁকে মূল্যায়ন করবেন আমরা তাঁর পক্ষেই কাজ করব।’

আবদুল মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের সদস্যসচিব ও উপজেলা চেয়ারম্যান আরিফ উল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘দলগত দিক থেকে শিবপুরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই অন্তঃসারশূন্য। তাই তারা এখন করছে প্রতিহিংসার রাজনীতি। মান্নান ভূঁইয়ার ছোঁয়া এখনো মানুষের হৃদয়ে আছে। তাই আমার ধারণা, আগামী দিনেও মান্নান ভূঁইয়ার আশীর্বাদপুষ্ট কাউকে শিবপুরের মানুষ তাঁদের সেবায় কাজ করার সুযোগ দেবেন।’

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার বলেন, ‘শিবপুরের বর্তমান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা আছে বলে আমি জানি না। আর উপজেলা চেয়ারম্যান আরিফ মৃধা ছাড়া মান্নান ভূঁইয়া পরিষদে আর কেউ নেই। সবাই আমার নেতৃত্বে বিএনপির মূলধারায় ফিরে এসেছে। সে ক্ষেত্রে মান্নান ভূঁইয়া পরিষদ বিএনপির জয়ে বাধা বলে আমি মনে করি না। আর আমি বিএনপির দুঃসময়ে হাল ধরেছি। এখনো ধরে আছি। আগামী নির্বাচনে নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন বলে আমি শতভাগ আশাবাদী।’

জাতীয় পার্টি : সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চান দলটির জেলা শাখার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রেজাউল করিম বাসেত, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য আলমগীর কবির, জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি ও শিবপুর উপজেলা সভাপতি জাহাঙ্গীর পাঠান।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত গ্রেপ্তার
আবুল বারকাত

অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুদকের মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, আবুল বারকাতের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা থাকায় ধানমণ্ডির ৩ নম্বর সড়কের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর তাঁকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার তাঁকে দুদকে সোপর্দ করা হবে।

আবুল বারকাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি  বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। পাশাপাশি তিনি হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অবৈতনিক প্রধান উপদেষ্টা।

টানা দুইবার তিনি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ছিলেন। তাঁর জন্ম কুষ্টিয়া শহরে। বাবা আবুল কাশেম ছিলেন স্বনামধন্য চিকিত্সক।

অ্যাননটেক্স গ্রুপের নামে ২৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল বারকাত, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন আদালত।

দুদকের মামলার অন্য আসামিরা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান, সাবেক সহকারী পরিচালক ইসমত আরা বেগম, জনতা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম আজাদ, সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দিপু, আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, সঙ্গীতা আহমেদ, নিতাই চন্দ্র নাথ এবং অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ইউনূস বাদল।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আতিউর রহমান, আবুল বারকাত এবং তাঁর সহযোগীরা বিভিন্ন অনৈতিক উপায়ে ওই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তবে ২০২২ সালে ঋণ অনিয়ম নিয়ে দুদকের তদন্তে পর্যাপ্ত প্রমাণ না পাওয়ায় তখন মামলার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হয় আবুল বারকাতকে। ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি পাঁচ বছর এই পদে দায়িত্ব পালন করেন।

 

মন্তব্য

বাঁশ শিল্পের প্রদর্শনী

শেয়ার
বাঁশ শিল্পের প্রদর্শনী
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে বাঁশ শিল্পের প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে পছন্দের জিনিস দেখছেন দর্শনার্থীরা। গতকাল তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
মন্তব্য

যানজট

শেয়ার
যানজট
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৩৪ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল বিশ্বরোড হয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর পর্যন্ত এই যানজট শুরু হয় গত বুধবার রাতে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত যানজট অব্যাহত ছিল। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য

চট্টগ্রামে নারীকে ১১ টুকরা করে হত্যা স্বামী পলাতক

    দেশজুড়ে অপঘাতে মৃত্যু ৮
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
চট্টগ্রামে নারীকে ১১ টুকরা করে হত্যা স্বামী পলাতক

চট্টগ্রামে এক নারীকে ১১ টুকরো করে স্বামী পালিয়ে গেছে। এছাড়া দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের অপঘাতে ৮ ব্যক্তি মারা গেছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন:

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার পাহাড়িকা হাউজিং সোসাইটির এক বাসায় ফাতেমা বেগম (৩২) নামের এক নারীকে ১১ টুকরা করে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার পর থেকে তাঁর স্বামী মো. সুমনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

পুলিশ ধারণা করছে, স্ত্রীকে খুন করে পালিয়ে গেছেন স্বামী। বুধবার রাত ১টার দিকে আর কে টাওয়ার নামের একটি ভবনের দশম তলায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত ফাতেমার স্বামী মো. সুমন পেশায় গাড়িচালক।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী মোহাম্মদ মাহফুজ হাসান সিদ্দিকী কালের কণ্ঠকে বলেন, ১০ বছর আগে ফাতেমার সঙ্গে সুমনের বিয়ে হয়েছিল।

