<p>মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি অনেক জনপদ (বসবাসকারীদের) ধ্বংস করেছি, যার অধিবাসীরা ছিল জালিম এবং তাদের পর আমি অন্য জাতিকে সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ১১)</p> <p><strong>তাফসির :</strong> আলোচ্য আয়াতে মহান আল্লাহ ও নবী-রাসুলদের অস্বীকৃতির কারণে জনপদকে ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে। কোনো বস্তুকে যথাযথ স্থান ছাড়া অন্যত্র রাখাকে জুলুম বলা হয়। মানবজাতির স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য হলো সৃষ্টিকর্তার স্বীকার করে তার প্রেরিত নবী-রাসুলদের নির্দেশনা পালন করা। আর এ নির্দেশনার লঙ্ঘনই হলো জুলুম। এ জন্য মহান আল্লাহ অতীতে লুত, সামুদ, আদ জাতিসহ অসংখ্য জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের সবাইকে তাদের পাপের জন্য আমি পাকড়াও করেছিলাম, তাদের কারো ওপর (আদ জাতি) আমি প্রচণ্ড বায়ু পাঠিয়েছি, তাদের কাউকে (সামুদ জাতি) আঘাত করেছিল বিকট আওয়াজ, তাদের কাউকে (কারুন) ভূগর্ভে প্রোথিত করে ধ্বংস করেছি এবং কাউকে (ফেরাউন) নিমজ্জিত করেছি, আল্লাহ তাদের প্রতি কোনো জুলুম করেননি, তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৪০)</p> <p>ধ্বংসের আগে সতর্ক করেন : মহান আল্লাহর নীতি হলো, তিনি যেকোনো জনপদে প্রথমে প্রমাণসহ নবী-রাসুলকে পাঠান। এরপর সেখানকার অধিবসীরা তার নির্দেশনার বিরুদ্ধাচরণ করলে তিনি শাস্তি দেন। আর আজাব আসার পর তাদের কোনো অভিযোগ-আপত্তি গ্রহণ করা হয় না। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সৎপথ অবলম্বন করবে, তারা নিজের জন্যই তা করবে এবং যারা পথভ্রষ্ট হবে তারা নিজেদের ধ্বংসের জন্যই তা করবে, কেউ কারো (পাপের) ভার বহন করবে না, আমি রাসুল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দিই না।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১৫)</p> <p>শাস্তি বিলম্বিতও হয় : অনেক সময় শাস্তি বিলম্ব হতে পারে। কেননা মহান আল্লাহ শাস্তির আগে সুযোগ প্রদান করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি কত জনপদকে অবকাশ দিয়েছি যারা ছিল জালিম, অতঃপর তাদের পাকড়াও করেছি এবং আমার কাছেই (সবার) প্রত্যাবর্তন।’ (সুরা হজ, আয়াত : ৪৮)</p> <p>শাস্তি চাওয়া ঔদ্ধত্য : অনেকে নবী-রাসুলদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে দ্রুত শাস্তি চায়। যেমন লুত (আ.)-এর কাছে তার জাতি বলেছিল, ‘উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বলল, আমাদের কাছে আল্লাহর শাস্তি নিয়ে আসো, যদি তুমি সত্যবাদী হও।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ২৯)</p> <p>এরপর তাদের ওপর নেমে আসে কঠিন শাস্তি। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যখন আমার আদেশ এলো তখন আমি জনপদকে উল্টিয়ে দিই এবং তাদের ওপর ক্রমাগত বর্ষণ করি প্রস্তর কঙ্কর, যা আপনার রবের কাছে (বিশেষভাবে) চিহ্নিত ছিল, তা (জনপদ) জালিমদের থেকে দূরে ছিল না।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৮২-৮৩)</p> <p>মৃত্যুর সময় ফেরার আকুতি : কঠিন শাস্তির কথা ভেবে মৃত্যুকালে কাফিররা আশা করে যেন তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদের কাছে মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক, আমাকে পুনরায় ফিরিয়ে দিন। যেন আমি ভালো কাজ করতে পারি, যা আমি আগে করতে পারিনি, কখনো নয়, তা শুধু তার মুখের কথা, তাদের পেছনে থাকবে বারজাখ তথা আখিরাতের পূর্ব জীবন রয়েছে, যেখানে তারা পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত থাকবে।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৯৯)</p> <p>গ্রন্থনা : মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ</p> <p> </p>