<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আধুনিক সময় ও সভ্যতা পৃথিবীর বিরাট ও বিস্তৃত পরিধিকে সংকীর্ণ করে ফেলেছে। ফলে সুবিশাল পৃথিবী এখন একটি ঘর ও একটি পরিবারে পরিণত হয়েছে। এর অধিবাসীরা নানা শ্রেণি, গোত্র, জাতি ও সম্প্রদায়ের লোক হওয়া সত্ত্বেও তারা একই পরিবার ও ঘরের মানুষের মতো বসবাস করছে। ফলে মানুষের সামনে এমন একটি জীবনধারা অবলম্বনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, যাতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও শ্রেণি-সম্প্রদায়ের মন-মেজাজ, স্বাদ-রুচি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সংস্কৃতির স্বীকৃতি রয়েছে। এটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সভ্য জীবনের অপরিহার্য শর্ত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিনয় ও স্বীকৃতি ছাড়া আধুনিক বিশ্বে শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ গঠন করা সম্ভব নয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, পরস্পরকে জানা ও বোঝার অবারিত সুযোগ থাকার পরও মানুষ পরস্পরের প্রতি উদাসীন। একই ঘর ও পরিবারের সদস্য হওয়ার পরও, একই বাজার-ঘাটে চলাচলের পরও, একই অফিস-আদালতের কাজ করার পরও মানুষ পরস্পর সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখে না। বিশেষত তারা অন্যের আকিদা-বিশ্বাস, ইবাদত-আচার, শিক্ষা ও জাতিগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অজ্ঞ ও অপরিচিত। তারা এতটাই অপরিচিত যতটা অপরিচিত ছিল প্রাচীন কালের লোকেরা। যখন পরস্পরকে জানার কোনো সুযোগ ছিল না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলিমরা হাজার বছর ধরে পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। শহর কিংবা গ্রাম সর্বত্র তারা মিলেমিশে একাকার। হাটে-ঘাটে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, অফিস-আদালতে, বাস ও রেলস্টেশনে তাদের নিত্য দেখা, শত বছর ধরে তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করছে, তারা চাইলে সহজে পরস্পরকে চিনতে পারে। অথচ বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, তারা পরস্পরের ধর্মীয় বিশ্বাস, সভ্যতা-সংস্কৃতি, সামাজিক রীতিনীতি, জাতিগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অজ্ঞ ও অপরিচিত। তারা পরস্পরকে যতটুকু জানে তা-ও অসম্পূর্ণ, ত্রুটিযুক্ত, অগভীর, শ্রুতি ও কল্পনা নির্ভর। এই দূরত্বের কারণেই এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায় সম্পর্কে মারাত্মক ভুল-বোঝাবুঝির শিকার। এ ছাড়া কোনো কোনো সময় ঘৃণা ও বিদ্বেষপূর্ণ সাহিত্য, রাজনৈতিক প্রচারণা, ইতিহাসের ভুল উপস্থাপন, ভিত্তিহীন গল্প-কাহিনি মানুষের মন-মস্তিষ্কে ভুল ও অপ্রীতিকর ছবি এঁকে দেয়, যা সমাজে একটি বিভেদের দেয়াল তৈরি করে এবং দিন দিন তাদের ভেতর ভ্রান্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমনকি যারা পক্ষপাতদুষ্ট নয়, কুসংস্কার যাদের ওপর ভর করেনি, যারা স্বচ্ছ ও নির্দোষ মনের অধিকারী, তাদেরও অন্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাস, প্রথা-প্রচলন ও সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তারা এমন সব উত্তর দেয়, যা রীতিমতো হাস্যকর। এই অজ্ঞতা ও দূরত্বের দায় বিশেষ কোনো সম্প্রদায় বা জাতিগোষ্ঠীর নয়, এই দায় সবার ওপর বর্তায়। বিশেষভাবে তাদের ওপর বর্তায় যারা সমাজকর্মী, যারা দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করে। তাদের দায়িত্ব ছিল সমাজে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠীকে পরস্পরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সভ্য পৃথিবী আজ এ কথার ওপর একমত যে প্রেম ও ভালোবাসা, সম্মান ও শ্রদ্ধা, আস্থা ও শান্তির সঙ্গে বসবাস করা এবং সৎ উদ্দেশ্যে একে অন্যের সহযোগী ও কর্মসঙ্গী হওয়ার জন্য পরস্পরকে সঠিকভাবে জানা আবশ্যক। সমাজের প্রতিটি সদস্যের জন্য এটা জানা আবশ্যক যে অন্য সদস্যের ধর্মীয় বিশ্বাস কী, সে কোন ব্যবস্থা ও বিধিমালার অনুগত ও অনুসারী এবং সে কোন কোন বিষয়কে নিজের জন্য অপরিহার্য মনে করে। যেন তার সঙ্গে পথচলা আনন্দের ও স্বস্তির হয়। তার ভালো লাগা ও মন্দ লাগার প্রতি লক্ষ রাখলে সে-ও আমার ভালো-মন্দ বিবেচনা করবে। সবার ভেতর যখন এই বোধ তৈরি হবে, তখন সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যখন কোনো সমাজে পরস্পরকে জানা ও বোঝার পথ বন্ধ হয়ে যায়, যখন তারা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে পারে না, তখন সমাজে দ্বন্দ্ব, বিবাদ ও সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হয়, তাদের ভেতর সন্দেহ-সংশয় ও অবিশ্বাস জন্ম নেয়, যা সামাজিক সুখ, সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্টের অন্যতম মূল কারণ এটি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাবে, সামাজিক দূরত্ব, সংশয় ও অবিশ্বাসের কারণে ভারতবর্ষে মুসলমানরা একটি সংকটময় সময় কাটাচ্ছে। তাদের যোগ্য ও শক্তি-সামর্থ্যের বেশির ভাগই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে আত্মপক্ষ সমর্থন এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ খণ্ডনে। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মুসলমানের দায়িত্ব হলো উপমহাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যবদলে এবং সামাজিক মুক্তিতে দূর ও নিকট অতীতে মুসলমানরা যে অসামান্য অবদান রেখেছে তা সঠিকভাবে তুলে ধরা। ভারতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতি, কাব্য-সাহিত্য, শিল্পকলা ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর উন্নয়নে মুসলিম জ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী ও স্থপতি, শাসক ও নেতাদের ভূমিকা সমাজের সামনে স্পষ্ট করা। বিশেষত মুসলিম আলেম, সুফি-সাধক ও দ্বিনপ্রচারকরা উপমহাদেশের সামাজিক, ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক মুক্তিতে শান্তিপূর্ণ যে প্রচেষ্টা যুগ যুগ ধরে অব্যাহত রেখেছেন, তা এ দেশের তরুণ ও যুবসমাজের জানা প্রয়োজন। সুদীর্ঘ মুসলিম শাসনামলে এ দেশের সব ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পেছনে যে ইসলামই অনুঘটক ও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল তা সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। মুসলমানরা যদি নিজেদের পরিচয়, ইতিহাস-ঐতিহ্য, অতীত অবদান ও কৃতিত্বগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরতে না পারে, তবে সমাজে তাদের অধিকার ও মর্যাদাও প্রতিষ্ঠিত হবে না। তাদের প্রতি সমাজের ভুল ধারণাও ভাঙবে না।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p style="text-align:right"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তামিরে হায়াত থেকে আলেমা হাবিবা আক্তারের ভাষান্তর</span></span></span></span></p>