তাঁদের আট বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। ঘটনার সময়ে শিশুটি আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া চলে আসছিল। এরই জের ধরে বুধবার রাতে তাঁকে খুন করা হয়েছে।
তাঁর পুরো শরীর ক্ষতবিক্ষত করার পর কেটে ১১ টুকরা করা হয়। তিনি আরো বলেন, লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে তাঁর স্বামী পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তারের পর হত্যার সঠিক কারণ জানা যাবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফাতেমাকে খুনে ছুরি ও চাপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে টুকরা টুকরা করা হয়েছে। হাড় থেকে মাংস কেটে ফেলা হয়েছে। ১১টি টুকরা করে ঘরের মেঝেতে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে খুনি।

রাউজান : চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব মো. সেলিম উদ্দিনকে গুলি করে হত্যার পাঁচ দিনের মাথায় এবার তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী যুবদলকর্মী দিদারুল আলম নুংকুর (৪০) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার পশ্চিম বেতবুনিয়ার লুঙ্গিপাড়া এলাকার পাহাড়ি চরা থেকে তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়। বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টার পর তার এ মরদেহ উদ্ধার হয়। নুংকুর বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ সমশের পাড়ায়। তিনি মৃত জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।

যশোর : যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ঘোষনগর গ্রামে স্টিলের বাক্সের ভেতর থেকে সুচিত্রা দেবনাথ (৫৮) নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে নিজ ঘরের কাপড়ের বাক্সে লুকিয়ে রাখা হয় বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী তপন দেবনাথকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে ৯ জুলাই রাত ১১টার দিকে। নিহত সুচিত্রা দেবনাথ বাঘারপাড়া উপজেলার বাসুয়াড়ী ইউনিয়নের ঘোষনগর গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় তপন দেবনাথকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা থেকে ঢেনা মুর্মু (৫৫) নামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক ব্যক্তির পানিতে ভাসমান প্রায় অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি নাচোল সদর ইউনিয়নের পীরপুর সাহানাপাড়া গ্রামের বুদ্ধাই মুর্মুর ছেলে। স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, ঢেনা মুর্মু গত সোমবার (৭ জুলাই)   সকাল ১১টার দিকে একই ইউনিয়নের প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরের  ঝিকরা গ্রামে তাঁর নাতনির বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এরপর তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। পরে বুধবার (৯জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঝিকড়া গ্রামসংলগ্ন একটি বিলের কচুরিপানার মধ্যে ঢেনার ভাসমান মরদেহ দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় মাদকাসক্ত  ছেলে  মাহাবুর ইসলাম বাবু (২৮) মারধর ও ইট দিয়ে আঘাত করে মা হেনা বেগমকে আহত করে। স্ত্রীকে রক্ষা করতে গেলে বাবা শিশ মোহাম্মদকে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যাচেষ্টার পর স্বজন ও প্রতিবেশীদের প্রহারে বাবু নিহত হন। নিহত বাবুর বাড়ি রানীহাটী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের রামচন্দ্রপুরহাট বগিপাড়া গ্রামে। অভিযোগ রয়েছে, বাবু মাদক সেবনের টাকার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে অত্যাচার করে আসছিল।

পীরগঞ্জ : রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় আখিরা নদী থেকে আক্তার প্রধান সুজন (৩৬) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (১০ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার আখিরা নদীতে ভাসমান অবস্থায় কাপড়বিহীন লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে পীরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। নিহত আক্তার প্রধান সুজন উপজেলার থানাপাড়া  গ্রামের বাসিন্দা।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহগী ইউনিয়নের হাটুলিয়া গ্রামের বসতঘর থেকে এক তরুণের গলা কাটা ও ক্ষতক্ষিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই সময় লাশটি ছিল খাটের ওপর মশারির নিচে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছে রাতে বন্ধুদের নিয়ে ওই তরুণ মা-বাবাহীন ঘরে আড্ডায় মত্ত ছিল।  নিহত মো. রাকিবুল ইসলাম (১৯) ওই গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাটুলিয়া গ্রাম থেকে জুবায়ের (১৯, রাকিব মিয়া (২১) ও কাউসার (১৮) নামে তিন তরম্নণকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে।

কালিয়াকৈর : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে শালবনের ভেতর থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার বড় গোবিন্দপুর বিন্নার চালা ফুটবল খেলার মাঠের পাশে শাল বনের ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ। নিহতের পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স আনুমানিক (৪০)। তার পরনে জিন্সের প্যান্ট ও খয়েরি রঙের টি শার্ট ছিল।

টঙ্গী : ফ্লাইওভার থেকে টঙ্গীতে নামার সময় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত মাহফুজুর রহমান (২১) বরিশাল সরকারি হাতেম আলী কলেজে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। বুধবার (৯ জুলাই)  রাত ১২ টার পর  ঢাকা-ময়মনসিংহগামী মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর ফ্লাইওভার থেকে টঙ্গীর সেনা কল্যাণ ভবনগামী সংযোগ সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাহফুজুর রহমান বরিশাল সদর উপজেলার হায়াতসার গ্রামের ফরিদ উদ্দিনের ছেলে। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি টঙ্গী পূর্ব থানাধীন ব্লু ফ্যাশনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